ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ভোটের দিন ব্যাপক শোডাউনের প্রস্তুতি

আশপাশের বিএনপি নেতাকর্মীদের ঢাকা আনছে বিএনপি

প্রকাশিত: ১১:০৬, ২৯ জানুয়ারি ২০২০

আশপাশের বিএনপি নেতাকর্মীদের ঢাকা আনছে বিএনপি

শরীফুল ইসলাম ॥ ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোটের দিন ব্যাপক শোডাউনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। ভোট শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে থেকেই প্রতিটি কেন্দ্রের আশপাশে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত রাখার পাশাপাশি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ যাতে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করতে না পারে সে জন্য সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। ইতোমধ্যেই দলের পক্ষ থেকে প্রতিটি কেন্দ্র কমিটির কাছে এ নির্দেশ পৌঁছেছে। নির্দেশ পেয়ে কেন্দ্র কমিটিও নীরবে যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করছে। সূত্রমতে, ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে রাজনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর কৌশল হিসেবে নিয়েছে বিএনপি হাইকমান্ড। আর এ জন্যই সর্বশক্তি প্রয়োগ করে এ নির্বাচনে প্রতিপক্ষকে মোকাবেলা করতে চায় দলটি। আর এ জন্যই দুই সিটির প্রতিটি অলিগলিতে গণসংযোগের পাশাপাশি ভোটের দিন ব্যাপক শোডাউন করতে চায় দলটি। এ জন্য প্রতিটি কেন্দ্রের জন্য ১০১ সদস্যের কমিটি করেছে। এ কমিটির তত্ত্বাবধানে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা ওইদিন ভোট কেন্দ্রের আশপাশে অবস্থান করবে। জানা যায়, দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকায় বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে অধিকাংশই এখন আর আগের মতো ভোট কেন্দ্রে যেতে চায় না। দলের নেতাকর্মীরা না যাওয়ায় সাধারণ কর্মী-সমর্থকরাও হতাশ হয়। আর এ কারণেই অধিকাংশ নির্বাচনেই শোচনীয়ভাবে পরাজয় বরণ করে বিএনপি। এ বিষয়টিকে মাথায় রেখে এবার দুই সিটি নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর থেকেই নানা কৌশলে এগিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। নির্বাচনী প্রচারকেও এবার আগের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এখন ভোটারদের মনোবল চাঙ্গা রাখতে ভোটকেন্দ্রে শোডাউনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। সূত্র জানায়, কেন্দ্রের নির্দেশে ইতোমধ্যেই দুই সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বিএনপির প্রতিটি থানা ও ওয়ার্ড কমিটি প্রস্তুতি সভা করেছে। এখন তারা প্রতিটি কেন্দ্র কমিটির সঙ্গে বৈঠক করে ভোটের দিন শোডাউনের বিষয়ে প্রস্তুতি জোরদার করছে। আর তা করতে যাতে সমস্যা না হয় সে জন্য কেন্দ্র থেকে বিভিন্ন কৌশল ঠিক করে দেয়া হচ্ছে। ওয়ার্ড কমিটিকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে নির্বাচনের অন্তত একদিন আগে বিএনপি নেতাকর্মীদের প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে তাদের যেন ভোটের দিন কেন্দ্রে থাকার জন্য বলা হয়। এ ছাড়া ঢাকার আশপাশের এলাকা থেকেও বিএনপি নেতাকর্মীদের ঢাকায় অবস্থান করতে বলা হয়েছে। তবে আইনী জটিলতা এড়াতে হোটেল-মোটেলে না থেকে নিজ নিজ আত্মীয় স্বজনের বাসায় সতর্ক অবস্থান করতে বলা হয়েছে। কোন বৈরী পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হলে নির্দেশ দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে যেন তারা রাস্তায় নেমে আসতে পারে সে জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। আর ঢাকার বাইরের নেতাকর্মীরা ভোটের দিন যে এলাকায় অবস্থান করবে আগেরদিনই ওই এলাকার দায়িত্বে নিয়োজিত নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে বলা হয়েছে। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও ঢাকার দুই সিটি নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আব্দুল্লা আল নোমান বলেন, ভোট যাতে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয় সে জন্য আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে দাবি জানিয়েছি। তাই আশা করব এবার সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। তা না হলে এবার আমরা বিনা চ্যালেঞ্জে ছেড়ে দেব না। ভোটের দিন আমাদের নেতাকর্মীরা সতর্ক থাকবে। ভোট কারচুপির চেষ্টা হলে প্রতিবাদ করা হবে। বিএনপির আরেক ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমাদের দলের মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা বিপুল ভোটে বিজয়ী হবে। আর তা না করে ভোট কারচুপি করে বিজয় ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করলে দাঁতভাঙ্গা জবাব দেয়া হবে। আমাদের নেতাকর্মীরা ভোটের দিন কেন্দ্র পাহারা দেবে। তাই এবার একতরফাভাবে ভোট করে বিজয় ছিনিয়ে নেয়া সম্ভব হবে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক কেন্দ্রীয় নেতা জানান, ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনকে বিএনপি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে নিয়েছে। ইতোমধ্যেই ব্যাপক প্রচার চালিয়েছে দলের মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। মাঝেমাঝে বাধার সম্মুখীন হলেও বিভিন্ন কৌশলে প্রতিটি এলাকার দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট চেয়েছেন তারা। নির্বাচনী প্রচারকালে যে সাড়া পাওয়া গেছে তাতে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপি বিজয়ী হবে। আর কারচুপি করে বিএনপিকে হারিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হলে ভোটের দিন থেকেই রাজপথে আন্দোলন শুরু হবে। এ জন্য দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। বিএনপি নেতারা মুখে মুখে আন্দোলনের অংশ হিসেবে ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে অংশ নিয়েছে বললেও বাস্তবে এ নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর কৌশল নিয়েছে। আর এ কারণেই এবারের নির্বাচনে প্রচার জোরদারের পাশাপাশি ভোটের দিন শক্তির মহড়া দেয়ার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এদিকে নির্বাচন কমিশনকে চাপে রেখে যাতে মোটামুটি সুষ্ঠু নির্বাচন আদায় করে নেয়া যায় সে জন্য প্রতিদিনই নির্বাচন কমিশনে কোন না কোন অনিয়ম সম্পর্কে অভিযোগ করছে বিএনপি। এভাবে নির্বাচন কমিশনকে চাপে রেখে নির্বাচন করতে পারলে বিএনপি বিজয়ী হতে পারবে বলে দলটির নেতাকর্মীরা মনে করছেন। যদি প্রতিপক্ষের কারচুপির কারণে নির্বাচনে বিজয়ী হতে না পারে সে ক্ষেত্রে এই ইস্যুতেই রাজপথে আন্দোলন জোরদার করতে চায়। আর এ আন্দোলনে যাতে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোকে সঙ্গে পাওয়া যায় সে জন্য ইতোমধ্যেই জোট ও জোটের বাইরের সমমনা দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় করেছে বিএনপি। এ ছাড়া বিএনপিপন্থী বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের সঙ্গেও মতবিনিময় করেছে। অভিজ্ঞ মহলের মতে, অনেকদিন পর বিএনপি যে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে রাজনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর কৌশল হিসেবে নিয়েছে তা তাদের কর্মকৌশল দেখেই বোঝা যাচ্ছে। এ নির্বাচনে বিজয়ী হতে না পারলে রাজপথে সরকারবিরোধী আন্দোলনের ক্ষেত্র তৈরি করতে চায় তারা। এ কারণেই বিদেশী কূটনীতিক, নির্বাচন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গেও মতবিনিময় করেছেন দলের নেতারা। দুই বছর আগে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া কারাবন্দী হওয়ার পর থেকে বহুচেষ্টা করেও রাজপথের আন্দোলন শুরু করতে পারেনি বিএনপি। তাই ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর তারা আন্দোলনকে টার্গেট করে এ নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এ কারণেই বিএনপি মহাসচিবসহ দলের সিনিয়র নেতারা কথায় কথায় বলছেন তাদের দল আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। তারা যে এ নির্বাচনকে ইস্যু করে আন্দোলন চাঙ্গা করতে চান তা দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদেরও জানিয়ে দেয়া হয়েছে। এ জন্য দলের নেতাকর্মীদের নির্দেশের জন্য অপেক্ষা করতে বলা হয়েছে।
×