ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে জেলা প্রশাসকের বাসভবন

পিটুনিয়া, প্যানজি, ডেন্টাস, সিলভিয়াসহ দুর্লভ প্রায় একশ প্রজাতির ফুলগাছ

প্রকাশিত: ০৪:২৬, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০

পিটুনিয়া, প্যানজি, ডেন্টাস, সিলভিয়াসহ দুর্লভ প্রায় একশ প্রজাতির ফুলগাছ

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ হরেক রঙের জবা, গোলাপ, গাঁদা, পিটুনিয়া, প্যানজি, ডেন্টাস, গজানিয়া, ডালিয়া, সিলভিয়া, পপি, কসমস, জিনিয়া, জারবেরা, সূর্যমুখি, গন্ধরাজ, গ্লাডিওলাস, চন্দ্রমল্লিকাসহ প্রায় একশ’ ধরনের দুর্লভ ফুল গাছে সাদা-লাল ও হলদেসহ বাহারি রঙের ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে পুরো বাংলোবাড়ির চারিপাশ। এসব বাহারি ফুল বাড়িয়ে দিয়েছে আশপাশের সৌন্দর্য। ফুলের পাশাপাশি স্থান পেয়েছে মাল্টা, ডালিম, আনারসসহ হরেক প্রজাতির ফল গাছ। ওলকপি, ফুল-বাঁধাকপি, ব্রোকলি, ক্যাপসিকাম, গাজর, লেবু, আলু, লালশাকসহ বিভিন্ন ফসলের আবাদও করা হয়েছে। আর সবকিছু ছাপিয়ে দিনের বেলায় এ বাগান বাংলোবাড়ি যতোটা না রূপবান, তার চেয়ে রাতের বেলা আরও বেশি সুন্দর। তাও সম্ভব হয়েছে পুকুরে মধ্যে ঝরনা, বাহারি রঙের আলোকবাতির ঝলকানিতে। সবমিলিয়ে মনে পরে যায়-জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতার মতোই “বসন্ত আজ আসলো ধরায়, ফুল ফুটেছে বনে বনে”। সম্প্রতি যারা প্রকৃতি প্রেমী বরিশালের জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমানের বাসভবনে গিয়েছেন তাহারাই সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়েছেন। তাদের মতে, এর আগে বাহারি ফুল ও ফলের গাছ দিয়ে এতো সুন্দরভাবে কেউ সাজিয়ে তুলতে পারেননি জেলা প্রশাসকের বাসভবন এলাকাটি। বর্তমান জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান যেভাবে তার বাসভবন ও আশপাশের জায়গায় গাছ লাগিয়ে সবুজে ভরে দিয়েছেন তা সত্যিই মনোমুগ্ধকর। বরিশাল নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যান ও জেলা প্রশাসক লেক সংলগ্ন এলাকায় জেলা প্রশাসকের বাংলো বা সরকারী বাসভবনটির অবস্থান। প্রায় দেড় একর জমি নিয়ে পুরাতন বাংলোবাড়ির আদলে বাসভবনটির অবস্থান। বাড়িটি পুরাতন মডেলের হলেও বর্তমানে গেট দিয়ে প্রবেশ করার পরেই চোখ কপালে উঠে যাওয়ার মতো অবস্থা। যদিও গেটের বাহিরে দুইপাশে বিশাল ফুলের বাগান। যা দেখেও যে কেউ প্রকৃতির প্রেমে পরে যাবেন। তবে গেট দিয়ে ভেতরে প্রবেশের পর বাসভবনটির চারিপাশ ঘিরে থাকা ফুল-ফল ও বিভিন্ন সবজির গাছ দেখে মনে হয় এখানে প্রকৃতির এক অনবদ্য কাব্য গড়ে উঠেছে। জেলা প্রশাসকের বাসভবন ঘুরে দেখা গেছে, বাসভবনের চারদিক ঘিরে গড়ে ওঠা বাগানের প্রায় প্রতিটি দুর্লভ গাছে বাহারি রঙের ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে। আর ফুলগাছগুলোর ফাঁকে ফাঁকে বিভিন্ন ধরনের ফল ও শাকসবজির গাছ শোভা পাচ্ছে। যেখানে খাবারযোগ্য ফসলের সমারোহ রয়েছে। আর পুরো বাসভবনটির চারিপাশে, সুপারি-নারিকেল, কাঁঠাল, আম-আমলকীসহ বড় ধরনের বৃক্ষ শোভা বাড়িয়েছে কয়েকগুণ। বাগানের কিংবা বাংলোর দক্ষিণ পাশে রয়েছে একটি পুকুর। পুকুরে তেলাপিয়া, রুই, কাতলা, মৃগেলসহ অ্যাকুরিয়ামে রাখা যায় এমন প্রজাতির মাছ যতœ সহকারে একত্রে চাষ করা হচ্ছে। বাগানে ঘুরে বরিশাল নগরীর তরুন সংবাদকর্মী মুশফিক সৌরভ জনকণ্ঠকে বলেন, এই ডাকবাংলোতে আগে অনেকবার আসা হয়েছে। তবে বর্তমান জেলা প্রশাসক দায়িত্ব নেওয়ার পর খুব একটা আসা হয়নি। গত পহেলা ফাল্গুনের পরেরদিন রাতে যখন এই বাংলোর প্রধান ফটক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করি, তখন আমার চোখকেই আমি বিশ্বাস করাতে পারিনি। এতো সুন্দরভাবে ফুল ও ফলের গাছ লাগিয়ে বাংলোর চারপাশ সাজানো হয়েছে, সত্যিই অকল্পনীয়। তিনি আরও বলেন, বর্তমান জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান দেখিয়ে দিয়েছেন ইচ্ছে থাকলে সব কিছুই সম্ভব হয়। মুশফিক সৌরভ বলেন, শুধু বাগান দিয়ে শোভা বাড়ানো হয়েছে এমন নয়, বাংলোর ভেতরে পুকুরে হরেক রকমের মাছচাষ করা হয়েছে। আবার পুকুরের মধ্যে গোলঘর, বাগানের একপ্রান্তে গোলঘর অপর একপ্রান্তে উঁচুতে গাছের মধ্যে মাচা ঘর বানানো হয়েছে। যা একজন প্রকৃতিপ্রেমী না হলে কোনোদিনও সম্ভব হতোনা। আর সবকিছু ছাপিয়ে দিনের বেলায় এ বাগান বাংলোবাড়ি যতোটা না রূপবান, রাতের বেলা তার চেয়ে অনেক বেশি সুন্দর। তাও সম্ভব হয়েছে পুকুরের মধ্যে ঝরনা ও বাহারি রঙের আলোকবাতির ঝলকানিতে। জেলা প্রশাসনের মিডিয়া সেলের দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার সুব্রত বিশ্বাস দাস বলেন, ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে বরিশালের জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান যোগদান করেন। এরপর থেকেই তিনি বাসভবনটি একটু আলাদাভাবে সাজানোর চেষ্টা করেছেন। তার এখানের বাগানে একশ’ প্রজাতির গাছ এবং পুকুরে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ রয়েছে। আবার পুকুরের মধ্যে গোলঘর, বাগানের গাছের ভেতর মাচা ঘর সবই তার পরিকল্পনায় করা হয়েছে। বাগানের আলোকসজ্জাতেও পরিবর্তন ঘটানো হয়েছে। প্রকৃতি প্রেমী জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান বলেন, গ্রামের ছেলে বিধায় গাছ লাগানোর প্রতি আমার আগ্রহটা ছোটবেলা থেকেই ছিলো। আমার বাসার সবাই গাছ পছন্দ করেন। বিশেষ করে ফুলগাছের প্রতি সবার আগ্রহটা অনেক বেশি। তাই নিজের মতো করে বাগানটি তৈরির পর এখন নিজের কাছেই তো ভালো লাগছে। এই বাগানে যশোরে গদখালী, পিরোজপুরের স্বরূপকাঠী ও স্থানীয় নার্সারির গাছ রয়েছে। তিনি আরও বলেন, যখন বাকেরগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হিসেবে ছিলাম। তখন যে বাগান করেছিলাম তা নিজেই পরিচর্যা করতাম কিন্তু এখন কাজের পরিধি বেড়েছে, তাই আগের মতো বাগানে সময় দিতে পারিনা। তবে বাগানের আনন্দ একটু আলাদা, যেমন এখন বাগান ভরা ফুলগুলো মনকে পুলকিত করছে সবসময়, বাসায় ঢুকতেই অন্যরকম অনুভূতি হয়। আবার যে ফসল হচ্ছে তা কর্মকর্তা থেকে শুরু করে কর্মচারীরা একটু একটু করে খাচ্ছি। যা নিজেদের মধ্যে একটা আন্তরিকতা সৃষ্টি করছে।
×