ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ফুলের রমরমা বাণিজ্য

প্রকাশিত: ০৭:০১, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০

  ফুলের  রমরমা  বাণিজ্য

কথায় আছে, বারো মাসে তেরো পার্বণের দেশ আমাদের এ বাংলাদেশ। এদেশে একের পর এক উৎসব লেগেই থাকে। আর এসব উৎসবে এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো ফুল। দেশে সারা বছরই ফুলের কমবেশি চাহিদা থাকে। কিন্তু ফেব্রুয়ারি মাসে এ চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। পহেলা ফাল্গুন, বিশ্ব ভালবাসা দিবস, একুশে ফেব্রুয়ারিকে কেন্দ্র করে সারাদেশেই ফুলের চাহিদা বেশি থাকে। পরনে লাল, হলুদ ও বাসন্তী রঙের শাড়ি। মাথায় গোলাপ, বেলি, গাঁদা জিপসি ফুলের টায়রা, খোঁপায় লাল টকটকে চন্দ্র মল্লিকা, বেনিতে গোঁজানো রজনীগন্ধা। বাহারি ফুলে সেজেগুজে রাজধানীর পথে-প্রান্তরে তরুণীরা। দৃশ্যটি ঋতুরাজ বসন্ত উৎসব ও ভালবাসা দিবসের। ভোরের আলো ফোঁটার আগেই রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের ফুলের পাইকারি বাজারে ব্যস্ততা শুরু“হয়ে যায়। মধ্যরাতের পর থেকেই ঢাকার বাইরে থেকে রং বেরঙের ফুল আসে এখানে। আবার এখান থেকে রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলার খুচরা ক্রেতারা ফুল কিনে নেন। বিক্রেতারা মুখিয়ে থাকেন ফেব্রুয়ারি মাসের দিকে। ব্যবসায়ীরা মৌসুম শেষের হিসাবও করেন পহেলা ফাল্গুন ও ভালবাসা দিবসের বিক্রির পর। পরপর দুটি দিবসের মূল অনুষঙ্গ ফুল হওয়ায় বিক্রি বেড়েছে কয়েকগুণ। প্রতিদিন অন্তত ৬ থেকে ৭ কোটি টাকার লেনদেন হয়। কয়েক বছর আগেও দেশে ফুলের বাজারে হাতেগোনা কয়েক ধরনের ফুল পাওয়া যেত। কিন্তু বর্তমানে দেশে বাণিজ্যিকভাবে চাষ বেশি হওয়ায় ও আমদানি করায় বাহারি রঙের ফুল পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যে জারবেরা, গ্লাডিওলাস, অর্কিড, কসমস, ডালিয়া, টিউলিপ, কালো গোলাপ, ঝুমকা লতা, গাজানিয়া, প্লামেরিয়া, চন্দ্রমল্লিকা অন্যতম। দামও হাতের নাগালে। কিন্তু এই বিশেষ দিনগুলোতে ফুলের চাহিদা থাকায় অতি মুনাফার লোভে বেশি দামে ফুল বিক্রি করছে বিক্রেতারা। দেশে প্রায় বাণিজ্যিকভাবে সাড়ে ১০ হাজার হেক্টর জমিতে ৫০ জাতের ফুলের চাষাবাদ হচ্ছে। যেখানে খুলনা বিভাগে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে ফুল চাষ হচ্ছে, যা মোট ফুল আবাদি জমির ৭৪ ভাগ। ঢাকা বিভাগ রয়েছে ২য় স্থানে, যেখানে ৬৯০ হেক্টর বা মোট আবাদের ২০ ভাগ ফুল চাষ হয়। চট্টগ্রাম বিভাগে ১২১ হেক্টর বা ৩ দশমিক ৪৪ ভাগ ফুল চাষ হয় এবং তার অবস্থান ৩য়। তারা আরও জানিয়েছে, দেশে ফুল উৎপাদন ও বিপণন ব্যবসায় প্রায় দুই লাখ মানুষ জড়িত। এ খাত থেকে জীবিকা নির্বাহ করছেন আরও প্রায় ৭ লাখ মানুষ। এই উৎপাদিত ফুল দেশের চাহিদার বেশিরভাগ পূরণ করছে। আর কিছু ফুল বিদেশে রফতানি হচ্ছে। নগরের বহু এলাকাতেই কমবেশি ফুলের দোকান মেলে। তবে শাহবাগ মোড়, গুলশান ১ ও ২ নম্বর, বনানী, উত্তরা ও আগারগাঁওয়ে ফুল বেশি পাওয়া যায়। প্রতিটি গোলাপ ২০ থেকে ৫০ টাকা, রজনীগন্ধার স্টিক ১৫ টাকা, প্রতিটি গাঁদার মালা ৩০ থেকে ৫০ টাকা, জারবেরা ফুল ২০ থেকে ২৫ টাকা, অর্কিড স্টিক ৫০ টাকা, লিলি ১২০ থেকে ১৫০ টাকা, গ্লাডিওলাস রং ভেদে ১৫ থেকে ২৫ টাকায় বিক্রি হয় উৎসব কালীন সময়ে। দেশের ৭০ ভাগ ফুলের জোগান আসে যশোর ও ঝিনাইদহের বিভিন্ন এলাকা থেকে। সারা বছর চাহিদা থাকলেও ফেব্রুয়ারিজুড়ে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায় ফুলের বেচাকেনা। ফেব্রুয়ারিজুড়ে বসন্ত উৎসব, ভালবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে কেন্দ্র করে ফুল বিক্রি ৬০-৭০ কোটি টাকা ছড়ায়। সারা বছর চাষীরা টুকটাক ফুল বিক্রি করেন। তাদের মূল লক্ষ্য থাকে ফেব্রুয়ারির তিনটি প্রধান উৎসব। আর এ উৎসবকে কেন্দ্র করেই মূলত চাষীরা বিশেষভাবে ফুল পরিচর্যা করে থাকেন। যশোরের ফুলের রাজ্য ঝিকরগাছার গদখালি, পানিসার ও নাভারণ এলাকার প্রায় ছয় হাজার কৃষক বাণিজ্যিকভাবে ফুল উৎপাদন করেন। রজনীগন্ধা, গোলাপ, জারবেরা, গাঁদা, গ্লাডিওলাস, জিপসি, রডস্টিক, কেলেনডোলা, চন্দ্রমল্লিকাসহ ১১ জাতের ফুল চাষ করেন তারা। সারা বছরের লোকসানের হিসাব মেলানোর জন্য ফেব্রুয়ারিজুড়ে ৩ দিবসের ওপর নির্ভর করে থাকেন চাষীরা। ১৯৮৩ সালে এখান থেকেই বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয় ফুলচাষ পানিসারা গ্রামের শের আলীর হাত ধরে।
×