ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

রাষ্ট্রপতির ভাষণ আলোচনা

বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে কোন ঐক্য হতে পারে না

প্রকাশিত: ১১:১৯, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০

বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে কোন ঐক্য হতে পারে না

সংসদ রিপোর্টার ॥ রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে মন্ত্রী-এমপিরা বলেছেন, দেশকে আরও এগিয়ে নিতে অবশ্যই জাতীয় ঐক্যে চাই। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী, হাজার হাজার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে হত্যাকারী, অগ্নিসন্ত্রাসী, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাকারী বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে কোনদিন ঐক্য হতে পারে না। বাংলাদেশে রাজনীতি করতে হলে শুধু বিএনপি নয়, সকল দলকেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মেনেই করতে হবে। না মানলে সেসব দলের স্বাধীন বাংলাদেশে রাজনীতি করার কোন অধিকার নেই। প্রথমে স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং পরে ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তারা এসব কথা বলেন। আলোচনায় অংশ নেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, সাবেক মন্ত্রী এ কে এম শাহজাহান কামাল, সাবেক প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলী, সরকারী দলের আসলাম হোসেন সওদাগর, বেগম মোছাঃ শামীমা আক্তার খানম, এম এ মতিন, নজরুল ইসলাম চৌধুরী, হাসিবুর রহমান স্বপন, কাজী নাবিল আহমেদ, সেলিমা আহমাদ, এম আবদুল লতিফ, আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন, তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভা-ারী, ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা, বিরোধী দলীয় চীফ হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গা, গণফোরামের মোকাব্বির খান ও বিএনপির মোশাররফ হোসেন। আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, এই সংসদে আগে অকথ্য গালিগালাজ, অসভ্য ভাষার ব্যবহার দেখেছি। কিন্তু বর্তমান সংসদে সেই চিত্র আর নেই। আমরা বিরোধী দল হিসেবে সংসদে সরকারের ভাল কাজের প্রশংসার পাশাপাশি মন্দ কাজের সমালোচনা করছি। তিনি আগামীতে স্পীকারকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে দেখার ইচ্ছা প্রকাশ করলে সভাপতির আসনে থাকা ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, এত তাড়াতাড়ি বিদায় দিতে চাচ্ছেন? জবাবে রাঙ্গা বলেন, বিদায় নয়, আপনাকে (স্পীকার) আরও উচ্চ আসনে দেখতে চাই। তিনি বলেন, ধর্মের দোহাই দিয়ে, পবিত্র কোরানের অপব্যাখ্যা দিয়ে এখনও অনেকস্থানে যুব সমাজকে বিভ্রান্ত করার প্রচেষ্টা চলছে। এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। দেশে আমূল পরিবর্তন এসেছে, এই উন্নয়ন-অগ্রগতি সবাইকে ধরে রাখতে হবে। মুজিববর্ষে সবাইকে প্রতিজ্ঞা নিতে হবে- যার যার দল তার, কিন্তু দেশের উন্নয়ন সবার। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, গত ১০ বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিশ্বসভায় মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। এ অর্জন অনেক পরিকল্পিত ও কষ্টার্জিত। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের কূটনৈতিকভাবে দেশকে প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছিল। স্বাধীনতাবিরোধী ও গণহত্যাকারীদের মন্ত্রী করেছিল, কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী সাকা চৌধুরীকে ওআইসিতে মহাসচিব প্রার্থী করে মাত্র তিনটি ভোট পেয়েছিল। দেশের জন্য এটা কতটা লজ্জার। ক্যান্টনমেন্ট থেকে প্রসূত (জন্ম) হওয়া বিএনপির মুখে গণতন্ত্র, আইনের শাসন, নির্বাচনের কথা মানায় না। দলটির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান প্রতি রাতে শত শত সেনা কর্মকর্তাকে ফাঁসি দিয়ে হত্যা করেছেন। তার পুত্র কুলাঙ্গার তারেক রহমান লন্ডনে পলাতক থেকে জাতির পিতাকে কটাক্ষ করার দুঃসাহস দেখায়। তাই শুধু বিএনপি নয়, বাংলাদেশে রাজনীতি করতে হলে প্রত্যেক দলকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে মেনেই করতে হবে। তিনি বলেন, ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মদদ দিতে রাষ্ট্রীয় মদদে এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সরাসরি হস্তক্ষেপে ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান করা হয়। সেটি এখন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। তথ্য পাচার হবে এমন অদ্ভুত অজুহাত দেখিয়ে খালেদা জিয়া দেশকে সাবমেরিন ক্যাবলে যুক্ত হতে দেননি। তখন বিনামূল্যে পেতাম, এখন মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার খরচ করতে হচ্ছে। দেশের এই বিপুল ক্ষতি, পেছনে ফেলার দায়-দায়িত্ব অবশ্যই খালেদা জিয়াকে নিতে হবে। আওয়ামী লীগ নির্বাচনকে যদি প্রভাবিতই করে, তবে সিরাজ সাহেব কীভাবে এমপি হলেন? আমরা অবশ্যই রাজনৈতিক ঐক্য চাই, কিন্তু বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী, একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলাকারী, ৫০ হাজার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীকে হত্যাকারী বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে কোনদিন ঐক্য হতে পারে না। ওয়ার্কার্স পার্টির ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, বঙ্গবন্ধুই আমাদের জাতির পিতা, এটা নিয়ে অন্য কথা জাতি সহ্য করবে না। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ক্ষমতায় এসে জেনারেল জিয়া তার নাম মুছে ফেলার চেষ্টা করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের পুরস্কৃত করেছিলেন। আর জেনারেল এরশাদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করেছিলেন। কী নির্মম নির্যাতন চালিয়েছে। তাই সমস্ত সামরিক স্বৈরশাসকদের চরিত্র একই হয়। জিয়ার আমলে শত শত সামরিক অফিসারকে কারাগারে পশুর মতো ফাঁসি দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। স্বৈরশাসনের আর পথ নয়, বঙ্গবন্ধুর দেয়া আত্মপরিচয় আমাদের রক্ষা করতে হবে। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। ভারতের অনেক নেতা আঙ্গুল তুলে দেখাতে চায়, বাংলাদেশ ইসলামিক রাষ্ট্র। কিন্তু মুজিববর্ষে আমরা দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, বাংলাদেশ ধর্মনিরপেক্ষতার পথ থেকে বিচ্যুত হবে না। সাবেক মন্ত্রী শাহজাহান কামাল বলেন, ধানম-ির ৩২ নম্বর বাড়িটিকে অসম্ভব ভালবাসতেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু। রাষ্ট্রপতি হয়েও তিনি বঙ্গভবনের পরিবর্তে এই ছোট বাড়িটিতেই থেকেছেন। এই সংসদেই বঙ্গবন্ধু বলেছেন, আমাকে কে হত্যা করবে, আমি তো কোন অপরাধ করিনি। কিন্তু বেইমান-মোনাফেক-বিশ্বাসঘাতক মুশতাক-জিয়াউর রহমানসহ কতিপয় সামরিক অফিসারের হাতেই বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে জীবন দিতে হলো। এ কলঙ্ক কোনদিন মুছবে না। বিএনপির মোশাররফ হোসেন কারাবন্দী খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি জানিয়ে বলেন, সারাদেশে গণতন্ত্রহীনতা, শাসনহীনতা চলছে। সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া মিথ্যা মামলার শিকার হয়ে আজ কারাবন্দী। ৭৪ বছর বয়সী খালেদা জিয়াকে জামিনযোগ্য মামলাতেও জামিন দেয়া হচ্ছে না। বড় বড় ব্যাংক লুটেরারা, হত্যাকারী, সন্ত্রাসীরা জামিন পেলেও মাত্র দুই কোটি টাকার মামলায় বিএনপি নেত্রীকে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে, তার জীবন এখন সঙ্কটাপন্ন। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ, বয়সের কথা বিবেচনা করে অসুস্থ বিএনপি নেত্রীকে মুক্তি দিন। গণফোরামের মোকাব্বির খান বলেন, ড. কামাল হোসেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর অত্যন্ত ¯েœহ ও আস্থাভাজন ছিলেন। যত বেশি ভিন্ন মতের প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল হব, সংসদ তত প্রাণবন্ত হবে। গণফোরাম বঙ্গবন্ধুকে মেনেই রাজনৈতিক কর্মকা- পরিচালনা করে। ড. কামাল হোসেন মাত্র আট মাসে জাতিকে সংবিধান উপহার দিতে পেরেছিলেন। আন্তর্জাতিক আদালতে বিভিন্ন মামলায় বিনা পারিশ্রমিকে তিনি বারবার বাংলাদেশকে বিজয়ী করেছেন। তাই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হলে ব্যাংক ডাকাত, দুর্নীতিবাজমুক্ত দেশ গড়ে তুলতে হবে। তরিকত ফেডারেশনের সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভা-ারী রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে বলেন, মানবিক কারণে আমরা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি। কিন্তু এদের দ্রুত মিয়ানমারে পাঠাতে না পারলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে। কারণ বিএনপি-জামায়াতসহ আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বসে নেই। এদের নিয়ে নানা চক্রান্ত করছে। কূটনৈতিক কারণে পাকিস্তানে বাংলাদেশের ক্রিকেট দল খেলতে যাওয়ার পর স্টেডিয়ামে যুদ্ধাপরাধী নিজামীকে নিয়ে প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করা হয়। এতেই স্পষ্ট, পাকিস্তান এখনও তাদের অবস্থান থেকে এতটুকু সরে যায়নি। তিনি মওদুদীবাদী জামায়াতে ইসলামের রাজনীতি দ্রুত নিষিদ্ধের দাবি জানান।
×