ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

অতীত কৃতকর্মের জন্য জাতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করার দাবী বিএনপির

প্রকাশিত: ১০:০০, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০

অতীত কৃতকর্মের জন্য জাতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করার দাবী বিএনপির

সংসদ রিপোর্টার ॥ রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারি দলের মন্ত্রী-এমপিরা বলেছেন, রাজাকার-আলবদর-অগ্নিসন্ত্রাসী বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে ঢাকাবাসী দুই সিটি করপোরেশনে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে রায় দিয়েছেন। জনগণের রায়ের বিরুদ্ধে বিএনপি হরতাল ডেকে আবারও প্রমাণ করেছে তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। বিএনপি যদি অতীত কৃতকর্মের জন্য জনগণের কাছে করজোড়ে ক্ষমা প্রার্থনা করে, জামায়াত-শিবির-আলবদর-রাজাকারদের সঙ্গ ত্যাগ করে বঙ্গবন্ধুকে স্বীকার করে ইতিবাচক রাজনীতির পথে আসে, তবে জনগণ ভেবে দেখবে তাদের (বিএনপি) ক্ষমা করা যায় কি না। প্রথমে স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং পরে ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে সোমবার রাতে জাতীয় সংসদ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তাঁরা এসব কথা বলেন। আলোচনায় অংশ নেন আওয়ামী লীগ সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, সরকারি দলের কে এম রহমতুল্লাহ, সাইমুন সরওয়ার কমল, শবনম জাহান, অপারিজিতা হক, ওয়ার্কার্স পার্টির মোস্তফা লুৎফুল্লাহ, বেগম মনিরা সুলতানা, মো. আক্তারুজ্জামান, হাফেজ রুহুল আমিন মাদানী, নাহিদ ইজহার খান, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ প্রমূখ। আলোচনায় অংশ নিয়ে সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, রাজাকার-আলবদর-অগ্নিসন্ত্রাসী বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে ঢাকাবাসী দুই সিটি করপোরেশনে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রায় দিয়েছেন। জনগণের রায়ের বিরুদ্ধে বিএনপি হরতাল ডেকে আবারও প্রমাণ করেছে তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। ইতিহাস থেকে বিএনপি শিক্ষা নেয়নি। বিএনপির প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, যত সন্ত্রাস, অগ্নিসন্ত্রাস, মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছেন তার জন্য জাতির কাছে কড়জোড়ে ক্ষমা চান। প্রতিজ্ঞা করুন আর কোনদিন এসব অপকর্ম করবেন না। জামায়াত-রাজাকার-আলবদরদের সঙ্গ ছাড়–ন- বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতা হিসেবে স্বীকার করুন। বলিষ্ঠ কন্ঠে উচ্চারণ করুন জয়বাংলা ধ্বনি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করুন। এসবের পর বাঙালি জাতি হিসাব করে দেখবে আপনাদেরকে (বিএনপি) ক্ষমা করা যায় কি না। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, জনগণ বিএনপিকে কেন ভোট দেবে? ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত সারাদেশে বিএনপি-জামায়াত যে গণহত্যা চালিয়েছে, আগুণ দিয়ে পুড়িয়ে শত শত মানুষকে হত্যা করেছে- এটা কী ঢাকাবাসীসহ দেশের মানুষ ভুলে গেছে? তাদের আমলে সারাদেশে সিরিজ বোমা হামলা, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার কথাও ভুলে যাবে না। মিথ্যার জন্য নোবেল পুরস্কার পেতে পারে খালেদা জিয়াসহ বিএনপির নেতারা। সত্য অবশ্যই সূর্যের আলোর মতো উদ্ভাসিত হয়। উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত ও জাতিকে ভিক্ষুকের জাতিতে পরিণত করতে বিএনপি-জামায়াত সরকারকে উৎখাত করতে যে ভয়াল নাশকতা চালিয়েছে, জাতি কোনদিন তা ভুলে যাবে না। খালেদা জিয়া বিজয়ের বেশে নয়, পরাজিত হয়েই তাঁকে ঘরে ফিরে যেতে হয়েছে। তিনি জয় বাংলা স্লোগানকে জাতীয় স্লোগাণ হিসেবে ঘোষণার দাবী জানান। তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ একাত্তরের পরাজিত দেশ পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশের সব সূচকে এগিয়ে যাওয়ার বাস্তব চিত্র তুলে ধরে বলেন, পৃথিবীকে অবাক করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলার দ্বারপ্রান্তে। সকল সূচকে পাকিস্তানকে পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ। পাকিস্তানের মানুষ আজ বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়া দেখে আক্ষেপ করেন, পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট পর্যন্ত স্বীকার করেন বাংলাদেশের অভূতপূর্ব অগ্রগতির কথা। শুধু পাকিস্তানকে অতিক্রম করিনি, সামাজিক সূচক, স্যানিটেশন, গড় আয়ুসহ অনেক ক্ষেত্রে ভারতকেও পেছনে ফেলে এগিয়ে গেছি। আইসিটি ক্ষেত্রে বিপ্লব খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট পর্যন্ত স্বীকার করে বক্তব্য রেখেছেন। তিনি বলেন, দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচন ছিল চমৎকার, কোন সংঘর্ষ বা লোকক্ষয় হয়নি। যেকোন বিচারে উপমহাদেশের বিচারে অত্যন্ত ভালো ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও ২৪-২৮ শতাংশ ভোট পড়ে। বিএনপির নেতিবাচক প্রচারণা, হাঙ্গামার উস্কানীর কারণে ভোট কিছুটা কম পড়েছে। বিএনপির ভয়াল অগ্নিসন্ত্রাস, স্কুল পুড়িয়ে দেয়া, প্রিসাইডিং অফিসারকে হত্যা এবং সবশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির নির্বাচনী বাণিজ্যের কারণে যদি মানুষ ভোটে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে, এর জন্যও বিএনপিই দায়ী। তিনি বলেন, দেশের শতকরা ৯৫ ভাগ মানুষ বিদ্যুত সুবিধার আওতায় এসেছে, মুজিববর্ষে শতভাগ মানুষ বিদ্যুত পাবে। আমরা ক্ষুধাকে জয় করেছি, দারিদ্র্যকেও জয় করার দ্বারপ্রান্তে। গত ১১ বছরে শুধু দেশের নয়, প্রতিটি মানুষের উন্নয়ন হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শুধু আগামী নির্বাচনের কথা ভাবেন না, আগামী প্রজন্মের জন্য একটি সমৃদ্ধ দেশ গড়ার কথা ভেবেই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ মুজিববর্ষে গ্রামে-গঞ্জের রাস্তাঘাট, পুল-কালভার্ট মুক্তিযোদ্ধাদের নামে নামকরণের দাবী জানিয়ে বলেন, দেশের উন্নয়নের মহাকাব্য রাষ্ট্রপতি তাঁর বক্তব্যে তুলে ধরেছেন। সর্বত্র উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। টানা ১৫ বছর একটি সরকার ক্ষমতায় আছে বলেই পদ্মা সেতু, মেট্টোরেলসহ বড় বড় উন্নয়ন করতে পারছেন। এই উন্নয়নের পেছনে জাতীয় পার্টির একটা বিরাট অবদান রয়েছে। অথচ ৯ বছরে এরশাদ সরকার একদিনও শান্তিতে দেশ চালাতে পারেনি। গণতন্ত্রের কথা বলে ক্ষমতায় এসে বিএনপি ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামল চালিয়ে হত্যাযজ্ঞ চালালো, আন্দোলনের নামে অগ্নিসন্ত্রাস করে শত শত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করা হলো। এটাই ছিল গণতন্ত্রের নমুনা! এসব হত্যাযজ্ঞ কোন সংজ্ঞায় আছে? জ্বালাও-পোড়াও ও নির্বাচন বর্জনের রাজনীতিতে জাতীয় পার্টি বিশ্বাস করে না। ২০১৪ সালে জাতীয় পার্টি নির্বাচনে না আসলে নির্বাচন হতো না, গণতন্ত্র ধ্বংস হতো, এতো উন্নয়ন হতো না। আজ যথেচ্ছ ব্যাংক ডাকাতি হচ্ছে, হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণখেলাপীরা বিদেশ পাচার করছে। সুপ্রীম কোর্টের অবসারপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিশন গঠন করে এসব ঋণখেরাপীদের মুখোশ উন্মোচন করার দাবী জানান তিনি। মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ’৭৫ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত জিয়া-এরশাদ-খালেদা জিয়ারা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে মিথ্যাচার করেছে, ইতিহাস বিকৃত করেছে। কিন্তু মিথ্যা দিয়ে সত্যকে কোনদিন ঢাকা যায় না। বাঙালি জাতি আজ স্বাধীন দেশে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী পালনের গৌরব অর্জন করেছে। তিনি বলেন, অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। হাজারো বাঁধা মোকাবেলা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে নিয়ে যাচ্ছেন হিমালয়সম উচ্চতায়, উন্নতির শিখড়ে। অল্পদিনের মধ্যে সারাবিশ্বের সামনে বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত করেছেন, দেশকে মর্যাদার আমনে বসিয়েছেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অসত্য হয়েছে পরাজয়, সর্বত্র প্রতিষ্ঠিত হয়ে সত্য ইতিহাস। ওয়ার্কার্স পার্টির মোস্তফা লুৎফুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশে কোন পণ্যের দাম বাড়লে তা আর কমতে চায় না। দাম বৃদ্ধি কারণে জনগণ আজ ভোগান্তির শিকার। সরকার ব্যাংকখাতকে সম্পূর্ণ বিপথে চালিত করছে। সংঘবদ্ধচক্র সুকৌশলে ব্যাংকের টাকা লুট করে নিয়ে যাচ্ছে, বিদেশে পাচার করছে। এসব হচ্ছে ব্যাংক মালিক, পরিচালক এবং সংঘবদ্ধ চক্রের মাধ্যমে। এদের বিচার করতে হবে। ধর্ষণ আজ মহাতঙ্কে রূপ নিয়েছে। ধর্ষকদের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে। সীমান্তে হত্যা জনমনে ভারত বিদ্বেষীর সৃষ্টি করছে। দুর্নীতিও মহামারি আকার রূপ নিয়েছে। হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, সারাদেশে মহা উন্নয়ন যজ্ঞ চলছে। কিন্তু যেসব দুষ্ট ঠিকাদার উন্নয়ন প্রকল্পের মান নিম্মমানের করে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছে তাদের একটি কালো তালিকা তৈরি করে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া উচিত। বাংলাদেশকে পাঁচবার দুর্নীতিতে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন করার মহানায়ক বিএনপির খালেদা জিয়ার ও তার কুলাঙ্গার পুত্র দুর্নীতিবাজ তারেক রহমান। আর জিয়ার হাতে লেগে আছে জাতির পিতার রক্তের দাগ, আর তারেক রহমান আওয়ামী লীগকে শেষ করে দিতে চালিয়েছে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা।
×