ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

লালমনিরহাট হাসপাতালে সেই অজ্ঞাত নারীর খোঁজ পেলেন স্বামী ও সন্তান

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ২৯ জানুয়ারি ২০২০

লালমনিরহাট হাসপাতালে সেই অজ্ঞাত নারীর খোঁজ পেলেন স্বামী ও সন্তান

নিজস্ব সংবাদদাতা, লালমনিরহাট ॥ শেষ পর্যন্ত জনকন্ঠসহ পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলে লালমনিরহাট হাসপাতালে চর মাস ধরে ভর্তি থাকা সেই অন্তঃসত্ত্বা নারীর খোঁজে স্বামী ও দুই বছরের শিশুসন্তান হাসপাতালে ছুটে এসেছেন। নারীটির নাম রমিতা বেগম (২৪)। বগুড়ার শেরপুর উপজেলার পল্লী উন্নয়ন একাডেমী গ্রামের সুরুজ আলী বাদশার স্ত্রী। তার রতন মিয়া নামের দুই বছর বয়সের শিশু সন্তান রয়েছে । স্বামী ও শিশুসন্তানকে কাছে পেয়ে মানুষিক বিপর্যস্ত রমিতা বেগম দারুন খুশি। আজ বুধবার তাকে হাসপাতাল হতে ছাড়পত্র দিয়েছে। পরে থানা পুলিশ ও সমাজ সেবা দপ্তরের কিছু আনুষ্ঠিকতা শেষ করতে হয়। সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষে আজ বধুবার দুপুরের পর টাঙ্গাইলে স্বামী ও সন্তানদের সাথে ফিরে যান। সুরুজ আলী বাদশার জানান, তার স্ত্রী রমিতা বেগম। বগুড়া জেলার ধণুট উপজেলার সুরক গ্রামের মৃত অফের প্রামাণিকের মেয়ে। কিছুটা মানুষিক সমস্যা রয়েছে। ৫/৬ মাস আগে বাসে করে টাঙ্গাইল থেকে শেরপুর যাওয়ার সময় ভুলে লালমনিরহাট চলে আসেন। ৪ বছর আগে তার প্রথম স্ত্রীর মৃত্যু হলে দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে বাবা মা হারা এতিম রমিতা বেগমকে বিয়ে করেন। তাদের দাম্পত্য জীবনে দুই বছরের ছেলে রতন মিয়া আছে। নিখোঁজের সময় রমিতা বেগম দুই মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিল। তাদের বাড়ি বগুড়ায়। কিন্তু কাজের সুবাদে স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে টাঙ্গাইলে বসবাস করেন। স্বামী সুরুজ আলী বাদশা আরো জানান, ছোট বেলায় বাবা মা মারা গেলে দাদা জিল্লুর রহমানের কাছে বড় হন তার স্ত্রী। মৃত্যুর আগে রমিতার বাবার প্রায় ৩ একর জমি রেখে যান। জমির মালিক হতে বঞ্চিত করে চাচারা। চাচারা তাকে মানুষিক ভাবে নির্যাতন করে তাকে অসুস্থ করে তোলেন। পায়ে শিকল বেঁধে রাখেন। যাতে কোনদিনও সম্পদের মালিকানা দাবি করতে না পারে। বিয়ের পরে স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই স্ত্রীর চাচা আবুল কালামের নির্যাতনের শিকার হয়েছে বহুবার। এক রকম জীবন বাঁচাতে ও নির্যাতন হতে বাঁচতে স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে বাড়ি ছেড়ে টাঙ্গাইলে বসবাস শুরু করেন। দীর্ঘ ৬ মাস পরে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী রমিতাকে খুঁজে পেয়ে সংবাদমাধ্যম, সমাজ সেবা অধিদপ্তর ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন সুরুজ আলী। স্বামীকে কাছে পেয়ে বিড়বিড় করে নিজের ঠিকানা বলতে শুরু করেন রমিতা বেগম। একমাত্র সন্তানকে কোলে নিয়ে পরম যত্ন শুরু করেন। রমিতাও দাবি করেন সুরুজ আলী বাদশা তার স্বামী ও রতন মিয়া তার একমাত্র সন্তান। এখন স্বামীর সঙ্গে চলে যেতে বেশ আগ্রহ দেখাচ্ছে রমিতা। রমিতার স্বামী দাবি করেন, তাকে রংপুরসহ বিভিন্ন জায়গায় খুঁজেছেন। টাঙ্গাইল থানায় জিডি করতে গিয়ে ব্যর্থ হন। রমিতার ছবি না থাকায় থানা পুলিশ জিডি নেয়নি। সদর হাসপাতালের সমাজসেবা অফিসার এরশাদ আলী জানান, অজ্ঞাত রমিতার পরিচয় শনাক্তে মানবিকতার পরিচয় দিয়েছে দৈনিক জনকন্ঠসহ পত্র পত্রিকা গুলো। তাই তার পরিবারের কাছে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। রমিতাকে একটি নতুন পোশাক ও যাতায়াতের খরচ বহন করবে সমাজসেবা অধিদফতর। লালমনিরহাট সদর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজ আলম জানান, রমিতা বেগম ও তার স্বামীর পুরো ঠিকানার সঠিকতা যাচাইসহ জিডি মূলে কিছু আনুষ্ঠানিকতা শেষে স্বামীর কাছে রমিতাকে হস্তান্তর করা হয়েছে। উল্লেখ্য, ২৯ জানুয়ারি দৈনিক জনকন্ঠ পত্রিকায় কে এই অজ্ঞাত নারী ৪ মাস ধরে লালমনিরহাট হাসপাতালে ভর্তি শিরোনামে খরব প্রকাশ হয়ে ছিল।
×