ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

‘জন্মগতভাবেই বিএনপি নির্বাচনকে ভয় পায়’

প্রকাশিত: ০৮:৪১, ২৯ জানুয়ারি ২০২০

‘জন্মগতভাবেই বিএনপি নির্বাচনকে ভয় পায়’

সংসদ রিপোর্টার ॥ রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারি দলের মন্ত্রী-এমপিরা বলেছেন, অবৈধভাবে সামরিক স্বৈরাচারের হাতে জন্ম নেওয়া বিএনপি জন্মগতভাবেই নির্বাচনকে ভয় পায়, নির্বাচন দেখলেই তাদের গায়ে জ্বর আসে। সিটি নির্বাচন নিয়েও তারা নানা ষড়যন্ত্র করছে। খোদ বিএনপির ভোটাররাও দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছে যে, বিএনপি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকবে, নাকি অতীতের মতো নির্বাচনের সকালে মিথ্যা অভিযোগ তুলে মাঠ ছেড়ে পালাবে। বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের নেতারাই বলেন যে, বিএনপি হচ্ছে রাজাকারদের দল, চোর-বাটপারে ভরে গেছে। বিএনপি কোন রাজনৈতিক দল নয়, দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত মা-ছেলের সমিতি। প্রথমে স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং পরে ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে বুধবার রাতে জাতীয় সংসদ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তাঁরা এসব কথা বলেন। আলোচনায় অংশ নেন সাবেক ডেপুটি স্পীকার অধ্যাপক আলী আশরাফ, জলবায়ু বিষয়ক উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহার, সরকারি দলের আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরী, জিল্লুল হাকিম, নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন, মেহের আফরোজ চুমকি, মমতাজ বেগম, হাবিবা রহমান খান, আলী আজম, উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম, গাজী মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ, জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম প্রমূখ। আলোচনায় অংশ নিয়ে সাবেক ডেপুটি স্পীকার অধ্যাপক আলী আশরাফ বলেন, জাতির জনকের সারা জীবনের সংগ্রাম ছিলো এই জাতির জন্য। তাঁর জন্ম না হলে বাংলাদেশ সৃষ্টি হতো না। বঙ্গবন্ধুর মতো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে নিবিড়ভাবে মিশেছেন। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশকে সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তোলা। সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে এই দেশ পৃথিবীর উন্নত দেশের কাতারে দাঁড়াবে খুব শীঘ্রই। এরইমধ্যে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি, শিল্পায়নের অনেক উন্নতি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে যেভাবে দেশ চলছে তাতে আমরা খুব দ্রুত উন্নতির দিকে এগিয়ে যাব এ নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম বলেন, রাষ্ট্রপতি ১৬৩ পৃষ্ঠার ভাষণ দিয়েছেন। তিনি যে ভাষণ দিয়েছেন মনে হয় তার অনেকাংশই উনি (রাষ্ট্রপতি) বিশ্বাস করেন না। দেশের কর জিডিপির হার অত্যন্ত লজ্জাজনক ও উদ্বেগজনক। বিপুল সংখ্যেক ধনীর কাছ থেকে আয়কর গ্রহণ না করাই এর অন্যতম কারণ। রাজনৈতিক সদিচ্ছার কারণে সরকার আয় কর প্রদানে যোগ্য বিপুল সংখ্যেক মানুষের কাছে যাচ্ছে না, যেতে পারছে না। দেশে অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ করতে পারলে জিডিপি বহুলাংশে বৃদ্ধি পেত। টাকা এতোই সঙ্কটের সৃষ্টি হয়েছে, সরকার খুঁজে বেড়াচ্ছে কোথায় টাকা আছে। ব্যাংকগুলোকে পরিবারতন্ত্র করা হয়েছে। ব্যাংকিং সেক্টর আজ প্রায় ধ্বংসের মুখোমুখি। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একক ক্যারিশমায় দেশ আজ অনেক এগিয়ে যাচ্ছে। উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার বলেন, বাংলাদেশ দ্রুত গতিতে উন্নয়নের মহাসড়ক দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। তলাবিহীন ঝুড়ি যে দেশটিকে বলা হতো, সেই বাংলাদেশ এখন সারাবিশ্বের সামনে উন্নয়নের রোল মডেল। ঢাকা শহরে বাষু দুষণের অন্যতম কারণ হচ্ছে উন্নয়নের কারণে। যানবাহনও বাষু দুষণ করছে, নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। সবাই যদি সচেষ্ট থাকে, তবে বায়ু ও পরিবেশ দূষণমুক্ত করা সম্ভব হবে। সরকারি দলের আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরী বিএনপির সংসদ সদস্যদের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, এমপি হিসেবে সকল সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছেন, ট্যাক্স ফ্রি গাড়ি নিচ্ছেন, প্লটের জন্য আবেদন করছেন- আবার নির্লজ্জের মতো নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। বিএনপির এক চেয়ারপার্সন (খালেদা জিয়া) এতিমের টাকা আত্মসাত করে কারাগারে। আরেকজন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন দুর্নীতি ও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে লন্ডনে পলাতক থেকে ষড়যন্ত্র করছে। এমন ব্যক্তিদের নেতৃত্ব মেনে যারা সংসদে কথা বলেন, তাদের নীতি-নৈতিকতা কিছু আছে বলে মনে হয় না। নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন বলেন, বিএনপি জন্মগতভাবেই নির্বাচনকে ভয় পায়। নির্বাচন আসলেই তাদের গায়ে জ্বর আসে। কারণ দলটির জন্মই হয়েছে অবৈধ ক্ষমতা দখলকারী সামরিক স্বৈরাচারের পকেট থেকে। সিটি করপোরেশনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে নিজেরা মারামারি করে সরকারি দলের ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করছে। বিএনপির ভোটাররাও দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছে, দলটি আদৌ শেষ পর্যন্ত নির্বাচন করবে কি না। সে কারণে তারা নির্বাচনে যায় না। সাবেক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সততা, দৃঢ়চেতা নেতৃত্ব, সাহসীকতা ও ক্লান্তি পরিশ্রমের কারণেই বাংলাদেশ আজ উন্নয়ন ও অগ্রগতির মহিসোপানে। দেশের গন্ডি পেরিয়ে তিনি এখন বিশ্ব নেতার কাতারে নিজেকে আসীন করেছেন। সারাবিশ্বে নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ একটি বিশেষ স্থান করে নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে লেখা একটি স্বরচিত গান পরিবেশন করে সরকার ও বিরোধী দলের সংস সদস্যদের চাঙ্গা করে তোলেন দেশের জনপ্রিয় কন্ঠশিল্পী ও সরকার দলীয় সংসদ সদস্য মমতাজ বেগম। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু জন্ম না হলে আমরা কেউ এমপি, শিল্পী কিছুই হতে পারতাম না। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশে গান-বাজনা বা সাংস্কৃতিক চর্চা প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। উদীচীসহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এমন কোন জায়গা নেই যেখানে বোমা হামলা করা হয়নি। কারণ শিল্পী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিরা অসাম্প্রদায়িক, ধর্মনিরপেক্ষতা ও মানুষের কথা বলে। এটাই তাদের প্রধান গাত্রদাহ ছিল। সরকারি দলের আলী আজম বলেন, কানাডার ফেডারেল কোর্ট বিএনপিকে সন্ত্রাসী দল হিসেবে ঘোষণা করেছে। বিএনপি এখন রাজাকারদের দল। বিএনপিতে চোর-বাটপারে ভরে গেছে। বিএনপি এখন কোন রাজনৈতিক দল নয়- এটা মা-ছেলের সমিতি। এসব কথা বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের নেতারাই বলেন।
×