নিজস্ব সংবাদদাতা, নওগাঁ ॥ শীতের শিশির ভেজা সকালে কুয়াশার চাদরে ঢাকা উত্তরের নওগাঁ জেলার দিগন্ত জুড়ে এখন হরুদের সমারোহ। জেলার বিস্তীর্ন মাঠের পর মাঠ যেন হলুদ বর্ণে ঘেরা এক সপ্নীল পৃথিবী। প্রান্তর জুড়ে উঁকি মারছে শীতের শিশির ভেজা সরিষা ফুলের দোল খাওয়া গাছগুলো। সরিষার সবুজ গাছের হলুদ ফুল শীতের সোনাঝরা রোদে যেন ঝিকিমিকি করছে। এ এক অপরুপ সৌন্দর্য। বসন্তের আগমনী বার্তা পেয়েই যেন প্রকৃতি কন্যা সেজেছে ‘গায়ে হলুদ বরণ সাজে’। চারপাশের মাঠ জুড়ে সরিষা ফুলের মৌ মৌ গন্ধে মুখরিত ফসলের মাঠ।
জেলার প্রতিটি মাঠে এখন শুধু সরিষা ফুলের হলুদ রঙের চোখ ধাঁধানো বর্ণিল সমারোহ। মৌমাছির গুনগুন শব্দে ফুলের রেণু থেকে মধু সংগ্রহ আর প্রজাপতির এক ফুল থেকে আরেক ফুলে পদার্পন এ অপরুপ প্রাকৃৃতিক দৃশ্য সত্যিই যেন মনোমুগ্ধকর এক মূহুর্ত। ভোরের বিন্দু বিন্দু শিশির আর সকালের মিষ্টি রোদ ছুঁয়ে যায় সেই ফুলগুলোকে।
গত ক’বছর ধরে সরিষা চাষে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ায় সরিষা চাষে ঝুঁকে পড়েছেন এ জেলার কৃষকরা। চলতি মৌসুমে এ অঞ্চলে সরিষার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এখন শুধু ভালো ফলনের আশায় জেলার কৃষকরা রাতদিন পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। কৃষকের পাশাপাশি বসে নেই কৃষি কর্মকর্তারাও।
এদিকে চলতি রবিশস্য মৌসুমে কোন প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ হানা না দেয়ায় এবং সরিষা চাষের পরিবেশ অনুকূলে থাকায় সরিষার পাশাপাশি আলু, গম ও ভুট্টার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। গ্রামীণ জনপদের কৃষকরা এই সরিষা যথা সময়ে ঘরে তুলতে পাড়লে এবং বিক্রিত মূল্য ভাল পেলে বিগত দিনের লোকসান পুষিয়ে আসন্ন বোরো ধান চাষে কৃষকদের আগ্রহ বৃদ্ধি পাবে বলে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা মনে করছেন।
জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলার ১১টি উপজেলার ৯৯টি ইউনিয়নে ৩৪হাজার ৩শ’ ৫৭ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। শুরুতেই সরিষা ক্ষেতে পোকা-মাকড়ের আনাগোনা দেখা দিলেও মাঠ পর্যায়ে সরিষা চাষিদেরকে কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে যথাযথ পরামর্শ ও প্রত্যক্ষ কারিগরী সহযোগিতার কারণে সরিষা ক্ষেত অনেকটা রোগ-বালাই মুক্ত হওয়ায় বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষকরা। যথা সময়ে সরকারী পর্যায় থেকে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মাঝে মান সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে সরিষার বীজসহ অন্যান্য কৃষি উপকরণ বিতরণ করা হলেও মাঠ পর্যায়ে বেশ কিছু জমি চাষের উপযুগী না হওয়ায় কিছু কৃষক ঠিক সময়ে সরিষা বপণ করতে পারেনি। ফলে তারা অন্যান্য রবিশস্য চাষের দিকে ঝুকেছেন। আগামী বোরো ধান উৎপাদনের প্রস্তুতি হিসেবে প্রান্তিক চাষিরা কিছুটা বাধ্য হয়েই অন্যের জমি বর্গা নিয়ে সরিষা, আলু, গম ও ভূট্টা চাষে অতি আগ্রহী হয়ে উঠেছে। জেলার আত্রাই, রানীনগর, পত্নীতলা, মান্দা ও নিয়ামতপুর উপজেরায় সবচেয়ে বেশি সরিষা চাষ হয়েছে বলে কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারন অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ সিরাজুল ইসলাম জানান, আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এবার সরিষার বাম্পার ফলন হবে ও কৃষক বাড়তি মুনাফা পাবে বলেও আশা করছি।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: