ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকা উত্তরের এসব ভবন কবে ভাঙ্গা হবে কেউ জানে না

৫ ঝুঁকিপূর্ণ বিশাল ভবন ও মার্কেট ॥ ৭ বছরেও ভাঙ্গা হয়নি

প্রকাশিত: ১১:১৫, ২৮ জানুয়ারি ২০২০

৫ ঝুঁকিপূর্ণ বিশাল ভবন ও মার্কেট ॥ ৭ বছরেও ভাঙ্গা হয়নি

মশিউর রহমান খান ॥ কচ্ছপ গতিতে এগোচ্ছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় বুয়েট কর্তৃক ঘোষিত পাঁচ অতি ঝুঁকিপূর্ণ বিশাল মার্কেট ভবন ভাঙ্গার কাজ। প্রায় ৭ বছর আগে এসব ভবন ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হলেও আজ পর্যন্ত তা ভাঙ্গা হয়নি। এসব ভবন ডিএনসিসি কর্তৃক পরিত্যক্ত ঘোষণাও করা হয়েছে ১০ মাস আগে। কিন্তু নানা কারণ দেখিয়ে ভাঙ্গা হচ্ছে না এসব ভবন। ফলে যে কোন সময় ভবন ধসে ঘটতে পারে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। এই ৫ মার্কেট ভবনের কোন কোনটি ১৯৬২ সালে নির্মিত। এসব মার্কেট থেকে সিটি কর্পোরেশন আইনানুযায়ী কোন প্রকার রাজস্ব পর্যন্ত আদায় করে না। ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ গত বছর এপ্রিলে প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে এসব ভবন ভাঙ্গার অনুমতিও দেয়া হয়েছে, অতিদ্রুতই এসব ভবন ভাঙ্গা হবে, এমনকি ভাঙতে সকল প্রস্তুতিও সম্পন্ন হয়েছে এমন বক্তব্য প্রদান করলেও কেবল তা ঘোষণাতেই রয়ে গেছে তার বাস্তব প্রতিফলন নেই আজ পর্যন্ত। ডিএনসিসির বিভিন্ন এলাকায় দীর্ঘ বছর ধরে দাঁড়িয়ে আছে ৫ ঝুঁকিপূর্ণ বিশাল ভবন ও মার্কেট। ভবনগুলো হচ্ছে মোহাম্মদপুর টাউন হল কাঁচা ও পাকা মার্কেট, গুলশান-২-এ গুলশান কাঁচা মার্কেট, (উত্তর) গুলশান-১-এ গুলশান পাকা মার্কেট, (দক্ষিণ) কাওরানবাজার কাঁচা মার্কেট (কিচেন মার্কেট), কাওরানবাজার ১ নং ভবন মার্কেট, কাওরানবাজার ২ নং ভবন মার্কেট, কাওরানবাজার আড়ৎ ভবন ও রায়েরবাজার মার্কেট। তবে বুয়েট কর্তৃপক্ষ কতৃক ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষিত হওয়া মোট ৬ ভবনের মধ্যে এ পর্যন্ত গাবতলীর আমিনবাজার ট্রাক টার্মিনাল বিল্ডিংটি ভাঙ্গতে সক্ষম হয়েছে ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ। সরেজমিনে দেখা গেছে, বুয়েট গবেষণা করে ঘোষিত এসব জরাজীর্ণ ভবন ধসে পড়ে যে কোন সময় ঘটতে পারে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে তা ভাঙ্গার কোন আগ্রহই কারো চোখে পড়ছে না। এমনকি কবে নাগাদ নাগাদ ভাঙ্গার কাজ শুরু করবে সংশ্লিষ্ট কেউ তা জানে না। ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ঘোষণার পর ৭ বছর পর ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ মোট ৬টি ভবন ভাঙ্গার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেও মাত্র একটি (গাবতলীর আমিনবাজার ট্রাক টার্মিনাল ভবন) ছাড়া আর কোনটি ভাঙ্গেনি। এমনকি কবে ভাঙ্গা হবে তা জানেন না কেউই। কাজ প্রক্রিয়াধীন বলেই সময় কাটাচ্ছে সংস্থাটির দায়িত্বপ্রাপ্তরা। অপরদিকে সাবেক প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা ডিএনসিসি থেকে বদলি হয়ে অন্যত্র চলে যাওয়ায় সম্পত্তি শাখাও ভবন ভাঙ্গার কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন করতে কিছুটা বিপাকে রয়েছে বলে বলে জানা গেছে। ডিএনসিসির করা এক প্রতিবেদনে যে কোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। গত বছরের এপ্রিলে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ কর্তৃক গঠিত সিটি কর্পোরেশনের কনডেমনেশন কমিটি এসব ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণার অনুমোদন দেয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ পরিত্যক্ত ঘোষণা করে এসব ভবন ভাঙ্গার বিষয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ করে। তখন ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ শীঘ্রই মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্ত ও নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানায়। সরেজমিনে দেখা গেছে, এসব ভবনের কোন কোনটির উপরের ছাদে বাঁশ দিয়ে ঠেকা দিয়ে রাখা হয়েছে। কোন কোন ভবনের পলেস্তারা পড়ে গেছে। এমনকি ভেতরের দুর্বল ক্ষয়ে যাওয়া ইটও দেখা যাচ্ছে। জানা গেছে, এসব ভবন ব্যবহারের কোন অনুমতি না থাকলেও বেশ কিছু ব্যবসায়ী নিজেরা সংঘবদ্ধ হয়ে নিজেদের ব্যবস্থাপনায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করছে। এমনকি এসব ভবনের গ্যাস, বিদ্যুত, পানি বা সকল প্রকার ইউটিলিটি সার্ভিস লাইনের সংযোগ পর্যন্ত বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে ডিএনসিসি। সূত্র জানায়, বুয়েট কর্তৃক ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষিত হওয়ায় এসব মার্কেট থেকে ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ কোন প্রকার রাজস্ব আহরণ করেন না। এমনকি এসব ভবন সংস্কারে কোন প্রকার অর্থ পর্যন্ত ব্যয় করে না ডিএনসিসি। এসব ভবন নিয়ে ব্যবসায়ীদের আগের মামলা থাকলেও বর্তমানে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী এসব ভবন ভাঙ্গতে কোন প্রকার বাধা নেই বলে সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে। তবুও অজ্ঞাত কারণে আটকে আছে অতি ঝুঁকিপূর্ণ এসব ভবন। জানা গেছে, ডিএনসিসির একটি চক্র এসব ভবন ভাঙ্গার পক্ষে নয়। এজন্য অতি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভবনে ব্যবসা পরিচালনাকারীদের অন্যত্র সরাতে কাজ করছে না। এছাড়া প্রতিমাসে এসব ব্যবসায়ীর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে বলে জানা গেছে। ফলে ডিএনসিরি উর্ধতন কর্মকর্তাদের এসব ভবন ভাঙ্গায় সংশ্লিষ্টরা তেমন গুরুত্ব প্রদান করেন না। সূত্র জানায়, ২০১৩ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) কর্তৃক পরীক্ষার পর মার্কেটগুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে ঘোষণা দিলেও পরবর্তী ৬ বছরেও এসব ভবন ভাঙ্গার বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ। পাকিস্তান আমলে ও এরশাদ সরকারের আমলে তৈরি হওয়া এসব ভবনের বেশিরভাগই অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায়। এসব মার্কেটে নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ব্যবসায়ীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নির্বিঘেœ ব্যবসা পরিচালনা করছেন। সূত্র জানায়, বিভাগীয় কমিশনারকে আহ্বায়ক করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটিতে জেলা প্রশাসক, মেয়রের প্রতিনিধি, একজন কাউন্সিলর সংশ্লিষ্ট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী, গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী, এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী ও সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে নিয়ে ৭ সদস্যের কমিটি গঠন করে। কমিটি এসব ভবনকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে দ্রুত ভাঙ্গাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেয়। জানা গেছে,সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে অতিদ্রুত এই কমিটির সভার রেজুলেশন করে এসব ভবনকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে। কিন্তু এখন পর্যন্ত পরিত্যক্ত ঘোষণাতেই কাজ আটকে রেখেছে ডিএনসিসি। জানা গেছে, আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে দীর্ঘ ছয় বছর ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ এসব ভবন ভাঙ্গতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়নি। আতিকুল ইসলাম মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর গত বছর এপ্রিল মাসে এসব ভবনের কয়েকটি সরেজমিন পরিদর্শনে যান। ভবনগুলোর দুরবস্থা দেখে কারণ জানতে চাইলে কর্মকর্তারা কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। সে সময় এসব ভবন ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণার পরও কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন মেয়র। একই সঙ্গে এসব ভবন ধসে যে কোন সময় ভয়াবহ দুর্ঘটনায় হতাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে উপলব্ধি করে এসব ভবনের বিষয়ে অতিদ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষের পূর্বের দেয়া প্রস্তাব অনুযায়ী স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটি ভবনগুলো পরিত্যক্ত করে ভাঙ্গার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুমোদন দেয়। জানমালের নিরাপত্তা বিধানে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী অতিদ্রুত এসব ভবন ভাঙ্গা জরুরী হয়ে পড়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক জনকণ্ঠকে বলেন, বুয়েট কর্তৃক ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষিত এই ৫ টি মার্কেট ছাড়াও আমাদের আরও কয়েকটি মার্কেট ঝঁকিতে রয়েছে। যেগুলো ভাঙ্গা প্রয়োজন। আমি এখানে নতুন দায়িত্ব নিয়েছি তবে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা ৫ ভবন ইতোমধ্যেই পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছি। সরেজমিনে সকল ঝুঁকিপূর্ণ ভবন বা মার্কেট আমি পরিদর্শন করছি। তবে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভাঙ্গার প্রক্রিয়ার কাজ চলমান রয়েছে।
×