ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের নেপথ্যের সকল মাস্টারমাইন্ডদের মুখোশ উন্মোচন করতে তদন্ত কমিশন গঠন করুন

প্রকাশিত: ০৯:০০, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২০

বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের নেপথ্যের সকল মাস্টারমাইন্ডদের মুখোশ  উন্মোচন করতে তদন্ত কমিশন গঠন করুন

সংসদ রিপোর্টার ॥ রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী শেখ ফজলুল করিম সেলিম জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের নেপথ্যের মাস্টারমাইন্ডদের মুখোশ জাতির সামনে তুলে ধরতে অবিলম্বে একটি বিশেষ তদন্ত কমিশন গঠনের জন্য সরকারের কাছে দাবী জানান। তিনি বলেন, মুজিব বর্ষে নতুন প্রজন্মের সামনে ইতিহাসের নৃশংসতম ও জঘন্য হত্যাকান্ডের নেপথ্যের ষড়যন্ত্রকারীদের প্রকৃত চেহারা উম্মোচন করতে হবে। জীবিত অথবা বেঁচে থাকা যেই-ই হোক, বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের সঙ্গে কারা কারা জড়িত, নেপথ্যের ষড়যন্ত্রকারী কারা- তা একটি তদন্ত কমিশন গঠন করে জাতির সামনে তাদের মুখোশ উন্মোচন করুন। প্রথমে স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং পরে ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। আলোচনায় আরও অংশ নেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন, বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুন্সী, সরকারি দলের অসীম কুমার উকিল, মনোয়ার হোসেন চৌধুরী, নূর মোহাম্মদ, জয়া সেনগুপ্তা প্রমূখ। আলোচনায় অংশ নিয়ে সাবেক মন্ত্রী শেখ ফজলুল করিম সেলিম ভাষার আন্দোলন থেকে স্বাধীনতা অর্জন পর্যন্ত সুদীর্ঘ আন্দোলনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সাহসী নেতৃত্ব, অবদান ও অপরিসীম ত্যাগের কথা উল্লেখ করে বলেন, আমরা মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করতে যাচ্ছি। মুজিব মানেই বাংলাদেশ, মুজিব মানেই স্বাধীনতা। তাঁর জন্ম না হলে আমরা এখনও পাকিস্তানের গোলাম হয়ে থাকতাম। কিন্তু খুনী মুশতাক-জিয়া জাতির পিতাকে হত্যা করে একাত্তরের পরাজয়ের প্রতিশোধ নেয়। নিজেদের রক্ষা করার জন্য এরা ইনডেমনিটি আইন করে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পথ বন্ধ করে দেয়। বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত ও পাকিস্তানের ভাবধারায় দেশকে পরিচালনা করতে দীর্ঘ ২১টি বছর অনেক প্রচেষ্টা করা হয়। যে বাঙালি জাতির জন্য বঙ্গবন্ধু এতো কষ্ট করলো, সেই মীরজাফর-কুলাঙ্গার মুশতাক-জিয়ারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করলো। স্বাধীনতার পর জাসদের ভূমিকার সমালোচনা করে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু যখন যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ গড়ার কাজ শুরু করেন তখন থেকেই বিপ্লবীদের সঙ্গে অতি বিপ্লবীরাও (যারা এক সময় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ গ্রহন করেছিল) উচ্চ বিলাসীর কারণে তারা দেশে অরাজকতা-বিশৃংখলা শুরু করে। অতি বিপ্লবীরা স্বাধীনতার প্রতিবিপ্লবী সিরাজ শিকদারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বঙ্গবন্ধুকে উৎখাত করার চেষ্টা করে। স্বাধীনতার বিরুদ্ধে দেশ পুনর্গঠনে বাধা দেয়। কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বে গণবাহিনী গঠন করা হয়। ৮ জন এমপিকে হত্যা করা হয়, ব্যাংক লুট, পাটের গুদামে আগুণ দেয়া হয়। স্বাধীনতা বিরোধী একটি আর্ন্তজাতিক শক্তি যারা আমাদের বিজয়কে মেনে নিতে পারেনি, তারাও মরিয়া হয়ে উঠে। শেখ সেলিম বলেন, দেশীয় ষড়যন্ত্রকারীদের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পরাজিত শক্তির দোসর অনেক আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারীরাও জড়িত ছিল। বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের সময় সহযোগিতা চাওয়া হলে তৎকালীন সেনা প্রধান শফিউল্লাহ কোন পদক্ষেপ নেননি। বঙ্গবন্ধু নিজে ফোন করে শফিউল্লাহকে আর্মি পাঠাতে বলেছিলেন। ফোন করার পর আড়াই ঘন্টা সেনাপ্রধান শফিউল্লাহ কী করেছে? এ সময় কয়েকজন সেনাবাহিনী সদস্য মুভ করলেও ইতিহাস ভিন্ন হতো। বঙ্গবন্ধুৃ হত্যাকান্ডের সঙ্গে জিয়াউর রহমান জড়িত তা প্রমাণিত, খুনীরাও তা স্বীকার করেছে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের নেপথ্যের নায়কদের মুখোশ উন্মোচন করতে একটি তদন্ত কমিশন গঠনের দাবী জানিয়ে শেখ ফজলুল করিম সেলিম আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর খুনী মুশতাক ষড়যন্ত্রকারী জিয়াকে সেনা প্রধান করে। এই হত্যাকান্ডের সঙ্গে ওই সময়ের সিনিয়র সেনা অফিসারের পাশাপাশি অনেক সিভিল সার্ভিসের লোকও জড়িত ছিল। যে খাদ্য সচিব ষড়যন্ত্র করে দেশে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করে তাকেও জিয়া পদোন্নতি দেয়। কিছু খুনী ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারীরা এখনও চক্রান্ত করে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র-কানাডা মানবাধিকারের কথা বলে, কিন্তু বঙ্গবন্ধুসহ সপরিবারে হত্যাকারীকে আশ্রয় দেয়। যুক্তরাষ্ট্র পলাতক তারেক জিয়াকে ফেরত দিচ্ছে না। এটা কী ধরণের মানবতা? আমরা আর আপনাদের চোখ রাঙানিতে ভয় পাই না। বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের সঙ্গে কারা কারা জড়িত, তদন্ত কমিশন গঠন করে তাদের মুখোশ উন্মোচন করুন। মুজিব বর্ষে নতুন প্রজন্মের সামনে এই জঘন্য হত্যাকান্ডের ষড়যন্ত্রকারীদের প্রকৃত চেহারা উম্মোচন করার জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবী জানান। পররাষ্ট্র মন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথেই বাংলাদেশ সবদিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে দ্রুত গতিতে। তবে জনগণের ট্যাক্সের টাকার অধিকতর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহীতা নিশ্চিত করতে হবে। চলমান অভিযান অব্যাহত রাখলে অসৎ ব্যক্তি ও কালো টাকার মালিকরা রেহাই পাবে না। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তুলতে আমরা অর্থনৈতিক কূটনীতির ওপর জোর দিয়েছি। বঙ্গবন্ধুর নীতি- সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারোর সঙ্গে বৈরীতা নয়- এই ব্যালেন্স কূটনীতি নিয়ে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। মুজিব বর্ষ সারাবিশ্বে যথাযথ মর্যাদায় পালনের জন্য নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। ৬৪ দূতাবাসে বিভিন্ন এ্যাপস দিয়েছি, যাতে প্রবাসীরা ৩৪টি সুযোগ সুবিধা পায়। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সী বলেন, একাত্তরের পরাজিত স্বাধীনতাবিরোধী ও তাদের এদেশীয় দোসররা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে পরাজয়ের প্রতিশোধ নেয়। এটা শুধু ব্যক্তি বঙ্গবন্ধুকে হত্যা নয়, এ হত্যার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, স্বাধীন বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে থমকে দিয়ে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চেয়েছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধুরই কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পরাজিত দেশটি (পাকিস্তান) থেকে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন সব সূচকে। পেঁয়াজ সঙ্কট বিষয়ে তিনি বলেন, নিজ দেশে উৎপাদন ঘাটতি হওয়ায় হঠাৎ করেই ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। এতে সঙ্কট সৃষ্টি হয়। আমরা দ্রুত পেঁয়াজ আমদানী করে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করি। এবার যে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, এ বছর অন্তত ২০ ভাগ বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন করতে পারবো। আওয়ামী লীগের সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক ও ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি অসীম কুমার উকিল বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুর্নীতি-সন্ত্রাস-জঙ্গীবিরোধী জিরোটলারেন্স নীতি সারাবিশ্বে সন্ত্রাসবাদ দমনের রোলমডেলে পরিণত হয়েছে। অতীত সরকার প্রধানরা ক্ষমতায় থেকে নিজেদের ভাগ্য গড়েছেন, তাঁদের দুর্নীতি সারাবিশ্বে প্রমাণিত। কিন্তু ব্যতিক্রম বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা। চার চারবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনাকে সামান্যতম কোন দুর্নীতি স্পর্শ করতে পারেনি, বরং তাঁর অক্লান্ত কর্মযজ্ঞের কারণে দেশের কোন গ্রামে কবি আর কোন খড়ের ঘর খুঁজে পান না। পুলিশের সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ বলেন, বাংলাদেশের আলোচিত ও সমালোচিত প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পুলিশ বাহিনী একটি। অর্থনৈতিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত হচ্ছে স্থিতিশীল আইন-শৃঙ্খলা। নিয়োগ, পদোন্নতি, পদায়নে পেশাদারিত্ব ও স্বচ্ছতা আনতে হবে। তাহলেই পুলিশ বাহিনী জনগণের বিশ্বাস ও আস্থার প্রতীক হয়ে উঠবে। জনগণের পুলিশ হবে।
×