ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

নীলফামারীর আঞ্চলিক বাঁশ গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের উদ্ধোধন করলেন পরিবেশ মন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৪:৫০, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০

নীলফামারীর আঞ্চলিক বাঁশ গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের উদ্ধোধন করলেন পরিবেশ মন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী ॥ উত্তরবঙ্গের একমাত্র নীলফামারীর ডোমারে নবনির্মিত আঞ্চলিক বাঁশ গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি চালু করা হলো। আজ শনিবার দুপুরে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী মোঃ শাহাব উদ্দিন এমপি এটির কার্যক্রম চালু করনের আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্ধোধন করেন। এসময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী বলেন, প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে বাঁশের ব্যাপক উৎপাদন সহ বাঁশের বহুবিধ ব্যবহারের উত্তরাঞ্চলের একমাত্র আঞ্চলিক বাঁশ গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি স্থাপন করা হয়েছে। বিলুপ্তির পথে এই বাঁশ নিয়ে বন গবেষণাগারের সাফল্যে প্রধানমন্ত্রী সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন বাঁশ দিয়ে যে ফার্নিচার হয় সেটা টেকসই। এটাকে বাজারজাত করতে হবে। তাহলেই সাধারণ মানুষ বুঝতে পারবে, বাঁশ দিয়ে শুধু বেড়া নয়, ফার্নিচারও হয়। তিনি বলেন, আফ্রিকার মতো উন্নত দেশে এখনও বাঁশের তৈরী আসবাবপত্র ব্যবহার করা হচ্ছে। আমাদের দেশে উত্তরাঞ্চলের এক সময় প্রচুর বাঁশের বাগান ছিল। এর ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে শেখ হাসিনার সরকার প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বাঁশের তৈরি আসবাবপত্র বাজারজাত করে দেশে বিদেশে রপ্তানির পাশাপাশি বন পরিবেশও রক্ষায় গুরুত্ব দিয়েছেন। মন্ত্রী জানান বন বিভাগের অসংখ্য জমি বেহাত হয়েছে। এ নিয়ে অনেক মামলা চলছে। আমরা সকল মামলা নিস্পক্তি করে বন বিভাগের জমি উদ্ধার করতে চাই। এ জন্য সকলের সহযোগীতা চেয়েছেন মন্ত্রী। মন্ত্রী এ অঞ্চলের কৃষকদের তামাক আবাদ বন্ধের জন্য সকলের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, অন্যান্য আবাদ বৃদ্ধি করুন। তামাক বিষবৃক্ষ। যা স্বাস্থ্যের বড় ক্ষতিকারক। পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণসহ আমাদের অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থে অধিক পরিমাণে বৃক্ষ রোপনে এগিয়ে আসার জন্য মন্ত্রী আহবান জানিয়ে বলেন আমরা জাতির পিতার জন্মশতবর্ষ বার্ষিকীর 'মুজিববর্ষ' উদযাপনের অংশ হিসেবে সারাদেশে একযোগে ১ কোটি গাছের চারা বিতরণ ও রোপন করবো। চারা রোপনে ইউক্যালিপটার গাছকে বাদ রাখা হয়েছে। এই গাছটিও পরিবেশের জন্য মারাত্বক ক্ষতিকারক। মন্ত্রী বলেন, আমরা বাঁশের পাশাপাশি হারিয়ে যাওয়া বিভিন্ন প্রজাতির গাছ নিয়ে গবেষণা করছি। এছাড়াও সুন্দরবন রক্ষাসহ দেশের বনাঞ্চল বৃদ্ধিতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন করেছি। ইটভাটি সর্ম্পকে মন্ত্রী বলেন অবৈধ ইটভাটিগুলো বন্ধের ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। উত্তরবঙ্গের একমাত্র নীলফামারীর ডোমারে নবনির্মিত আঞ্চলিক বাঁশ গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সচিব জিয়াউল হাসান এনডিসি। এসময় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন নীলফামারী-১ (ডোমার-ডিমলা) আসনের সংসদ সদস্য আফতাব উদ্দিন সরকার, বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক সফিউল আলম চৌধুরী, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) শামীম আল রাজী, নীলফামারী জেলা প্রশাসক হাফিজুর রহমান চৌধুরী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবিএম আতিকুর রহমান, বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউট(বিএফআরআই) চট্টগ্রাম পরিচালক ড. মোঃ মাসুদুর রহমান, মন্ত্রীর একান্ত সচিব (উপসচিব) মোঃ আখতারউজ-জামান, বগুড়া অঞ্চলের বন সংরক্ষন কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল সরকার, ডোমার আঞ্চলিক বাঁশ গবেষনা ও প্রশিক্ষন কেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক ড. রফিকুল হায়দার, সিনিয়র রিসার্চ অফিসার আনিছুর ইসলাম, ডোমার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিনা শবনম, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান তোফায়েল আহমেদ, ডোমার উপজেলা আঃলীগের সভাপতি খায়রুল আলম বাবুল প্রমুখ। এই অনুষ্ঠান শেষে বনমন্ত্রী নীলফামারীর গোলনা এলাকায় ইকো পার্ক স্থাপনের প্রস্তাবিত এলাকা পরিদর্শন ও সামাজিক বনায়নের উপভোগীদের মাঝে চেক বিতরন করেন। প্রকাশ্যে থাকছে যে, রংপুর বিভাগের আটটি জেলার ৫৮টি উপজেলায় আধুনিক পদ্ধত্তিতে বাঁশ চাষের পরিকল্পণায় ১৭ কোটি ২২ লাখ ৫১ হাজার টাকা ব্যয় নীলফামারীর ডোমারে আঞ্চলিক বাঁশ গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি দুই একর জমির ওপর নির্মান করা হয়। এখানে কেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক, একজন চতুর্থ গ্রেডের কর্মকর্তা ও তার অধীনে চারজন গবেষক, তিনজন সহকারী গবেষকসহ বিভিন্ন স্তরের ২৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে। এ কেন্দ্রে কঞ্চিকলম পদ্ধতিতে বাঁশ চাষ, বাঁশের ঝাড় ব্যবস্থাপনা, বাঁশের পোকামাকড় ও রোগবালাই দমন ব্যবস্থাপনা, রাসায়নিক সংরক্ষনী প্রয়োগে বাঁশ, গৃহ নির্মাণ সামগ্রীর আয়ুস্কাল বৃদ্ধি বিষয়ক প্রস্তুতি ও বাঁশের টাইলস এবং আসবাবপত্র তৈরীর প্রযুক্তি নিয়ে গবেষনা করা হবে। দেশে ৩৩ জাতের বাঁশ রয়েছে। রংপুর অঞ্চলের সাধারত মোথা থেকে বাঁশের চাষ হয়। উন্নত পদ্ধত্তি কঞ্চি কলম থেকে বাঁশ চাষে উৎপাদন বেশী হয়। কৃষকদের প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধিতে কাজ করবে কেন্দ্রটি। পাশাপাশি প্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে ওই বাঁশ থেকে সৌখিন আসবাবপত্র সহ দৈনন্দিন কাজে ব্যবহারের বিভিন্ন উপকরণ তৈরীর প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। বানিজ্যিক উৎপাদনের সেটির দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক বাজার সৃষ্টি করা হবে।
×