ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

আড়ংয়ের ট্রায়াল রুমে ১৩ নারী কর্মীর ১২০ ভিডিও ধারণ

প্রকাশিত: ১১:১৮, ২৯ জানুয়ারি ২০২০

আড়ংয়ের ট্রায়াল রুমে ১৩ নারী কর্মীর ১২০ ভিডিও ধারণ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর বনানীতে আড়ংয়ের ট্রায়াল রুমে ১৩ নারী কর্মীর ১২০ গোপন ভিডিও ধারণের অভিযোগে গ্রেফতার সিরাজুল ইসলাম সজীব (২২) নামে এক বিক্রয় প্রতিনিধি আদালতে স্বীকারোক্তি জবানবন্দী দিয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে তাকে আদালতে হাজির করা হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, শনিবার কাফরুলের পূর্ব শেওড়াপাড়া থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাকে একদিনের রিমান্ডে নেয় ডিএমপির সাইবার ক্রাইম ইউনিট। সাইবার ক্রাইম ইউনিটের সহকারী কমিশনার ধ্রুব জ্যোতির্ময় গোপ জানান, গ্রেফতারকৃত সজীব আড়ংয়ের ওই শাখাতেই এক সময় কাজ করত। রিমান্ডে সে অনেক তথ্য দিয়েছে। এর আগে তার বিরুদ্ধে সাইবার সিকিউরিটি এ্যান্ড ক্রাইম বিভাগের উপপরিদর্শক ফারুক হোসেন বাদী হয়ে বনানী থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা (নম্বর ৩৫) দায়ের করেন। সজীব গত ১১ জানুয়ারি রাতে ফেসবুক মেসেঞ্জারের মাধ্যমে এক তরুণীকে ট্রায়াল রুমে তার পোশাক পরিবর্তনের ভিডিও পাঠান। এরপর ১৬ জানুয়ারি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়। মামলার অভিযোগের ভিত্তিতে সাইবার ক্রাইম ইউনিট শনিবার সজীবকে গ্রেফতার করে। তার কাছে আরও অন্তত ১২ তরুণীর পোশাক পরিবর্তনের ভিডিও পাওয়া যায়। তদন্তে এখন পর্যন্ত আর কারও এ অপরাধে সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়া যায়নি। জবানবন্দী দেয়ার জন্য মঙ্গলবার সজীবকে আদালতে তোলা হবে। সাইবার সিকিউরিটি এ্যান্ড ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার নাজমুল ইসলাম জানান, গ্রেফতারকৃত সজীবকে একদিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, আড়ংয়ের বনানী শাখায় কর্মরত এক নারী ১৬ জানুয়ারি একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি নম্বর ৯৫৫) করেন। ওই জিডিতে তিনি অভিযোগ করেন, ১১ জানুয়ারি রাত ১২টা ৩৭ মিনিটে সিরাজুল ইসলাম সজীব তার ফেসবুক মেসেঞ্জারে সীমান্ত সৈকত নামে আরেকটি ফেসবুক আইডি থেকে পাঠানো একটি ভিডিও দেখতে বলে। ওই নারী ভিডিওতে দেখেন, আড়ংয়ের বনানী শাখার চতুর্থ তলার কর্মচারীদের জন্য পোশাক পরিবর্তন রুমে পোশাক পরিবর্তন করার সময় তার ভিডিও ধারণ করে পাঠিয়েছে। এসময় সজীব তাকে ভিডিও করে শরীর দেখাতে বলে। তার কথামতো কাজ না করলে ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল করার হুমকি দেয়। মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ভুক্তভোগী ওই নারী বিষয়টি উল্লেখ করে ডিএমপির সাইবার সিকিউরিটি এ্যান্ড ক্রাইম বিভাগে একটি অভিযোগ করেন। ওই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সাইবার সিকিউরিটি এ্যান্ড ক্রাইম বিভাগের সোশ্যাল মিডিয়া মনিটরিং টিমের সদস্যরা অভিযান চালিয়ে শনিবার দুপুরে কাফরুল থানার পূর্ব শেওড়াপাড়ার মনিপুর স্কুলের সামনে থেকে সিরাজুল ইসলাম সজীবকে গ্রেফতার করে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গ্রেফতারকৃত হওয়া সজীব আড়ংয়ের বনানী শাখার সাবেক কর্মী। তার বাবার নাম মৃত নূরে আলম স্বপন মুন্সী। গ্রামের বাড়ি ভোলার চরফ্যাশন থানার আমিনাবাদে। ১০৯৮ নম্বর পূর্ব শেওড়াপাড়ার একটি বাসায় সে থাকত। তার কাছ থেকে একটি রেডমি ৫ প্লাস ফোনসেট জব্দ করা হয়। ওই মোবাইলে তার নিজের ফেসবুক আইডি লগইন অবস্থায় পাওয়া যায়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে আড়ংয়ের ওই নারীকর্মীর ভিডিও করা এবং হুমকি দেয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছে। তদন্ত সূত্র জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সজীব জানিয়েছে, সে আড়ংয়ে চাকরি করত। চাকরিরত অবস্থায় সে চতুর্থ তলার কর্মচারী চেঞ্জ রুমের বাইরের সানসেট-এ দাঁড়িয়ে সেলফি স্টিক দিয়ে মোবাইল ক্যামেরার মাধ্যমে আড়ংয়ের নারী কর্মচারীদের অজান্তে তাদের নিজস্ব ইউনিফর্ম পরিবর্তন করার সময় ভিডিও ধারণ করত। তার কাছ থেকে ১৩ জন নারীকর্মীর ১২০টি ভিডিও উদ্ধার করা হয়েছে। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১৯ সালের অক্টোবরে এক নারীকর্মীর ভিডিও করার অভিযোগে ডিসেম্বর মাসে সজীবকে চাকরিচ্যুত করা হয়। তবে তার কাছে আগের করা সব ভিডিও সংরক্ষিত ছিল। তাকে একদিনের রিমান্ডে আনা হয়েছে।
×