ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মোটরসাইকেল গ্যাংয়ের আড়ালে ইয়াবা পাচার !

প্রকাশিত: ০৫:০৯, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২০

মোটরসাইকেল গ্যাংয়ের আড়ালে ইয়াবা পাচার !

নিজস্ব সংবাদদাতা, পটিয়া, চট্টগ্রাম ॥ মোটরসাইকেল গ্যাংয়ের আড়ালে দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার আরকান মহা সড়ক হয়ে ইয়াবা পাচার হচ্ছে বলে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। সংঘবদ্ধ একটি চক্র প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে কক্সবাজার ও টেকনাফ থেকে কমদামে ইয়াবা কিনে তা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রী করে যাচ্ছে। এমন তথ্য দিয়েছেন চট্টগ্রামের পটিয়া থানায় গ্রেফতার হওয়া ৪ ইয়াবা ব্যবসায়ী। কোটি টাকার ইয়াবা, বৈদেশিক মুদ্রা, দেশীয় অর্থ ও মোটরসাইকেলসহ গ্রেফতার হওয়া ৪জনকে রবিবার বিকেলে পটিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট বিশ্বশ্বর হিংহের আদালতে নেওয়া হলে বিচারক তাদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন। ইয়াবা ব্যবসায়ীরা হলেন- নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানাধীন আবদুল মান্নানের পুত্র মো. মোজাম্মেল হক (৩০), চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই উপজেলার শেখ তোলা গ্রামের মো. শাহজাহানের পুত্র মো. নুর নবী (২৪), চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপ উপজেলার মো. হুমায়ন কবিরের পুত্র মো. হাসমত কবির শাকিল (২১), নোয়াখালী জেলার শিংবাহুয়া গ্রামের ইব্রাহিম খলিলের পুত্র জাহেদুল ইসলাম রাতুল (২২)। তাদের মধ্যে মোজাম্মেল ও শাকিলের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ইতোপূর্বে বিভিন্ন থানায় মামলাও রয়েছে। পুলিশ ও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, একটি সংঘবদ্ধ চক্র বেশ কিছুদিন ধরে মোটরসাইকেল লং ড্রাইভিং এর আড়ালে কক্সবাজার ও টেকনাফ থেকে ইয়াবা পাচার করে যাচ্ছে। তারা লং ড্রাইভে ব্যবহার করছে বিশেষ ধরনের হলুদ পোষাক। যার কারণে এতদিন ধরে পুলিশ প্রশাসন তাদের নজরে রাখেনি। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার আরকান সড়ক পটিয়া উপজেলা শহর হয়ে যাওয়ার কারণে বিভিন্ন ধরনের পরিবহন কক্সবাজার ও টেকনাফ যাচ্ছে। পুলিশ প্রশাসন, র‌্যাব, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর ইয়াবা পাচারকারীদের মাঝেমধ্যে গ্রেফতার করলেও মোটরসাইকেল গ্যাংরা ছিল ধরাছোঁয়ার বাইরে। ফলে তারা প্রায় সময় মোটরসাইকেল এর বহর নিয়ে কক্সবাজার যেত। ১-২ দিন পর পুনরায় মোটরসাইকেল নিয়ে তারা কক্সবাজার থেকে গন্তব্যে চলে যেতেন। গত শনিবার বিকেলে মোটরসাইকেল গ্যাংদের একটি বহর ইয়াবা নিয়ে চট্টগ্রাম শহরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর ও পটিয়া থানার উপ-পরিদর্শক মোবারক হোসেনের নেতৃত্বে পটিয়া থানা পুলিশের একটি টিম মোটরসাইকেল গ্যাংয়ের ৪জনকে গ্রেফতার করেন। এসময় তাদের কাছ থেকে ৪০ হাজার পিচ ইয়াবা, বৈদেশিক মুদ্রা, দেশীয় অর্থ, মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। মোটরসাইকেল গ্যাংদের চট্টগ্রাম জেলার বাড়ৈয়াহাট এলকার মো. ইসমাল (২৭), মিরসরাই উপজেলার সামশুল আলমের পুত্র নরশেদ আলম রনি (২১) ও কক্সবাজার জেলার ফরিদ (২৩) পালিয়ে গেছে। এর আগে পটিয়া থানার ভেনটিলেটর দিয়ে পালিয়েছে মোছাম্মৎ লাইজু নামের এক নারী ইয়াবা পাচারকারী। ইয়াবা পাচারকারীদের আতংক মোবারক : ইয়াবা পাচারকারীদের আতংক হয়ে দাঁড়িয়েছে পটিয়া থানার উপ-পরিদর্শক মোবারক হোসেন। বিভিন্ন সময় কক্সবাজার রুটের বিভিন্ন পরিবহন থেকে পৃথক পৃথকভাবে ইয়াবা উদ্ধার করেছেন। পটিয়া থানায় একাধিক ইয়াবা মামলা রুজু করেছেন। মূলত মোবারকের বাড়ি কক্সবাজার জেলায়। সুনির্দিষ্ট কিছু সোর্স থাকায় ইয়াবা পাচারকারীদের তথ্য খুব সহজে পেয়ে যাচ্ছেন। পটিয়া থানা থেকে পালিয়ে যাওয়া নারী ইয়াবা পাচারকারী লাইজুকেও ১হাজার ৯শ পিচসহ সে গ্রেফতার করেছিল। কিন্তু একদিন পর পুলিশের দায়িত্ব অবহেলার কারণে ওই মহিলা থানা থেকেই পালিয়ে যায়। অবশ্যই এই ঘটনায় পুলিশের তিন সদস্যকে ক্লোড করা হয়। পটিয়া থানার ওসি বোরহান উদ্দিন জানিয়েছেন, ৪০ হাজার পিচ ইয়াবাসহ গ্রেফতার হওয়া আসামীদের বিরুদ্ধে পৃথক দুইটি মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। তার মধ্যে একটি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ও বিদেশী মুদ্রা রাখার অপরাধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা হয়েছে। আসামীরা পুলিশকে চাঞ্চল্যকর বেশকিছু তথ্য দিয়েছেন। মোটরসাইকেলের লং ড্রাইভের আড়ালে তারা কক্সবাজার থেকে ইয়াবা নিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাচার করেন।
×