ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পদ্মাসেতুর ২২ চীনা পর্যবেক্ষণে, ২শ জনকে না আসার নির্দেশনা

প্রকাশিত: ০৯:৫৯, ২৮ জানুয়ারি ২০২০

পদ্মাসেতুর ২২ চীনা পর্যবেক্ষণে, ২শ জনকে না আসার নির্দেশনা

অনলাইন রিপোর্টার ॥ পদ্মাসেতু প্রকল্পে কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) ও নদীশাসনে সিনো হাইড্রো করপোরেশন। চীনের এ দুইটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন প্রায় এক হাজার ১০০ চীনা প্রকৌশলী ও শ্রমিক। চলতি মাসের গেল ২৫ জানুয়ারি চীনা নববর্ষ উপলক্ষে প্রতিবছরের মতো এবারও প্রায় দুই শতাধিক প্রকৌশলী-শ্রমিক ছুটিতে চীনে অবস্থান করছেন। কিন্তু চীনে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের ভয়াবহতা বাড়ছেই। প্রায় দুই শতাধিক শ্রমিককে সেদেশেই থাকার নির্দেশনা দিয়েছে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান। এছাড়া বাংলাদেশে কর্মরত ২২ জন চীনা প্রকৌশলী-শ্রমিককে চিহ্নিত করে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছে সেতু কর্তৃপক্ষ। মুন্সীগঞ্জ সিভিল সার্জন আবুল কালাম আজাদ জানান, পদ্মাসেতুতে ২২ জানুয়ারির পর চীন থেকে কোনো শ্রমিক-প্রকৌশলী আসতে দেওয়া হয়নি। তবে ২২ তারিখের আগে দুই সপ্তাহের মধ্যে আসা ২২ জন শ্রমিক-প্রকৌশলীদের প্রকল্প এলাকায় পৃথকস্থানে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। মুন্সিগঞ্জ স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে জেলায় কর্মরত চীনাদের স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণে একটি ফর্ম পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে। মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) পদ্মাসেতুতে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সচেতনতামূলক সভা সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে পদ্মাসেতুতে যেসব চীনা শ্রমিক কর্মরত রয়েছেন তাদের কেউই করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সিন্ড্রোম নেই। পরবর্তী নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত যারা চীনে ছুটিতে রয়েছেন তাদের সেদেশেই থাকার জন্য বলা হয়েছে। পদ্মা প্রকল্পে সার্বক্ষণিক একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ মেডিক্যাল ইউনিট রয়েছে। চীনা শ্রমিকদের সঙ্গে দেশি শ্রমিকরা স্বাভাবিক ভাবেই কাজ করছেন কোনো সমস্যা হচ্ছে না। পদ্মাসেতু প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, সেতুতে কর্মরত শ্রমিক ও প্রকৌশলীদের মধ্যে মাস্ক বিতরণ করেছে সেতু কর্তৃপক্ষ। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় পদ্মাসেতুতে সতর্কতামূলক নানা কর্মকাণ্ড হাতে নেওয়া হয়েছে। যেসব চীনা শ্রমিক পদ্মাসেতুতে কর্মরত রয়েছেন তাদের চলাচলে বাড়তি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। চায়নাদের বাসস্থানের ভেতরেই বেশিরভাগ সময় থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। দেশি শ্রমিকদের নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে চীনা শ্রমিকদের সঙ্গে কাজ করার পরামর্শও দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। মূল সেতুর প্রকৌশলী জানান, করোনাভাইরাসকে কেন্দ্র করে পদ্মাসেতু প্রকল্পে সচেতনতামূলক একাধিক সভা হচ্ছে। সভায় সতর্কতামূলক বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হচ্ছে। চীনা নববর্ষ উপলক্ষে পদ্মাসেতু থেকে প্রায় দুই শতাধিক চীনা শ্রমিক-প্রকৌশলী সেখানে আটকা পড়েছেন। তাদের বাংলাদেশে না আসার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া চীনে পদ্মাসেতুর নানা কাজ চলছে, সেখানে পাঁচজন বাংলাদেশিও আটকা পড়েছেন। আরো জানান, বেশিরভাগ চীনা শ্রমিক বিদেশে থাকায় কাজে ধীর গতি দেখা দিয়েছে। এক সপ্তাহ দেখার পর কাজের গতি ঠিক রাখতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানা গেছে। এখন পর্যন্ত জাজিরা প্রান্তে কোনো শ্রমিকের সেরকমভাবে অসুস্থ হওয়ার খবর মেলেনি। এছাড়াও মাওয়া প্রান্তেও কোন চীনা শ্রমিক অসুস্থ হননি। যেসব চীনা শ্রমিক ও প্রকৌশলী কাজ করেন তারা প্রকল্প এলাকায় আলাদাভাবে বসবাস করে থাকেন। বাইরে যেতেও নানা নির্দেশনা আছে তাদের। রাতে বাইরে যেতে হলে পুলিশের প্রয়োজন হয়। সেতুতে চীনা ও বাংলাদেশিরা একসঙ্গেই কাজ করে যাচ্ছেন। যেকোন পরিস্থিতি মোকাবিলায় পদ্মাসেতু কর্তৃপক্ষ পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে বলে জানান তিনি। শ্রমিক ও প্রকৌশলীরা জানান, সেতুতে চীনা শ্রমিক ও দেশি শ্রমিকরা প্রতিদিন মাস্ক পরেই কাজে আসছেন। এছাড়া যারা অফিসে কাজ করছেন তারাও মাস্ক ব্যবহার করেই বের হচ্ছেন। সতর্ক থাকার জন্য সবাইকেই বলা হয়েছে। তবে সেতু এলাকায় কোনো আতংক নেই। স্বাভাবিক দিনের মতোই সেতুতে কাজ চলছে। কোনো সমস্যাও হচ্ছে না। প্রতিদিন চীনা শ্রমিকদের খোঁজখবর রাখা হচ্ছে। মুন্সিগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার আব্দুল মোমেন জানান, পদ্মাসেতু এলাকাটি সংরক্ষিত। সেখানে পূর্ব থেকেই পুলিশের তৎপরতা রয়েছে। বাড়তি করে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয় নেই।
×