ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দিনাজপুরের আত্রাই নদীর খননকৃত বালু অবৈধভাবে বিক্রির অভিযোগ

প্রকাশিত: ০৭:২০, ২৮ জানুয়ারি ২০২০

দিনাজপুরের আত্রাই নদীর খননকৃত বালু অবৈধভাবে বিক্রির অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর ॥ দিনাজপুরের আত্রাই নদীর খননকৃত বালু অবৈধভাবে বিক্রি করা হয়েছে মর্মে অভিযোগ উঠেছে। বাজারদরের চেয়ে কম মূল্যে বালু বিক্রি হওয়ায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেছেন ইজারাদাররা। শুধু তাই নয়, ওই নদীর সরকারী বাঁধের বালু পর্যন্ত কেটে বিক্রি করা হচ্ছে। জানা যায়, মোহনপুর রাবার ড্যাম থেকে ভুসিরবন্দর পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশের নাব্যতার উন্নয়নে কাটার সাকশন ড্রেজার দ্বারা ড্রেজিং কাজ চলছে। গত সেপ্টেম্বর মাসে ড্রেজিংকৃত মাটি বিক্রয়ের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেয় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডাব্লিউটিএ)। এই কাজটি পায় শহরের গণেশতলা এলাকার মোসাদ্দেকুল ইসলাম। তবে এই কাজটি পাওয়ার পর থেকেই প্রতি ট্রলি বালু বাজারমূল্য থেকে অনেক কম মূল্যে বিক্রি করা হচ্ছে। যাতে করে ইজারাদারদের বালু বিক্রি হচ্ছে না। এ ব্যাপারে প্রতিকার চেয়ে গত ১৪ জানুয়ারী জেলা প্রশাসক বরাবরে আবেদন করেছেন আলতাফ হোসেন নামে এক বালু ইজারাদার। অভিযোগে বলা হয়, ২০১৯ সনে ৪৮ লাখ ২০ হাজার টাকা পরিশোধ করে তিনি আত্রাই নদীর বালুমহাল ইজারা নিয়েছেন এবং বালু বিক্রি করছেন। এতে বিআইডাব্লিউটিএ’র অধীনে আত্রাই নদীর পাঁচবাড়ী ব্রীজের পাশের খননকৃত বালু অবৈধভাবে বিক্রি করায় তার কোন বালু বিক্রি না হওয়ায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। বিষয়টি জরুরীভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য আবেদন জানান তিনি। ইজারাদার আলতাফ হোসেন বলেন, পাঁচবাড়ী ব্রীজের কাছে আত্রাই নদীর খননকৃত বালু অবৈধভাবে কে বা কাহারা বিক্রি করায় আমার বালু বিক্রি হচ্ছে না। যাতে করে আমি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি। এখন প্রশাসনের নিকট আকুল আবেদন যেভাবে হোক এই বালু বিক্রি বন্ধ করা হোক। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, পাঁচবাড়ী ব্রীজ সংলগ্ন দক্ষিণ পার্শ্বের এলাকায় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের ড্রেজিংয়ের কাজ চলছে। আর তার কিছুটা উত্তরপার্শ্বে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে উত্তোলনকৃত বালু ট্রলিতে বিক্রি করা হচ্ছে। এসব বালু বিক্রি করছেন মোসাদ্দেকুল ইসলাম নামের এক ইজারাদার। তিনি প্রতি ট্রলি ২৫০ থেকে ৩শ’ টাকা দরে এসব বালু বিক্রি করছেন। ইজারা নিয়ে বালু বিক্রি করার পাশাপাশি নদীর ধারের বাঁধের বালু পর্যন্ত কেটে বিক্রি করছেন তারা। সেখানে দায়িত্বরত ইজারাজার মোসাদ্দেকুল ইসলামের ভাতিজা পরিচয় দিয়ে হামিদুর রহমান বলেন, নদী খননের এই কাজটি করছে বিআইডাব্লিউটিএ। আর সরকারী কোষাগারে পে-অর্ডারের মাধ্যমে টাকা জমা দিয়ে নদী থেকে উত্তোলনকৃত বালু বিক্রির অনুমতি পেয়েছি। সেই হিসেবে এই বালু বিক্রি হচ্ছে। এসব বালু ২৫০ টাকা থেকে ৩শ’ টাকা ট্রলি দরে বিক্রি করা হচ্ছে। তবে কত টাকা কোষাগারে জমা দিয়েছেন এটি জানাননি তিনি। সেখানে দায়িত্বরত ইজারাদারের আরেক ভাতিজা রমজান আলী বলেন, সরকারীভাবে নদী খননের যে বালু উঠেছে সেগুলো বিক্রির জন্য সরকারী রাজস্ব জমা দিয়ে আমরা কাজটি পেয়েছি। প্রথমে আমরা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে আবেদন করেছি। পরে সেই আবেদন বিআইডাব্লিউটিএ’র পাঠালে সেখান থেকে সরকারী রাজস্ব জমা দেয়ার জন্য বলে। পরে সরকারী রাজস্ব জমা দিয়ে এই কাজটি পেয়েছি। এই বালু সরকারী রাস্তার কাজ বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে ২৫০ থেকে ৩শ’ টাকা ট্রলি দরে। বাজারমূল্য থেকে কম দরে বিক্রি করা হচ্ছে এমনটি জানার পর ৩শ’ টাকা দরে বালু বিক্রি করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। তবে এখানে কোন অনিয়ম হচ্ছে না বলে দাবি তাদের। এ ব্যাপারে দিনাজপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আবু সালেহ মো: মাহফুজুল আলম বলেন, খননের মাধ্যমে যেসব বালু উঠছে সরকারী সংস্থা হলে বিনামূল্যে এবং ব্যক্তিগত হলে অর্থের বিনিময়ে এসব বালু দেয়ার নিয়ম রয়েছে। উত্তোলনকৃত বালু ক্রয়ের জন্য যারা আমাদের কাছে আবেদন করেছে সেই আবেদন বিআইডাব্লিউটিএ-তে পাঠিয়েছি। ইজাদারররা বিআইডাব্লিউটিএ থেকে অনুমতি নিয়ে রাষ্ট্রিয় কোষাগারে অর্থ জমা দিয়ে বালু ক্রয় করে পরে তা বিক্রি করছেন। এসব ব্যাপারে আমরা সুপারিশ কিংবা সিদ্ধান্তও দেই না। আমাদের কাছে ইজারাদার একটি অভিযোগ দিয়েছেন যেটি বিআইডাব্লিউটিএ-তে পাঠানো হয়েছে। বাঁধ কেটে বিক্রি করার ব্যাপারে তিনি বলেন, কোথায় বালু উত্তোলন করা হয়েছে সেটিও আমরা দেখিনি। এটা আমাদের মধ্যে না, তারা নীতিমালা অনুযায়ী বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছেন। এখানে আমাদের সংশ্লিষ্টতা খুবই কম।
×