ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

চামড়ার বিকল্প বাজার খুঁজছে সরকার

প্রকাশিত: ০৭:৪৬, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২০

চামড়ার বিকল্প বাজার খুঁজছে সরকার

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ চীনের নভেল করোনাভাইরাসের প্রভাবে বাংলাদেশের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানি হোঁচট খেয়েছে। এজন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বিকল্প বাজার খোঁজার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। বুধবার মতিঝিলে শিল্প মন্ত্রণালয়ে চামড়া শিল্পখাতের উন্নয়নে সুপারিশ প্রদান ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন সম্পর্কিত টাস্ক ফোর্সের সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বৈঠকে শিল্পমন্ত্রী ছাড়াও বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, বন ও পরিবেশ মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন, শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদারসহ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও বিভিন্ন ব্যবসায়ী নেতারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে শিল্পমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাসের ফলে চীনের বাজারে বাংলাদেশি চামড়াজাত পণ্যের রফতানি হোঁচট খেয়েছে। এখন বিকল্প বাজার সন্ধানে আলোচনা হয়েছে। এছাড়া আসন্ন ঈদুল আজহার সময় কোরবানির পশুর চামড়া কেনার জন্য নির্বিঘ্নে ব্যাংক লোনের অর্থসংস্থান নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, চামড়া আমাদের জাতীয় সম্পদ। এ সম্পদের সুরক্ষা এবং এর সর্বোচ্চ বেনিফিট নেয়া আমাদের দায়িত্ব। আমরা কোনোভাবেই গত কোরবানির ঈদের মত আর কখনও এ সম্পদ নষ্ট হতে দেব না। আজকের সভায় এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে এবং সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আগামী কোরবানির ঈদে চামড়া নিয়ে কোনো অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে কাঁচা চামড়া রফতানির সুযোগ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। তিনি বলেন, ‘প্রয়োজনে ওয়েট-ব্লু চামড়া রফতানি হবে। এর জন্য সরকার রফতানি নীতি সংশোধন করবে।’ শিল্পমন্ত্রী বলেন, চামড়া আমাদের জাতীয় সম্পদ। এ সম্পদের সুরক্ষা এবং এর সর্বোচ্চ বেনিফিট নেওয়া আমাদের দায়িত্ব। আমরা কোনভাবেই গত কোরবানির ঈদের মতো আরও কখনো এ সম্পদ নষ্ট হতে দেব না। মন্ত্রী বলেন, প্রয়োজনে ওয়েটব্লু চামড়া রফতানি হবে। এর জন্য সরকার রফতানি নীতি সংশোধন করবে। সার ডিলারদের মাধ্যমে প্রতি উপজেলা পর্যায়ে ন্যূনতম দুজন ডিলারকে চামড়া সংরক্ষণ ও বিপণনের জন্য নিয়োগ দেওয়া হবে। তার একইসঙ্গে সার ও চামড়াজাত পণ্য বিক্রি করবে। এজন্য তাদেরকে প্রণোদানা দেওয়া হবে। গুদামে তিন মাস চামড়া সংরক্ষণের বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, যদি প্রয়োজন হয় তাহলে আমরা গুদামে চামড়া সংরক্ষণ করবো। প্রক্রিয়াটি কী হবে সে বিষয়ে কমিটি সিদ্ধান্ত নেবে। করোনাভাইরাসের প্রভাবে চামড়া খাতের ক্ষতি বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা এখনো ক্ষতিগ্রস্থ হইনি। এটা অনেক ক্ষেত্রে আমাদের জন্য ইতিবাচক হয়ে এসেছে। আমরা এখন নতুন বাজার খুঁজে পাবো। চীন থেকে যারা চামড়া নিত, আমরা এখন সেই বাজারে যেতে পারবো। পশ্চিমা বাজার এখন আমাদের জন্য উন্মুক্ত। সভায় সিদ্ধান্তের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, আসন্ন কোরবানির চামড়া যথাযথভাবে সংগ্রহ ও সংরক্ষণের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে শিল্প, বাণিজ্য, পরিবেশ ও বন, ধর্ম, তথ্য মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং চামড়া শিল্প সংশ্লিষ্টদের অংশগ্রহণে একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। এ কমিটি আগামী সাত কর্মদিবসের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে একটি সুপারিশ পেশ করবে। কোরবানির চামড়া কেনার জন্য ট্যানারি মালিকদের প্রয়োজনীয় অর্থসংস্থানে বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ লক্ষে গতবার অর্থছাড়ের ক্ষেত্রে যেসব দীর্ঘসূত্রতা ও সমস্যা দেখা দিয়েছিল, সেগুলো নিরসনের চেষ্টা করা হবে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় কোরবানির পশুর চামড়া সংরক্ষণের জন্য ট্যানারি মালিক, ফড়িয়া, মৌসুমী ও এমেচারদের হাতে-কলমে প্রশি¶ণের ব্যবস্থা করা হবে। স্থানীয় প্রশাসন, মসজিদের ইমাম, মাঠ পর্যায়ে ইসলামী ফাউন্ডেশন, আলেম-ওলামাসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করে এ প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। এ লক্ষে টেলিভিশনে টিভিসি, ইউটিউবসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও আপলোড করে প্রচার ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। চামড়া ব্যবসায়ী ও ট্যানারি মালিকরা যথাসময়ে কোরবানির চামড়া না কিনলে তা সংরক্ষণের জন্য সরকারি পর্যায়ে গুদামে ন্যূনতম তিন মাস সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রয়োজন হলে সাময়িকভাবে কাঁচা চামড়া রফতানির অনুমোদন দেয়া হবে। এর জন্য সরকারের রফতানি নীতি সংশোধন করার দরকার হলে, তা-ও করা হবে। প্রয়োজন হলে উপজেলা পর্যায়ে ন্যূনতম দুইজন ডিলারকে চামড়া সংরক্ষণ ও বিপণনের জন্য নিয়োগ দেয়া হবে। তারা চামড়া ও চামড়াজাতপণ্য বিক্রি করবে। এজন্য তাদের প্রয়োজনে প্রণোদনা দেয়া হবে।
×