ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

দেশের উন্নয়ন অগ্রগতি থামাতে পারবে না মীর জাফররা

প্রকাশিত: ১০:২৭, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০

  দেশের উন্নয়ন অগ্রগতি থামাতে পারবে না মীর জাফররা

সংসদ রিপোর্টার ॥ রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে মন্ত্রী-এমপিরা বলেছেন, দেশের মানুষ আর বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে কোন ধরনের ঐক্য বা আপোস করে রাজনীতি করতে রাজি না। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী, একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলাকারীদের সঙ্গে কীসের ঐক্য? পাকিস্তানের পেতাত্মা এসব কুলাঙ্গারদের সঙ্গে সমঝোতার কোন প্রশ্নই ওঠে না। আর কোনদিন এসব মীরজাফরদের পক্ষে দেশের চলমান এই উন্নয়ন-অগ্রগতি থামানো সম্ভব হবে না। কারণ দেশের জনগণ এসব মীরজাফরদের চিনতে পেরেছে। প্রথমে স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং পরে ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে রবিবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তারা এসব কথা বলেন। আলোচনায় অংশ নেন বিরোধী দলের উপনেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের, শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি, খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, সাবেক মন্ত্রী মুহাঃ ইমাজ উদ্দিন প্রমাণিক, সাবেক প্রতিমন্ত্রী এ কে তাজুল ইসলাম, রুহুল আমিন রুহুল, সালমা চৌধুরী, ছোট মনির, কাজিম উদ্দিন আহমেদ, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও বিএনপির জাহিদুর রহমান। আলোচনায় অংশ নিয়ে মন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে কোন ধরনের ঐক্য বা আপোস করতে দেশের মানুষ রাজি নয় জানিয়ে বলেন, বিএনপি উন্নয়ন দেখতে পারে না। বর্তমান সরকার এত উন্নয়ন করছে, এটা তাদের সহ্য হয় না। তাই তারা শুধু আন্দোলন আন্দোলন বলে। টকশ’তে বলা হচ্ছে, খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য সাতজন চিকিৎসক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। কিন্তু তার যে আসল সমস্যা মানসিক রোগ, এটার জন্য কোন ডাক্তার নিয়োগ দেয়া হয়নি। আদালতের রায়ে দুর্নীতির কারণে খালেদা জিয়া কারাগারে রয়েছেন। তাকে সরকার কীভাবে মুক্তি দেবে? এই বিএনপি অতীতে যে দুঃশাসন, অগ্নিসন্ত্রাস চালিয়েছে, সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা করেছে, তা এখনও অব্যাহত রেখেছে। অনেকে জাতীয় ঐক্যের কথা বলেন। কিন্তু এদের (বিএনপি-জামায়াত) সঙ্গে আবার কীসের ঐক্য? এদের সঙ্গে সমঝোতার কোন বিষয় নেই। এই কুলাঙ্গারদের সঙ্গে আপোস করে আমরা কোন রাজনীতি করতে রাজি নই। শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি বলেন, একজন দুর্নীতির দায়ে দ-প্রাপ্ত আসামিকে কীভাবে সরকার মুক্তি দেবে? অসুস্থ হলে সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। আদালতই একমাত্র মুক্তি দিতে পারে, অথবা দোষ স্বীকার করে রাষ্ট্রপতির কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করলে সেটি বিবেচনায় আসতে পারে। কিন্তু জনবিচ্ছিন্ন ও দল হিসেবে বিএনপি কতটা দেউলিয়া হয়ে গেছে যে, একজন নেত্রীর অসুস্থতা নিয়ে রাজনীতি করে। তিনি বলেন, সমন্বিত ভর্তি আইন প্রণয়ন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। আগামী বছর থেকে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। প্রশ্নফাঁস ও নকলমুক্ত পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। জ্ঞান-বিজ্ঞানে অভিজ্ঞ, তথ্য-প্রযুক্তি সম্পন্ন আধুনিক নতুন প্রজন্ম গড়ে তোলার ওপর আমরা জোর দিয়েছি। রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, সম্পূর্ণ তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই করে এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। কোন নিম্নমানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হবে না, কেউ মিথ্যা তথ্য দিয়ে এমপিওভুক্ত হয়ে থাকলে তদন্ত করে অবশ্যই সেসব প্রতিষ্ঠানকে বাদ দেয়া হবে। জাতীয় নির্বাচনে সংখ্যানুপাতিকহারে ভোটের হিসাবে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের প্রস্তাব করে বিরোধী দলের উপনেতা জিএম কাদের বলেন, গণতন্ত্রের জন্য প্রয়োজন সুষ্ঠু নির্বাচনী ব্যবস্থা। এ ব্যবস্থায় অনিয়মের সুযোগ ও সম্ভাবনা কম। পৃথিবীর বহু দেশে সংখ্যানুপাতিকহারে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের পদ্ধতি চালু হচ্ছে। এই পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে যে দল শতকরা ২০ ভাগ ভোট পাবে, সেই দল সংসদের মোট আসনের ২০ ভাগ অর্থাৎ ৬০ জন সংসদ সদস্য পাবে। এতে নির্বাচনী ব্যবস্থায় কোন সমস্যা হবে না। নির্বাচনী ব্যবস্থা সুসংহত হবে। সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে থাকা বাধ্যবাধকতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা এই অনুচ্ছেদটি পুরোপুরি বাতিল হোক এটা চাই না। তবে সংসদীয় ব্যবস্থার যে পদ্ধতি আমাদের দেশে চালু আছে সেটা সংসদে সরকারী দলের সদস্যদের সরকারী কর্মকা-ের কোন বিষয়ে বিরোধিতা কিংবা সরকারের বাইরে ভোট প্রদানের কোন সুযোগ নেই। সংসদীয় পদ্ধতির সরকারের মূল কেন্দ্রবিন্দু হবে জাতীয় সংসদ। কিন্তু এখানে সেক্ষেত্রে ঘাটতি রয়েছে। ওয়েস্ট মিনিস্টার পদ্ধতির সরকারে সরকারী দলের শুধু মন্ত্রীরা ছাড়া বাকি সব সদস্য, বিরোধী দলের সদস্য সবাই সরকারের যে কোন বিষয়ে সমালোচনা এবং বিপক্ষে ভোট দিতে পারে। শুধু মন্ত্রীরা পারে না। বাজেট, অভিশংসন ছাড়া অন্যান্য বিষয়ে বিরোধী দলের সদস্যদের পাশাপাশি সরকারী দলের সদস্যরাও যাতে বিপক্ষে ভোট দিতে পারে সেই ব্যবস্থা করা যেতে পারে। তাহলে সংসদ কার্যকর হবে। বিরোধী দলের উপনেতা আরও বলেন, এই মুহূর্তে দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা বেকারত্ব। এই বেকারত্বের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। নতুন কর্মসংস্থান হচ্ছে, কিন্তু বেকারের তুলনায় কর্মসংস্থান হচ্ছে না। শিক্ষা ব্যবস্থাকে কর্মের উপযোগী করে ঢেলে সাজাতে হবে, তাতে বেকার সমস্যা কিছুটা হলেও দূর হবে। মাদকের মারাত্মক ছোবল নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, যেভাবে মাদক ছড়িয়ে পড়ছে তা সত্যিই আশঙ্কাজনক। গত বছর মাদক বিক্রি হয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকার। মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা হচ্ছে, কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে মাদক ব্যবসায়ীদের সংশ্লিষ্টতা থাকায় এ অভিযান সফল হচ্ছে না। সাবেক মন্ত্রী ইমাজ উদ্দিন প্রমাণিক বলেন, মীরজাফর মারা গেছে, কিন্তু মৃত্যুর আগে বলে গেছে বংশধর রেখে যাব। সেই মীরজাফরের বংশধররা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করেছে। কোনদিনই এসব মীরজাফরদের পক্ষে দেশের এই উন্নয়ন-অগ্রগতি থামানো সম্ভব হবে না। কারণ দেশের জনগণ এসব মীরজাফরদের চিনতে পেরেছে। বিএনপির জাহিদুর রহমান বলেন, সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলায় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে কারাগারে বন্দী রাখা হয়েছে। বিচারহীনতার সংস্কৃতিতে দেশের মানুষ আজ বিপন্ন, শঙ্কিত। একাদশ জাতীয় নির্বাচন ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। নির্বাচনের আগের রাতেই ব্যালটে একটি নির্দিষ্ট মার্কায় সিল মেরে ভর্তি রাখার অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নেই, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হয় না- তা একাদশ জাতীয় নির্বাচনে প্রমাণ হয়েছে। কারাগারে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা হচ্ছে না। উনি দীর্ঘদিন ধরে জটিল রোগে ভুগছেন। বিএনপি প্রধানকে ক্রমেই মৃত্যুর দিকে ধাবিত করা হচ্ছে। তিনি মানবিক কারণে খালেদা জিয়াকে জামিনে মুক্তি দিয়ে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ প্রদানের জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানান। জাতীয় পার্টির ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, বিশ্বে বাংলাদেশ আজ স্বল্পোন্নত দেশ নয়, বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। ক্রমাগতভাবে প্রবৃদ্ধির হার বৃদ্ধি বিশ্বের বড় বড় দেশগুলোও ধরে রাখতে পারেনি। দেশের এই উন্নয়নের ধারা ধরে রাখতে হবে। জনশক্তি থেকে বিপুলসংখ্যক রেমিটেন্স আসছে, তাই প্রণোদনা দিয়ে হলেও দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে হবে। আর উন্নয়নকেও টেকসই করতে হবে। নির্বাচনকে অর্থবহ করতে রাজনৈতিক দলগুলোকে একসঙ্গে বসতে হবে, নইলে ভোটের প্রতি মানুষের অনীহা দূর হবে না। কারণ নির্বাচনই গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি। সাবেক প্রতিমন্ত্রী এ কে তাজুল ইসলাম বলেন, খালেদা জিয়া দম্ভভরে বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ কোনদিন ক্ষমতায় আসতে পারবে না, এমনকি বিরোধী দলের আসনেও বসতে পারবে না। কিন্তু আল্লাহ’র কী রহমত, আওয়ামী লীগ টানা তৃতীয় মেয়াদে আজ ক্ষমতায়। আর খালেদা জিয়া বিরোধী দলের আসনেও বসতে পারেনি। আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিকভাবে দল পরিচালনা করে। আর বিএনপি লন্ডন থেকে ফেসবুকে কমিটি করে। এই বিএনপি কোনদিনই আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে পারবে না।
×