ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মুজিববর্ষ উদ্যাপনে গ্রহণকাল নাটকের উদ্বোধনী মঞ্চায়ন

প্রকাশিত: ১১:২০, ২৯ জানুয়ারি ২০২০

মুজিববর্ষ উদ্যাপনে গ্রহণকাল নাটকের উদ্বোধনী মঞ্চায়ন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আগামী ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মবার্ষিকী। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনে সরকারী-বেসরকারীভাবে নেয়া হয়েছে বছরব্যাপী বিশাল কর্মসূচী। তবে ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষের প্রাক উদযাপন পর্ব। মুজিববর্ষের সেই অগ্রিম উদ্্যাপনের ¯্রােতধারায় ঢাকার মঞ্চে যুক্ত হলো একটি নতুন নাটক। মুজিব আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে নাট্যদল ঢাকা নান্দনিক মঞ্চে এনেছে গ্রহণকাল শিরোনামের প্রযোজনা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বেইলি রোডের মহিলা সমিতির নিলীমা ইব্রাহীম মিলনায়তনে নাটকটির উদ্বোধনী মঞ্চায়ন হয়। সৈয়দ মহিদুর রহমানের রচনায় নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন সৈয়দ শুভ্র। নান্দনিকের ২৬তম প্রযোজনাটির উদ্বোধন ঘোষণা করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আশালতা বৈদ্য। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন নাট্যজন আতাউর রহমান। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল কামাল বায়েজিদ। সভাপতিত্ব করেন নান্দনিকের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আলীম খান সেলিম। উদ্বোধনী বক্তব্যে আশালতা বৈদ্য বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে নান্দনিকের এই নতুন নাটকটি আমাকে আপ্লুত করেছে। একইসঙ্গে স্মৃতিকাতর করে তুলেছে। অতীতের আয়না আমাকে পৌঁছে দিচ্ছে ১৯৭৩ সলে। যখন নাট্যচক্রের হয়ে শেখ কামালের বিপরীতে নবান্ন নামের নাটকে আমি নায়িকার চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম। সেই স্মৃতিটাকে মনে করিয়ে দেয়ার জন্য নান্দনিককে ধন্যবাদ জানাই। সেই সঙ্গে নাটকের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার উদ্যোগটি প্রশংসনীয়। রণাঙ্গনের একজন যোদ্ধা হিসেবে মিশে গেলাম মঞ্চযোদ্ধাদের সঙ্গে। বারবার দেখা হবে যুদ্ধ ক্ষেত্রে। আতাউর রহমান বলেন, রাজনীতি করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধুকে আলাদা করে ডিপ্লোমেসি শিখতে হয়নি। কারণ তিনি উঠে এসেছিলেন সাধারণ মানুষের ভেতর থেকেই। এই বাংলার শিকড় থেকেই তাঁর আবির্ভাব। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো একজন নেতা এসেছিলেন বাংলাদেশ অর্জন করেছে স্বাধীনতা। তারই স্বপ্নের পথ ধরে সমৃদ্ধির পানে এগিয়ে চলা আমাদের বর্তমানের এই অবস্থান। ক্রান্তিকাল ও প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে আমরা এগিয়ে যেতে তার স্বপ্নের পরিপূর্ণ বাস্তবায়নে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে মুছে দেয়ার চক্রান্ত এবং সেই ক্রান্তিকাল উত্তরণের প্রেক্ষাপটে এগিয়েছে নাটকের কাহিনী। খেতাবপ্রাপ্ত এখন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা কাজী শাহেদ আহাম্মেদ। যে তার দুরন্ত যৌবনে ভালবাসার মানুষকে রেখে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন যুদ্ধের ময়দানে। নেতার বজ্রকণ্ঠের উদাত্ত আহ্বান তাকে ডেকে নিয়েছিল রণাঙ্গনে। নেতার বজ্রকণ্ঠের ভাষণ সাত কোটি বাঙালীর মতো তাকেও অসীম সাহস জুগিয়েছিল। সেই তেজদীপ্ত সাহসিকতার লক্ষ্য ছিল একটাইÑ বাংলার মাটিতে লাল সবুজের পতাকা ওড়ানো। যুদ্ধের শেষ মুহূর্তে যুদ্ধাহত হয়ে একটি পা হারায় শাহেদ। কয়েক বছরের দীর্ঘ চিকিৎসার পর অবশিষ্ট একটি পা নিয়ে উঠে দাঁড়ায় সে। তখন দেখতে পায় পুরো দেশ যেন ন্যুব্জ-কুব্জ, অথর্ব হয়ে গেছে। আমৃত্যু সংগ্রাম করে যে মানুষটি একটি জাতির বুকে সাহস জুগিয়েছিল তাকেই হত্যা করেছে হায়েনারা। পুরো জাতিকে পরিণত করেছে মুশিক শাবকে। যেখানেই তাকায় সেখানেই যেন পশ্চাৎপদতার চিহ্ন। যে আদর্শের জন্য ৩০ লাখ প্রাণ অকাতরে বিলিয়ে দিল বাঙালী, তা যেন রাতারাতি উধাও হয়ে গেছে কতিপয় কুলাঙ্গারের চক্রান্তে। সর্বত্রই একাত্তরের পরাজিত শক্তির আস্ফালন। একটি পায়ের খ-িত জীবন নিয়ে শাহেদ হাতরে বেড়ায় তার যৌবনের সেই হারানো দিনগুলোকে। যে স্বপ্নভরা যৌবনে তার চোখে ভেসেছিল এক মানবিক দেশের ছবি, সেখানে সাম্প্রদায়িক শক্তি ভর করেছে তার ভালবাসার প্রেয়সীর অরক্ষিত শরীরে। মুক্তিযোদ্ধা শাহেদের চরিত্রে রূপ দিয়েছেন সায়েম সামাদ। অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন সৈয়দ শুভ্র, নওশন ইসলাম, কাজী শামীমা হক, শামসুজ্জামান দুলাল, সৈয়দ রমিত রহমান, মনোজিত কুমার ওঝা, রমিত রহমান প্রমুখ।
×