ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বেশিরভাগ কোম্পানির দর বৃদ্ধি

শেয়ারবাজারে সূচকের উত্থানের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে লেনদেন

প্রকাশিত: ১১:১৫, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০

শেয়ারবাজারে সূচকের উত্থানের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে লেনদেন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ শেয়ারবাজারে সূচক ও লেনদেনের পালে হাওয়া লেগেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য ব্যাংকগুলোকে ২০০ কোটি টাকা করে বিশেষ তহবিল গঠনের সুযোগ দেয়ায় সবার মাঝে আশার সঞ্চার হয়েছে। তহবিল গঠনের প্রজ্ঞাপন জারির পরদিন থেকে সূচকের টানা উত্থানের সঙ্গে বেড়েছে লেনদেনের গতি। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) এক বছর পর আবারও সাতশ’ কোটি টাকার ওপর লেনদেন হয়েছে। লেনদেন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তালিকাভুক্ত বেশিরভাগ কোম্পানির দরই বেড়েছে। গত এক বছরে শেয়ারবাজারে নেতিবাচক প্রবণতার কারণে স্টেকহোল্ডারদের একটি অংশের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোকে বিশেষ তহবিল গঠনের সুযোগ দেয়া হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য প্রত্যেকটি ব্যাংক ২০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠন করতে পারবে। নিজস্ব উৎস অথবা ট্রেজারি বিল বন্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলো এ তহবিলের অর্থ সংগ্রহ করতে পারবে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ৫ শতাংশ সুদে এ তহবিলের অর্থ সংগ্রহ করতে পারবে ব্যাংকগুলো, যা পরিশোধের সময় পাবে পাঁচ বছর। ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ ৭ শতাংশ সুদে এ তহবিল থেকে ঋণ দিতে পারবে। তবে এই ঋণ নিয়ে বিনিয়োগকারীরা সব ধরনের শেয়ার কিনতে পারবে না। নিয়মিত ভাল লভ্যাংশ দেয় এমন কোম্পানি যেগুলোর উদ্যোক্তা পরিচালকের শেয়ার ৩০ শতাংশের বেশি রয়েছে, সেইসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা যাবে। এছাড়া নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ মিউচুয়াল ফান্ডসহ অন্যান্য খাতে বিনিয়োগ করা যাবে। এই টাকা দিয়ে জেড ক্যাটাগরির কোন শেয়ার কেনা যাবে না। অর্থাৎ এই শর্ত মেনে ১৪২ কোম্পানির শেয়ার কেনা যাবে না। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এ সুবিধা দেয়ার পর মঙ্গলবার শেয়ারবাজারে উলম্ফন দেখা দেয়। সেই সঙ্গে লেনদেন বেড়ে পাঁচশ’ কোটি টাকার ঘরে পৌঁছে। বুধবার ডিএসইতে ছয়শ’ কোটি টাকার ওপর লেনদেন হয়। বৃহস্পতিবারে আগের দিনের লেনদেনকেও ছাড়িয়ে যায়। বিশেষ করে মৌলভিত্তি সম্পন্ন বড় কোম্পানির দিনটিতে চাহিদা বেড়ে যায়। এছাড়া লভ্যাংশ ঘোষণা করতে যাওয়া তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোরও দর বাড়ে। আগের দুই কার্যদিবসের মতো বৃহস্পতিবার লেনদেনের শুরুতেও শেয়ারবাজারে সূচকের তীর উপরে উঠতে থাকে। ডিএসইতে শুরুতেই লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ে, যা দিনের শেষ পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। ফলে বড় ধরনের উত্থান হয় মূল্য সূচকের। সেই সঙ্গে বাড়ে লেনদেনের গতি। দিনভর ডিএসইতে ৭৩০ কোটি ৫৭ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়। এর মাধ্যমে ২০১৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারির পর বাজারটিতে সর্বোচ্চ লেনদেন হলো। গত বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি ডিএসইতে ৮৯১ কোটি ৬৭ লাখ টাকার লেনদেন হয়। এরপর বাজারটিতে আর আটশ’ কোটি টাকার লেনদেন হয়নি। অপরদিকে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক আগের দিনের তুলনায় ৮৩ পয়েন্ট বেড়ে ৪ হাজার ৫৬৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই-৩০ সূচক ২০ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৫৩৬ পয়েন্টে উঠে এসেছে। ডিএসইর শরিয়াহ সূচক ১৫ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৪৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। সূচক এমন হু হু করে বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রায় সবকটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দামও বাড়তে থাকে। এতে দফায় দফায় দাম বাড়িয়েও বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ অনেক কোম্পানির শেয়ার কিনতে পারেনি। দিন শেষে ডিএসইতে মোট ২৫৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দর বেড়েছে। এর মধ্যে দাম বাড়ার সীমার সর্বোচ্চ পর্যায়ে চলে যায় তিনটি কোম্পানি। এছাড়া আরও অর্ধশত প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার সর্বোচ্চ পর্যায়ের কাছাকাছি চলে আসে। অন্যদিকে ৬৫টি প্রতিষ্ঠান দরপতনের তালিকায় নাম লিখিয়েছে। ৩২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এদিন এক শতাংশের ওপর দাম বেড়ছে ২৩৪টির। এর মধ্যে ১৮৩টির দাম বেড়েছে ২ শতাংশের ওপর। ৪ শতাংশের ওপর দাম বাড়ার তালিকায় রয়েছে ৯৫টি। ৫ শতাংশের ওপর দাম বাড়ার তালিকায় রয়েছে ৬৪টি। ৩৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে ৬ শতাংশের ওপরে। ৯ শতাংশের ওপর দাম বেড়েছে ১৭টির। এদিকে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের দাম বাড়ায় বড় অঙ্কের বাজার মূলধন ফিরে পেয়েছে ডিএসই। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৪৭ হাজার ৬৬ কোটি টাকা, যা আগের দিন ছিল ৩ লাখ ৪২ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। অর্থাৎ একদিনে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার ও ইউনিটের মূল্য বেড়েছে ৪ হাজার ৯১৬ কোটি টাকা। অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক মূল্য সূচক সিএএসপিআই ২৬৯ পয়েন্ট বেড়ে ১৩ হাজার ৯০৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৭৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। লেনদেনে অংশ নেয়া ২৬০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৯৪টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৪২টির এবং ২৪টির দাম অপরিবর্তিত ছিল।
×