ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বসন্ত-ভালোবাসায় উৎসবের মেতেছে সবাই

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০

বসন্ত-ভালোবাসায় উৎসবের মেতেছে সবাই

অনলাইন ডেস্ক ॥ বাতাসে বসন্তের আগমনী বার্তা। গাছ থেকে ঝরে পড়ছে পুরাতনি যতো ধূসর পাতা। আর তার জায়গা বদল করছে সবুজ কিশলয়। রঙে-বেরঙের ফুলে ভরে উঠছে বাগানগুলো। এসেছে ফাল্গুন। এসেছে ঋতুরাজ বসন্ত! শুক্রবার পহেলা ফাল্গুন। বাংলা বর্ষপঞ্জির হিসেবে রদবদল হওয়ায় ১৩ ফেব্রুয়ারির জায়গায় এখন থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারিই পালিত হবে পহেলা ফাল্গুন। একই দিনেই পালিত হবে ভালোবাসা দিবসও। ফলে যুগপৎ ভালোবাসা আর বর্ণালী রঙের বাহার নিয়ে এসেছে এ দিন। আজ পহেলা ফাল্গুন। আবার বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। দুই উৎসব একই দিনে ফলে উৎসবের আনন্দটাও যেন বেশি। ছুটির দিন শুক্রবার হওয়াতে বসন্ত-ভালোবাসায় উৎসবের মেতেছে সব বয়সী মানুষ। বিশেষ করে বইমেলা আজ যেন একটু অন্যরকম। অন্য দিনের চেয়ে মানুষের সমাগমও বেশি। আবার শহরের বিভিন্ন সময়কাটানোর জায়গা, পার্কগুলোতেও ভিড় রয়েছে দর্শনার্থীদের। প্রিয়জন কিংবা পরিবার নিয়ে ঘুরতে বেড়িয়েছেন সবাই। কারো পোষাক বাসন্তি রঙে রঙ্গিণ কারোর আবার লালে লাল। সাজ সজ্জায়ও বলে দিচ্ছে এ যেন এক ভিন্ন উৎসব। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে সংসদ এলাকা, হাতিরঝিল, রমনাপার্ক, সোহরাউয়ার্দি উদ্যান, জাদুঘর, মিরপুর চিড়িয়াখানা সর্বত্রর্ই মানুষের ভিড়। রাস্তায় অতিরিক্ত মানুষের ভিড়ে রয়েছে কিছুটা যানজটও। বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বইমেলা এলাকায় যেতে মানুষকে একটু বেশিই ঝক্কি ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে। অমর একুশে বইমেলার পরতে পরতে ঋতুরাজ বসন্ত আর ভালোবাসা দিবসের ছোঁয়া লেগেছে। ভালোবাসা আর বসন্তের রঙের মুগ্ধতায় বইমেলা মাতোয়ারা করে রেখেছেন বইপ্রেমীরা। দেখতে দেখতে তরুণ-তরুণীদের পদচারণায় ভরে ওঠে মেলা প্রাঙ্গণ। যাদের বেশিরভাগকে মেলা প্রাঙ্গণে ঘোরাঘুরি আর খোশগল্পে মেতে থাকতে দেখা গেছে। তবে কেউ কেউ বিভিন্ন স্টলে গিয়ে বইয়ের পাতা উল্টিয়েও দেখছেন। ভালোবাসার মানুষটির সঙ্গে ঘুরতে বের হওয়া তরুণি ইশা (ছদ্দনাম) বলেন, বসন্ত এসেছে পহেলা ফাগুনটাই আমার বেশি ভালোলাগে। সেই সাথে এবার ভালোবাসা দিসবও একত্রে। একটু একত্রে গল্প করা,সময় কাটানো নিজেদের মতো করে একটু একত্রে খাওয়া এইতো। আর আমাকে আজ বই উপহার দিবে সেটিও একটি কারণ। এদিকে প্রিয়জনদের পাশাপাশি কেউ কেউ বেড়িয়েছেন পুরো পরিবার নিয়েই। বাচ্চাদেরও পড়ানো হয়েছে ম্যাচিং পোশাক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে বাচ্চাদের নানা বিষয় দেখিয়ে দিচ্ছিলেন স্ত্রী সন্তানসহ বাড্ডা থেকে আসা সাইদুল। তিনি বলেন, পরিবার নিয়ে ছুটির দিনে বের হলে ভালোই লাগে। বইমেলা ঘুরিয়ে এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ভবন বিষয়ে বাচ্চাদের ধারণা দিলাম। ছুটির দিনে কোনো উপলক্ষ থাকলে আরো ভালো লাগে। বাচ্চারও অনেক খুশি। নগরের বিভিন্ন জায়ঘা ঘুরে দেখা গেছে শুধু লাল কিংবা বাসন্তী রঙের শাড়ির সাথে মেয়েদের মাথায় শোভা পাচ্ছে ফুলের রিং। এ বসন্ত নিয়েই কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন- ‘এলো খুনমাখা তূণ নিয়ে/ খুনেরা ফাগুন।’মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকার চেয়ে এই ঋতুতেই তো বাংলার দামাল ছেলেরা শহীদ হয়েছে। তারই খুন মেখে আছে পলাশ-শিমুল। শুধু তাই নয়, স্বৈরাচারবিরোধী গণতন্ত্র দিবস হিসেবেও জ্বলছে পহেলা ফাল্গুন। ইতিহাস বলে, ১৫৮৫ সালে মোগল সম্রাট আকবর ১৪টি উৎসবের প্রবর্তন করেছিলেন। এর মধ্যে অন্যতম ছিল ‘বসন্ত উৎসব’। ১৪০১ বঙ্গাব্দ থেকে সে উৎসব এ উৎসব মহানগর ঢাকা থেকে সারাদেশে নতুন করে তরঙ্গিত হতে শুরু করেছে। পহেলা ফাল্গুনে বসন্ত উৎসবের রঙে মেতে ওঠে তরুণ হৃদয়, নতুন করে প্রাণ পায় প্রবীণেরা। বসন্তে শুধু প্রকৃতিই নয়, হৃদয়ও রঙিন হয়ে ওঠে। তাই তো বসন্ত আমাদের কাছে ‘প্রেমের ঋতু’। এবারের বসন্তকে স্বাগত জানাতে ‘এসো মিলি প্রাণের উৎসবে’ স্লোগানে রাজধানীর চারটি মঞ্চে বসন্ত উৎসবের আয়োজন করেছে জাতীয় বসন্ত উদযাপন পরিষদ। এর মূল আয়োজনটি হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায়। এ ছাড়াও ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবর মঞ্চ, সদরঘাটসংলগ্ন ওয়াইজঘাটের বুলবুল ললিতকলা একাডেমির মাঠ (বাফা) ও উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরের রবীন্দ্র স্মরণীর উন্মুক্ত মঞ্চে বসন্ত উৎসবের অনুষ্ঠান হবে। এছাড়া শুক্রবার ছায়ানটের আয়োজনে সংগঠনের নিজস্ব মিলনায়তনে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় একক ও সম্মিলিতি গান এবং নৃত্য দিয়ে বরণ করে নেওয়া হবে বসন্তকে।
×