ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শিল্পায়ন উন্নয়নে আসছে নতুন প্রযুক্তি

প্রকাশিত: ০৭:০০, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০

শিল্পায়ন উন্নয়নে আসছে নতুন প্রযুক্তি

প্রতিদিন উদ্ভাবিত হচ্ছে নতুন নতুন প্রযুক্তি। উৎপাদনমুখী উদ্যোক্তাদের উৎপাদন ত্বরান্বিত করতে নিত্যনতুন প্রযুক্তি যুক্ত হচ্ছে কলকারখানার যন্ত্রে। হস্তচালিত যন্ত্র রূপান্তরিত হচ্ছে স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রে। উন্নত বিশ্ব এ ব্যবস্থাপনায় উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে এগিয়ে রয়েছে। তবে বিশ্বায়নের যুগে যোগাযোগ ব্যবস্থা এতটাই শক্তিশালী মুহূর্তে সকল খবর চলে আসে হাতের মুঠোয়। ঘরে বসে খবর পাওয়া যায় পৃথিবীর যে কোন প্রান্তের। প্রয়োজন শুধু সঠিক উদ্যোগ নিয়ে এর মিথস্ক্রিয়া ঘটানো। এমনই একজন উদ্যোক্তা হচ্ছেন টিপু সুলতান ভূঁইয়া। তিনি এ এস কে ট্রেড এ্যান্ড এক্সিবিশন প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। শুরুর দিকে তারা বিভিন্ন পোশাক শিল্পের বিভিন্ন মেশিনারিজ আমদানি করতেন। এর ফলে সিঙ্গাপুর, জাপানে যে শিল্পমেলাগুলো হতো তারা নিজ খরচে পোশাক শিল্পের সঙ্গে জড়িত কিছু বাংলাদেশী উদ্যোক্তাকে সেসব মেলায় নিয়ে যেতেন। অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা ও ভিসা জটিলতার জন্য এই সংখ্যাটা তেমন বাড়ানো সম্ভব হচ্ছিল না। এছাড়া টিপু সুলতান মনে করলেন এই মেলায় প্রতিষ্ঠানের মালিকদের পাশাপাশি মেশিন অপারেটরদের থাকাটাও জরুরী। এসব চিন্তা থেকে তিনি ২০০২ সালে শুরু করলেন শিল্প মেলার। তখন আন্তর্জাতিক মানের মেলা করার জন্য আমাদের দেশে কোন ভেন্যু ছিল না। তিনি ভারত থেকে কিছু তাবু অনেক টাকা ভাড়া দিয়ে এনে গুলশান ইয়ুথক্লাবের মাঠে মেলার আয়োজন করতেন। তবে প্রথম মেলা থেকেই সাড়া মিলেছিল অকল্পনীয়। উৎসাহ আরও বেড়ে যায়। এতে করে যে সুবিধাটা হয়েছিল বিভিন্ন দেশের অনেক কোম্পানি মেলায় অংশগ্রহণ করে সেসঙ্গে তাদের টেকনিক্যাল হ্যান্ডস উপস্থিত থাকায় মেশিনারিজের সকল সুবিধাদি সঠিকভাবে উপস্থাপন করা গিয়েছিল। পাশাপাশি অনেক কোম্পানির উপস্থিতিেিত আমাদের ক্রেতারা যেমন যাচাই করার সুযোগ পেয়েছেন তেমনি কোম্পানিগুলোও প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে সুলভ মূল্যে যন্ত্রপাতি বিক্রি করেছে। মেলায় এত বেশি সাড়া পড়েছিল যে জায়গার সংকুলান হচ্ছিল না। এর মধ্যে আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু কনভেনশন হল হয়ে গেল। মেলা স্থানান্তরিত হলো সেখানে। কিন্তু এখন আর সেখানেও করা যাচ্ছে না। এখন মেলার জন্য প্রয়োজন প্রায় দেড় লাখ বর্গফুট জায়গা। তাই এখন বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারে আয়োজন করা হয়। মজার ব্যাপার হচ্ছে ইউরোপ, আমেরিকা বা জাপানের মতো দেশে যে মেশিন তৈরি হচ্ছে বা মেশিনারিজের আপগ্র্যাডেশন হচ্ছে এক বছরের মধ্যে আমাদের মেলায় এগুলো পেয়ে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের শ্রমবাজার এখনও অন্যদের তুলনায় অনেক সস্তা। অন্যদিকে পারিশ্রমিক ঠিকমতো পেলে শ্রমিকরা কাজ করতে কোন দ্বিধা করেন না। অভারটাইমেও তাদের কোন অনীহা নেই। অথচ পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই ৫টা বাজলেই কারখানা বন্ধ।’ গার্মেন্টসের পাশাপাশি উনারা এখন লেদারটেক, উডটেক, প্রিন্টিংটেক নিয়েও মেলার আয়োজন করছেন। এতেও বেশ সাড়া মিলছে। প্রতিটি মেলায় প্রচুর বিদেশী আসেন। এতে করে আমাদের সরকার অনেক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে সক্ষম হয়। গত ১৫ থেকে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত তৈরি পোশাক শিল্পের মেশিনারি এবং এর সহায়ক পণ্যের ১৯তম আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী ‘গার্মেন্টেক বাংলাদেশ ২০২০’; ১১তম ‘ইয়ার্ন এ্যান্ড ফেব্রিক সোর্সিং ফেয়ার’; ১১তম ‘গ্যাপ এক্সপো-২০২০’ এবং ‘প্যাকটেক বাংলাদেশ ২০২০’ শীর্ষক চারটি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছিল। জাকারিয়া ট্রেড এ্যান্ড ফেয়ার ইন্টারন্যাশনাল, আসক ট্রেড এ্যান্ড এক্সিবিশন প্রাইভেট লিমিটেড এবং বাংলাাদেশ গার্মেন্টস এ্যাক্সেসরিজ এ্যান্ড প্যাকেজিং ম্যানুফ্যাকচারার্স এ্যান্ড এক্সপোর্টারস এ্যাসোসিয়েসন (বিজিএপিএমইএ) সম্মিলিতভাবে প্রদর্শনীগুলোর আয়োজন করেছে। বসুন্ধরার ১০টি হলজুড়ে প্রদর্শনীগুলোতে ২৪টি দেশের ৪৫০টি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, এমপি বলেন, ‘তৈরি পোশাক দেশের প্রধান রফতানি খাত, এখানে ৪৫ লাখের বেশি শ্রমিক কাজ করেন। রফতানি পণ্যের ৮৪ শতাংশ এ খাত থেকেই আসে। এ খাতে বর্তমানে যে সঙ্কট চলছে সেটা সাময়িক, যা সম্মিলিতভাবেই মোকাবেলা করতে হবে। এজন্য সরকার প্রয়োজনীয় সবধররনের সহায়তা প্রদান করবে।’ বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘একসময় তৈরি পোশাক শিল্পে ব্যবহারের জন্য কার্টুন, প্লাস্টিকসহ প্রয়োজনীয় সবকিছু বিদেশ থেকে আমদানি করে পোশাক রফতানি করতে হতো। আজ বাংলাদেশে এ সেক্টর নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের বিপুল চাহিদা মিটিয়ে এখন গার্মেন্টস এক্সেসরিজ বিদেশে রফতানি করা হচ্ছে।’ অনুষ্ঠানে বিজিএমইএ এর সভাপতি রুবানা হক বলেন, ‘আমাদের গার্মেন্ট খাত যেভাবে এগিয়েছে এক্সেসরিজ খাতও সেভাবে এগিয়েছে। গার্মেন্টস না থাকলে এক্সেসরিজও থাকবে না। টেকসই উন্নয়নের জন্য রিসাইক্লিং শিল্পের দিকে যেতে হবে। এ খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। এ খাতকে এগিয়ে নিতে সবাই একসঙ্গে সুপারিশ করলে ফল ভাল পাওয়া যাবে।’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ গার্মেন্ট এক্সেসরিজ এ্যান্ড প্যাকেজিং ম্যানুফ্যাকচারার্স এ্যান্ড এক্সপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট মোঃ আব্দুল কাদের খান, উপদেষ্টা মোঃ রাফেজ আলম চৌধুরী, আসক ট্রেড এ্যান্ড এক্সিবিশন প্রাইভেট লিমিটেড পরিচালক নন্দ গোপাল কে, জাকারিয়া ট্রেড এ্যান্ড ফেয়ার ইন্টারন্যাশনাল এর প্রধান নির্বাহী টিপু সুলতান ভূঁইয়া। এবারের প্রদর্শনীতে বাংলাদেশসহ ভারত, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, তুরস্ক, ভিয়েতনাম, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, শ্রীলঙ্কা, ইতালি, জার্মানি, সিঙ্গাপুর, জাপান, তাইওয়ান, সুইজারল্যান্ড, ফিনল্যান্ড, সুইডেন, থাইল্যান্ড, কলম্বিয়া, মালয়েশিয়া, কানাডা, স্পেন, ফ্রান্স এবং হংকং’ এর মোট ৪৫০টি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করেছে। প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের উৎপাদন, নিরাপত্তা, কর্মপরিবেশ, দক্ষতা, পণ্যের মান, বৈচিত্র্যতা এবং মোড়কজাতকরণ ইত্যাদি কাজে ব্যবহৃত প্রযুক্তি উপস্থাপন করছে। ‘গার্মেন্টেক বাংলাদেশ ২০২০’ এ আন্তর্জাতিক মানের স্যুয়িং, নিটিং, এ্যাম্ব্রয়ডারি, লন্ড্রি, ফিনিশিং, ডায়িং, ক্যাড/ক্যাম, প্রিন্টিং কাটিং, স্প্রেডিং মেশিনারিজ তুলে ধরা হয়েছে। ১১তম ‘ইন্টারন্যাশনাল ইয়ার্ন এ্যান্ড ফেব্রিকস সোর্সিং ফেয়ার’এ বিভিন্ন কোম্পানি প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম সুতা এবং ওভেন ও নিট শিল্পের জন্য উভয়ের মিশ্রনের সর্বাধুনিক সংগ্রহ তুলে ধরছে। প্রদর্র্শনীতে আগত দর্শনার্থীদের সামনে গার্মেন্টস শিল্পের জন্য প্রাকৃতিক এবং কৃত্রিম ফেব্রিকের নতুন এবং উদ্ভাবনীমূলক মিশ্রণ উপস্থাপন করা হয়েছে। বাংলাাদেশ গার্মেন্টস এ্যাক্সেসরিজ এ্যান্ড প্যাকেজিং ম্যানুফ্যাকচারার্স এ্যান্ড এক্সপোর্টারস এ্যাসোসিয়েসন (বিজিএপিএমইএ) এর সহযোগিতায় ‘গ্যাপেক্সপো-২০২০’-এর ১১তম আসরে স্থান পেয়েছে বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর গার্মেন্টস এ্যাক্সেসরিজ এবং মোড়কসহ সংশ্লিষ্ট পণ্যের বিস্তৃত সংগ্রহ। পরিশেষে বলা যায় এ ধরনের মেলার মধ্যদিয়ে শিল্পায়নের প্রতিটি শাখায় বিপ্লব আরও বেগবান হবে।
×