ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

অনন্য যারিফ আকন্দ

প্রফেসর ট্রিপল-এ’র মাইন্ডকন্ট্রোলার

প্রকাশিত: ০৭:২০, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০

প্রফেসর ট্রিপল-এ’র মাইন্ডকন্ট্রোলার

২১০৮ সাল। প্রফেসর ট্রিপল এ’র প্রতিষ্ঠিত ‘বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা সংস্থা’- সংক্ষেপে ‘বিএসআরএ’তে অপেক্ষা করছে একদল ছেলে-মেয়ে। বিশ্বসেরা একজন বিজ্ঞানীর নাম জিজ্ঞেস করলে পৃথিবীসহ অন্যান্য গ্রহ-উপগ্রহের যে কোন প্রান্তের লোক প্রথমেই যাঁর নাম বলবে তিনি হলেন- ‘প্রফেসর ট্রিপল-এ’। তাঁর নামের আদ্যাক্ষর তিনটি ‘এ’ মিলে হয়েছে ‘ট্রিপল-এ’। নামটা অনেক বড় হওয়ায় সংক্ষেপে তাঁকে ডাকা হয় ‘ট্রিপল-এ’ নামে। এখন ‘ট্রিপল-এ’-এর আড়ালে তাঁর মূল নামটা হারিয়েই গেছে বলা যায়! তবে অনেক বড় বিজ্ঞানী হলে কী হবে, তিনি ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের অনেক ভালবাসেন। বাচ্চাদের বিভিন্ন গল্প শোনান, তাদের সঙ্গে খেলা করেন। তাঁকে সবাই পছন্দ করে। সেদিন একদল ছেলে-মেয়ে বায়না ধরল, তাঁর ছেলেবেলার গল্প শোনার জন্য। প্রফেসর ট্রিপল-এ শুরু করলেন, বুঝলে ছোট্ট বন্ধুরা, তখন আমি ক্লাস ফাইভে পড়ি। আমাদের স্কুলে একজন রাগী শিক্ষক ছিলেন। ক্লাসের সবাই তাঁকে যমের মতো ভয় পেত। কেউ পড়া না পারলে তাকে তিনি চিকন একটা বেত দিয়ে অনেক মারতেন। আর পরীক্ষায় ফেল করলে তো কথাই নেই! তিনি যখন কাউকে মারতেন তখন আমার খুব কষ্ট লাগত। একদিন হোমওয়ার্ক না করার জন্য রাকিব ভীষণ মার খেল। ‘আমি আর এই স্কুলে পড়ব না।’ বলতে বলতে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগল রাকিব। তার সঙ্গে সঙ্গে আমারও ভীষণ কান্না পেল। এত বছর পরও প্রফেসরের চোখ ছলছল করে ওঠল। প্রফেসর ট্রিপল-এ বলতে লাগলেন, সেদিন বাড়িতে গিয়েই ভাবতে লাগলাম, কীভাবে স্যারের পিটুনি থেকে রেহাই পাওয়া যায়! ভাবতে ভাবতে বিকেল গড়িয়ে কখন যে রাত হয়ে গেল! তবুও কোন কূলকিনারা পেলাম না। পরদিন স্কুলে গিয়ে দেখি আমার ক্লাসের অনেকেই ভয়ে তটস্থ। অন্যদের অবস্থা দেখে মনে পড়ে গেল, আজ তো স্যারের পরীক্ষা নেয়ার কথা। কিন্তু আমার তো কিছুই পড়া হয়নি। তখন আতিকা বলল, ‘দোস্ত তুই তো অনেক যন্ত্রপাতি বানাতে পারিস। আমাদের জন্য কিছু একটা ব্যবস্থা কর প্লিজ।’ মনে মনে ভাবলাম, আচ্ছা, একটা যন্ত্র বানালে কেমন হয়? এমন একটা যন্ত্র, যে যন্ত্রের মাধ্যমে মানুষের মনকে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে! যার উপর প্রয়োগ করা হবে তাকে দিয়ে মানুষের উপকার হয় এমন সব কাজ করানো যাবে! ক্লাসে লুকিয়ে লুকিয়ে যন্ত্রটির নকশা তৈরি করলাম। বাসায় ফিরেই কাজে লেগে গেলাম। জিনিসপত্র যোগাড় করে যন্ত্রটি বানাতে শুরু করলাম। ঘুম-নাওয়া-খাওয়া ভুলে কাজ করতে লাগলাম। তাতে বাবা-মা’র বকা খেলাম একটু-আধটু। তবে তা সহজেই হজম হয়ে গেল। একটানা কয়েক দিন খাটা-খাটুনি করে তৈরি করলাম পৃথিবীর প্রথম ‘মাইন্ডকন্ট্রোলার’ যন্ত্রটি! যন্ত্রটির কথা বন্ধুদের বললাম। সবাই আনন্দে আমাকে জড়িয়ে ধরল। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে লাগলাম সেই শিক্ষক ক্লাসে আসার জন্য। স্যার আসতেই ভয়ে ভয়ে এগিয়ে গেলাম তাঁর কাছে। স্যারকে বললাম, ‘স্যার, দয়া করে আজ থেকে আপনি আমাদের মারবেন না।’ তিনি কিছুক্ষণ স্থির দৃষ্টিতে যন্ত্রটির দিকে তাকিয়ে রইলেন। তারপর সবাইকে অবাক করে দিয়ে বলে উঠলেন, ‘ঠিক আছে, আজ থেকে তোদের আর মারব না।’ সবাই খুশিতে হাততালি দিতে লাগল। জান বন্ধুরা, সেদিনও আমরা সবাই কান্না করেছিলাম। তবে কারণটা ছিল ভিন্ন। এরপর থেকে গল্পের মতোই সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে আমাদের দিন যাচ্ছিল। তবে এ সুখ বেশি দিন স্থায়ী হলো না। কারণ ‘প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা’র আর বেশি দিন বাকি নেই! বাবা-মা-শিক্ষক-প্রতিবেশী সবারই একই কথা, ‘যেভাবেই হোক ‘এ প্লাস’ চাই।’ পড়ার চাপে ও দুশ্চিন্তায় আমাদের একেক জনের মরার মতো অবস্থা! আমাদের সময়ে পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীদের দশ মাস লেখাপড়া করে বোর্ড পরীক্ষার মতো একটা পরীক্ষা দিতে হতো। এই বয়সে যখন হেসে-খেলে আনন্দের সঙ্গে স্কুলে যাওয়া-আসার কথা তখন এই ধরনের একটা পরীক্ষার যৌক্তিকতা আমরা খুঁজে পাচ্ছিলাম না। তার উপর ‘এ প্লাস’ পাওয়ার ভারি বোঝা তো আছেই।। ক্লাস শেষে একদিন রবিউল বলল, ‘দোস্ত, তোর ‘মাইন্ডকন্ট্রোলার’টা আরেকবার ব্যবহার কর না! প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষাটা যদি বন্ধ করা যায়!’ হঠাৎ এলার্মের মতো টু টু... টু টু টু... আওয়াজ হলো। সেই শব্দ শুনে প্রফেসর উঠে দাঁড়ালেন। তিনি চলে যাচ্ছেন মনে করে বাচ্চারা একযোগে বলতে লাগল, তারপর কী হলো? পরীক্ষাটা কি সত্যিই বন্ধ হয়েছিল? তোমরা একটু বসো। দূরের নক্ষত্র থেকে জরুরী একটা সিগনাল এসেছে। চেক করেই চলে আসব। প্রফেসর ট্রিপল-এ ছুটে গেলেন তাঁর কোয়ান্টাম কম্পিউটারের কাছে। আর এদিকে বাচ্চারা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে লাগল...! দি হলি চাইল্ড স্কুল, মানিকগঞ্জ শ্রেণী- ৬ষ্ঠ, রোল নং-১
×