ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্সের সাত বছরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উত্থান

শেয়ারবাজারে লেনদেনে এক বছরের মধ্যে রেকর্ড

প্রকাশিত: ১০:৫৬, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০

  শেয়ারবাজারে লেনদেনে এক বছরের মধ্যে রেকর্ড

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ সরকারের নীতিনির্ধারণী মহলের তৎপরতায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স সূচকটির ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উত্থান ঘটেছে। রবিবার সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে প্রধান সূচকটি বেড়েছে ১৬৯ পয়েন্ট। যা সূচকটি চালু হওয়ার ৭ বছরের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উত্থান। একইদিনে ডিএসইতে সার্বিক লেনদেন ৯শ’ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে যা, গত এক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। ভালমন্দ মিলে দিনটিতে মোট ৮২ শতাংশ কোম্পানির দর বেড়েছে। শেয়ারবাজারে তারল্য প্রবাহ বাড়াতে ব্যাংকের বিশেষ তহবিল গঠনের উদ্যোগ এবং ডাকঘর সঞ্চয়পত্রে সুদের হার অর্ধেকে নামিয়ে আনায় রবিবার শেয়ারবাজারে বড় ধরনের উত্থানের ইঙ্গিত মেলে সকাল থেকেই। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সাধারণ ও প্রাতিষ্ঠানিক সব ধরনের বিনিয়োগকারী আশাবাদী হয়ে ওঠেন। শেষ পর্যন্ত প্রধান শেয়ারবাজারের লেনদেন ৯শ’ কোটি ছাড়িয়ে যায়। শেয়ারবাজার নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সদিচ্ছার প্রতিফলনেই সবাই আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠছেন বলে সংশ্লিষ্ট মহলের ধারণা। বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ডিএসইতে ডিএসইএক্স সূচকটি ২০১৩ সালের ২৭ জানুয়ারি ৪ হাজার ৫৬ পয়েন্ট নিয়ে যাত্রা শুরু করে। এরপরে বিগত ৭ বছরের মধ্যে সূচকটির রবিবার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উত্থান হয়েছে। এর আগে চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি ইতিহাসের সর্বোচ্চ অর্থাৎ ২৩২ পয়েন্ট উত্থান হয়েছিল। আর ২০১৫ সালের ১০ মে সূচকটি একদিনের ব্যবধানে তৃতীয় সর্বোচ্চ উত্থান বা ১৫৫ পয়েন্ট বেড়েছিল। গত এক বছরের বেশি সময় ধরে শেয়ারবাজার মন্দাবস্থায় ছিল। এতে বিনিয়োগকারীদের নাভিশ্বাস উঠে যায়। এই পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেয়ারবাজারের উন্নয়নে গত ১৬ জানুয়ারি উচ্চ পর্যায়ের নীতি-নির্ধারকদের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং কয়েকটি নির্দেশনা দেন। প্রধানমন্ত্রীর ওই বৈঠকের পর ১৯ জানুয়ারি সূচকটি ইতিহাসের সর্বোচ্চ বাড়ে। কিন্তু পরবর্তীতে শেয়ারবাজার আবার মন্দাবস্থায় ফিরে যায়। সর্বশেষ গত ১০ ফেব্রুয়ারি শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য প্রত্যেক ব্যাংককে ২০০ কোটি টাকা করে ফান্ড গঠনের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রজ্ঞাপন জারি করে। ওই প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকে শেয়ারবাজারে সূচক ও লেনদেন বাড়তে থাকে। যার ধারাবাহিকতায় ডিএসইর সূচক ডিএসইএক্স ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেড়েছে। ডিএসইর অপর সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ সূচক ৩০, ডিএসই-৩০ সূচক ৫৬ এবং নতুন চালু হওয়া সিডিএসইটি সূচক ৩৬ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১ হাজার ৭৬, ১ হাজার ৫৯২ ও ৯৫২ পয়েন্টে। ডিএসইতে টাকার পরিমাণে লেনদেন হয়েছে ৯১৬ কোটি ২৫ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট। যা ১ বছর ২ দিন বা ২৩৭ কার্যদিবসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগের ২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি রবিবারের চেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছিল। ওইদিন ডিএসইতে লেনদেন হয়েছিল ৯৩২ কোটি টাকার। সূচক বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রায় সবক’টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম হু হু করে বাড়তে থাকে। এতে দফায় দফায় দাম বাড়িয়েও বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ অনেক কোম্পানির শেয়ার কিনতে পারেননি। বিশেষ করে ওরিয়ন গ্রুপের সবক’টি শেয়ারই বিক্রেতাশূন্য অবস্থায় লেনদেন করেছে। গ্রুপটির ওরিয়ন ইনফিউশন, ওরিয়ন ফার্মা, কোহিনুর কেমিক্যাল ও সালভো কেমিক্যালের শেয়ারের কোন বিক্রেতা ছিল না। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে ২৯৩টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। এর মধ্যে সর্বোচ্চ দাম বাড়ে তিনটি কোম্পানির। এছাড়া আরও অর্ধশত প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ায় সর্বোচ্চ পর্যায়ের কাছাকাছি চলে আসে। অন্যদিকে ৪০টি প্রতিষ্ঠান দরপতনের তালিকায় নাম লিখিয়েছে। ২৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এদিন ১ শতাংশের ওপরে দাম বেড়ছে ২৭২টি প্রতিষ্ঠানের। এর মধ্যে ২২৩টির দাম বেড়েছে ২ শতাংশের ওপর। ৪ শতাংশের ওপরে দাম বাড়ার তালিকায় রয়েছে ১২৭টি। ৫ শতাংশের ওপর দাম বাড়ার তালিকায় রয়েছে ৮৪টি। ৬১টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়ছে ৬ শতাংশের ওপর। ৭ শতাংশের ওপরে দাম বেড়েছে ৪৪টির। এদিকে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের দাম বাড়ায় বড় অঙ্কের বাজার মূলধন ফিরে পেয়েছে ডিএসই। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৫৫ হাজার ৫৩১ কোটি টাকা, যা আগের দিন ছিল ৩ লাখ ৪৭ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ একদিনে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার ও ইউনিটের মূল্য বেড়েছে ৮ হাজার ৪৬৫ কোটি টাকা। অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই এদিন ৫৩৪ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৪৩৭ পয়েন্টে। এদিন সিএসইতে হাত বদল হওয়া ২৬৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ২১৪টির, কমেছে ৩৭টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৭টির দর। সিএসইতে ৩০ কোটি ৮ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।
×