ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নৌভ্রমণে সতর্কতা

প্রকাশিত: ০৭:৫২, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০

 নৌভ্রমণে সতর্কতা

ছুটির দিন শুক্রবারে কাপ্তাই লেকে নৌকা ডুবে ছয় পর্যটকের মৃত্যুর ঘটনাটি মর্মান্তিক ও অনভিপ্রেত। এতে আমাদের পর্যটন কেন্দ্রগুলোর অব্যবস্থাপনা এবং দায়িত্বহীনতার বিষয়টিই সামনে চলে আসে। পর্যটন কেন্দ্রের জলাশয়ে নৌভ্রমণের জন্য বিধিবদ্ধ সতর্কতা গ্রহণের আবশ্যকতা রয়েছে। প্রত্যেক পর্যটককে লাইফ জ্যাকেট সরবরাহ করতে হবে। এর অন্যথা হওয়া অনিয়ম। এ জন্য কর্তৃপক্ষ অবশ্যই দায় এড়াতে পারে না। তবে এটা অস্বীকারের উপায় নেই যে, পর্যটকদেরও সচেতন থাকতে হবে। অবলম্বন করতে হবে সতর্কতা। যিনি সাঁতার জানেন না তিনি সুরক্ষা নেবেন নাÑ এটি অভাবিত। ইঞ্জিনচালিত নৌকাতেই বেশি মানুষ বর্তমানে নৌভ্রমণ করে থাকেন। কাপ্তাই লেকে যে দুটি ইঞ্জিনচালিত নৌকা ডুবে যায়, সে দুটি নৌকার চালক লিপ্ত ছিলেন প্রতিযোগিতায়। মানুষের জীবন নিয়ে এ ধরনের ভয়ঙ্কর খেলা লক্ষ্য করা যায় সড়ক-মহাসড়কেও। হাল আমলে নদী ও লেকেও একই ধরনের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এটির অবসান কাম্য। মনে রাখতে হবে, এ ধরনের প্রতিযোগিতার কোন সুযোগই নেই বেড়াতে গিয়ে। যারা এটি মানেন না তারা অবশ্যই আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন করছেন। মানুষের জীবনের চাইতে মূল্যবান আর কিছু হতে পারে না। তাই সর্বোচ্চ সতর্কতা বজায় রাখাই সমীচীন। আমরা ধন্যবাদ দেব ফায়ার সার্ভিস ও নৌবাহিনীর ডুবুরি দলকে। তারা কর্তব্যনিষ্ঠার পরিচয় রেখেছেন। জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে ৬০ পর্যটককে। এলাকাবাসীও সাধুবাদ পাবেন। তারা মানবতার ডাকে সাড়া দিয়ে লেকে ঝাঁপিয়ে পড়ে বেশ ক’জন পর্যটককে জীবিত উদ্ধার করেছেন। একই দিনে কর্ণফুলী নদীতেও নৌকাডুবির ঘটনা ঘটেছে। একটি পিকনিক পার্টির নৌকা ডুবে গেলে বেশ কয়েকজনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এ ধরনের নৌডুবির সংবাদ খবরের কাগজে প্রায়শই ছাপা হয়। সব নৌডুবির সংবাদ পাঠকের কাছে পৌঁছায় না। ফলে দেশে নৌডুবির প্রকৃত চিত্র অনুমাননির্ভর হতে বাধ্য। ঈদ মৌসুমে লঞ্চডুবির খবর ফলাও করে প্রকাশিত হয়। নৌদুর্ঘটনার জন্য প্রধানত নৌব্যবস্থাপনাকেই দায়ী করা চলে। অতিরিক্ত যাত্রী বহন নৌকাডুবির প্রধান কারণ। বাণিজ্যিকভাবে যারা নৌকা বা ইঞ্জিন বোট চালান, তাদের অনেকের মধ্যেই অতিরিক্ত মুনাফা করার মানসিকতা থাকে। ফলে যাত্রী ঝুঁকি বেড়েই চলে। পদ্মা নদীর ওপর নির্মীয়মাণ সেতুর পাশ দিয়ে স্পিডবোটে যাত্রী পারাপার করতে দেখা যায়। এসব স্পিড বোটের প্রত্যেক যাত্রীকে লাইফ জ্যাকেট পরানো হয়ে থাকে। একই ধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা সব ধরনের যাত্রীবাহী জলযানে থাকা আবশ্যক। বিষয়টি কড়াকড়িভাবে মনিটর করলে জীবনের ঝুঁকি যে কমে আসবে, তাতে সন্দেহ নেই। ফলে দুর্ঘটনা রোধ করার ক্ষেত্রে শতভাগ সফল না হলেও দুর্ঘটনাকবলিত যাত্রীদের পানিতে ডুবে অসহায় ও মর্মান্তিক মৃত্যু অন্তত ঘটবে না। বলা প্রয়োজন, ত্রুটিযুক্ত নৌযানও নৌডুবির আরেকটি বড় কারণ। এর অবসানে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষের সক্রিয়তা প্রত্যাশিত। প্রতিটি নৌযানের ফিটনেস সার্টিফিকেট নিরীক্ষণ করতে হবে। আমরা আশা করব পর্যাপ্ত সুরক্ষার যে অভাব সর্বত্র পরিলক্ষিত হয়ে থাকে সেটির অবসান ঘটবে। যাত্রী পরিবহন করে যারা জীবিকা নির্বাহ করেন কাপ্তাইয়ে অবশ্যই তাদেরকে যাত্রীর সুবিধা-অসুবিধার বিষয়টি আমলে হবে। নৌডুবির ঘটনার পর জেলা প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তা, নৌপুলিশ কর্মকর্তা এবং লঞ্চ ও বোট মালিক সমিতির নেতাদের উপস্থিতিতে স্থানীয় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে জরুরী বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, কাপ্তাই হ্রদে চলাচলকারী কোন বোটে ছাদ থাকলেও কোন যাত্রীকে ছাদে ওঠানো যাবে না, যাত্রীদের লাইফ জ্যাকেট সরবরাহ করতে হবে ইত্যাদি। এসব সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই। আশা করি এর বাস্তবায়নে কর্তৃপক্ষ আন্তরিকভাবে সক্রিয় থাকবে।
×