ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

তরুণ টাইগারদের বিশ্বজয়

প্রকাশিত: ১১:৪১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২০

তরুণ টাইগারদের বিশ্বজয়

যদি টানাপোড়েন আর অনিশ্চয়তাই না থাকল , তবে সেই ক্রিকেটের সৌন্দর্যই কোথায়? পুরো একটি টিমকে ধসিয়ে দিতে প্রয়োজন হয় মাত্র ১০টি বল। আবার এক ওভারের ছয়টি বলে ৬ গুণীতক ৬ অর্থাৎ ৩৬টি রানও হতে পারে। এক ওভারে ছয়টি বলই থাকে। কিন্তু বোলার যদি নো বল আর ওয়াইড দেন তবে ওভারটি দীর্ঘায়িত হতে পারে। ক্রিকেটে এসব মজার পাশে আবার থাকে জটিল হিসাব-নিকাশ। ডিএল বা ডার্ক লুইস পদ্ধতি তেমনই এক হিসাব। বৃষ্টি এসে খেলা পণ্ড করে দিলে জয়-পরাজয় নির্ধারণে এই জটিল অঙ্ক কষতে বসে যায় কর্তৃপক্ষ। আম্পায়ারের কাজ কেবল ঘোষণা দেয়া। অনুর্ধ-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশের নবীন টাইগাররা যখন জয়ের দ্বারপ্রান্তে, তখনই বেরসিক বৃষ্টি এসে খেলায় অপ্রত্যাশিত বিরতি ঘটিয়ে দেয়। ফলে ডার্ক লুইস পদ্ধতির হিসাবটি সামনে চলে আসে। বৃষ্টি আইনে বাংলাদেশ টিমকে জিততে যে টার্গেট বেঁধে দেয়া হয় তা শেষধাপে অনায়াসে টপকে যায় তারা। জিতে যায় তরুণ টাইগাররা। এই জয়ের মাহাত্ম্য বিরাট। রীতিমতো চ্যাম্পিয়ন হওয়া বিশ্বকাপ ক্রিকেটে। বাংলাদেশের জন্য এক অভূতপূর্ব ইতিহাস রচনা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ জিতল বাংলাদেশ। বড়রা নয়, সেরা ট্রফি জিতল ‘ছোট’রা। এটি দেশের প্রতিটি মানুষকেই আনন্দে ভাসিয়ে নেবে, দেবে পরম গৌরব তাতে কোন সন্দেহ নেই। সাকিব-মাশরাফি-মুস্তাফিজদের নিয়ে দেশের মানুষ অনেক স্বপ্ন দেখেছে। তার কিছু কিছু পূরণও হয়েছে। কিন্তু বিশ্বকাপে ফাইনাল পর্যন্ত যেতে পারেনি। আর সদ্য কৈশোর-উত্তীর্ণ আকবর, পারভেজ, শরিফুলদের লোকে তেমন করে চিনতই না, তারাই মেটাল অন্যরকম আকণ্ঠ পিপাসা। বাংলাদেশ হলো বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। স্বভাবতই সবাই আবেগাপ্লুত। তার প্রভাবও পড়েছে গণমাধ্যমে। ‘বিশ্বকাপ’ জয় হয়ে গেছে ‘বিশ্বজয়’। এতে দোষের কিছু নেই, আর কথাটি অসত্যও নয়। শাবাশ নবীন টাইগার দল। শাবাশ বাংলাদেশ। দক্ষিণ আফ্রিকার পচেফস্ট্রুমে ফাইনালে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ছিল শক্তিশালী ভারত, যারা বার বার এই অনুর্ধ-১৯ বিশ্বকাপে শিরোপা জিতেছে। প্রতিপক্ষ ছিল তাদের চোখে দুর্বল দল বাংলাদেশ। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে তারা বুঝে গেছে এই টিম কতখানি ভয়ঙ্কর। ৫০ ওভার পর্যন্ত পৌঁছুতে পারেনি ভারত। গুটিয়ে যায় ১৭৭ রানে। বাংলাদেশ দলের পক্ষে এই রান তাড়া করা তেমন কঠিন না হলেও অনিশ্চয়তার খেলা ক্রিকেটে অনাকাক্সিক্ষত ও অনভিপ্রেত অনেক কিছু ঘটে। তাই একের পর এক উইকেট পতন হলে এক পর্যায়ে জয়ের সম্ভাবনার পাল্লা ঝুঁকে যায় ভারতের দিকেই। এমনকি শেষদিকে ওভারের পর ওভার থাকে রানশূন্য। কিন্তু অধিনায়ক আকবরের অধিনায়কোচিত ফিনিশিংয়ের কারণে শেষ পর্যন্ত তারা জয়ের শিখরে পৌঁছতে পেরেছে। তবে গোটা টিমকেই দিতে হবে সাধুবাদ। এখন এটা প্রতিষ্ঠিত সত্য যে, বাংলাদেশের তরুণ-যুবারা পারে। অনুর্ধ-১৯ প্রতিযোগিতায় আগামীতেও যাতে আরও ভাল ফল করা যায় সেজন্য চাই সুপরিকল্পনা। সারাদেশ থেকেই প্রতিভাবান ক্রিকেটারদের নির্বাচন করে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। ভিতটা মজবুত হলে ভবিষ্যতও হবে সম্ভাবনাময়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই বিজয়কে মুজিববর্ষের সেরা উপহার হিসেবে অভিহিত করেছেন। দেশে ফিরে এলে তাদের দেয়া হবে বীরোচিত গণসংবর্ধনা। এটুকু তাদের অবশ্যই প্রাপ্য।
×