ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচন ঘিরে তিন স্তরের নিরাপত্তা বলয়

প্রকাশিত: ১১:০৯, ২৮ জানুয়ারি ২০২০

নির্বাচন ঘিরে তিন স্তরের নিরাপত্তা বলয়

গাফফার খান চৌধুরী ॥ ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ঘিরে তিন স্তরের নিরাপত্তা বলয় গড়া হয়েছে। নির্বাচন পূর্ব, নির্বাচন চলাকালীন ও নির্বাচন পরবর্তী এই তিনটি ধাপে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। ইতোমধ্যেই ভোটকেন্দ্রগুলো ও তার আশপাশের এলাকার ওপর নজরদারি শুরু করেছেন গোয়েন্দারা। কেন্দ্রের গুরুত্ব বিবেচনা করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। অনেক কেন্দ্রে ও তার আশপাশে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। বসানো হয়েছে কন্ট্রোলরুম। ঢাকার পিলখানা বিজিবি সদর দফতরেও কন্ট্রোলরুম স্থাপন করা হচ্ছে। এছাড়া প্রস্তুত থাকছে র‌্যাবের হেলিকপ্টার, সোয়াট, বম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, র‌্যাবের ডগস্কোয়াড ও ক্রাইসিস রেসপন্স টিম। পাশাপাশি বাড়তি পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও আনসারও প্রস্তুত রাখা হচ্ছে। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি শনিবার ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সকাল আটটা থেকে নিয়ে বিকেল চারটা পর্যন্ত একটানা ভোটগ্রহণ চলবে। গুরুত্ব বিবেচনা করে অনেক কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন, ভ্রাম্যমাণ আদালত ও পর্যাপ্ত পরিমাণ সিসি ক্যামেরা বসানো হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তদারকি করতে বসানো হয়েছে মনিটরিং সেল। নির্বাচন পূর্ব, নির্বাচন চলাকালীন ও নির্বাচন পরবর্তী তিনটি ধাপে নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। নির্বাচন পরবর্তী পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে নিরাপত্তা জোরদার বা শিথিল করার বিষয়ে নির্বাচন শেষে পরিস্থিতি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনে বিজিবি, পুলিশ, র‌্যাব ও আনসারসহ প্রায় ৫০ হাজার সদস্য নিয়োজিত থাকবেন। এছাড়া ক্যান্টনমেন্টে সেনাবাহিনী প্রস্তুত থাকবে। রিটার্নিং কর্মকর্তা ডাকলেই সেনাবাহিনী চলে আসবে। নির্বাচনী মালামাল প্রস্তুত রয়েছে। বিজিবি সদর দফতর জানিয়েছে, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে তাদের ৬৫ প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন থাকবে। এর মধ্যে ঢাকার উত্তরে ২৭ প্লাটুন আর দক্ষিণে ৩৮ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন থাকবে। প্রতি দুটি সাধারণ ওয়ার্ডে এক প্লাটুন করে বিজিবি মোতায়েন থাকবে। নির্বাচন কমিশন (ইসি) সূত্রে জানা গেছে, মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসারের সমন্বয়ে প্রতিটি সাধারণ ওয়ার্ডে একটি মোবাইল ফোর্স থাকবে। এছাড়া প্রতি তিনটি সাধারণ ওয়ার্ডে একটি স্ট্রাইকিং ফোর্স এবং প্রতি থানায় একটি করে রিজার্ভ স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে। আর প্রতিটি সাধারণ ওয়ার্ডে একটি র‌্যাবের টিম থাকবে। এছাড়া সাধারণ ভোটকেন্দ্রে অস্ত্রসহ চারজন পুলিশ (এসআই/এএসআই একজন ও তিনজন কনস্টেবল), দুইজন অস্ত্রসহ অঙ্গীভূত আনসার, ১০ জন লাঠিসহ অঙ্গীভূত আনসার/ভিডিপি সদস্য (৪ জন নারী ও ৬ জন পুরুষ) মোতায়েন থাকবে। সূত্র জানায়, ভোটকেন্দ্রে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ভোটগ্রহণের দিন এবং এর আগে ২ দিন ও পরে ১ দিন মোট ৪ দিনের জন্য নিয়োজিত থাকবে। তবে ভোটকেন্দ্রে অঙ্গীভূত আনসার ও ভিডিপি ৫ দিনের জন্য নিয়োজিত থাকবে। ভোটগ্রহণের আগের দিন রাতে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার সঙ্গে ভোটকেন্দ্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বাহিনীর সকল সদস্য ভোটকেন্দ্রেই অবস্থান করবে। মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স ভোটগ্রহণের দিন এবং তার আগে ২ দিন ও পরে ১ দিন মোট ৪ দিন অর্থাৎ ৩০ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবে। স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে ভোটকেন্দ্রের বাইরে র‌্যাব/পুলিশের টিম সংশ্লিষ্ট ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় সতর্কতাবস্থায় দায়িত্ব পালন করবে। আর গুরুত্বপূর্ণ বা ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রে ৬ জন অস্ত্রসহ পুলিশ (একজন এসআই ও ৫ জন এএসআই/ কনস্টেবল), দুইজন অস্ত্রসহ অঙ্গীভূত আনসার এবং ১০ জন লাঠিসহ অঙ্গীভূত আনসার/ভিডিপি সদস্য (৪ জন ও ৬ জন পুরুষ) মোতায়েন থাকবে। ঢাকা উত্তর সিটিতে ২৭টি থানা, ১৮টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড, ৫৪টি সাধারণ ওয়ার্ড এবং ১ হাজার ৩১৮টি ভোটকেন্দ্র রয়েছে। এছাড়া ঢাকার দক্ষিণ সিটিতে ২৫টি থানা, ২৫টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড, ৭৫টি সাধারণ ওয়ার্ড এবং ১ হাজার ১৫০টি ভোটকেন্দ্র রয়েছে। নির্বাচনে ১২৯ জন কর্মকর্তাকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তারা ভোটের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করবেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে এ তথ্য জানানো হয়েছে। আদেশে আরও বলা হয়েছে, আগামী ৩০ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নিয়োগপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা কাজ করবেন। নিয়োগপ্রাপ্তদের ২৯ জানুয়ারি ঢাকা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে যোগ দিতে বলা হয়েছে। ঢাকা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট প্রয়োজনীয়তার নিরিখে তাদের দায়িত্ব বণ্টন করবেন বলে আদেশে জানানো হয়। আগামী ৩০ জানুয়ারি বিকেলে শিল্পকলা একাডেমিতে নির্বাচন সংক্রান্ত ব্রিফিংয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। ওই ব্রিফিংয়ে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার উপস্থিত থাকবেন। সূত্র বলছে, এছাড়াও অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি এড়াতে ঢাকার আশপাশের মহাসড়কগুলোর নিরাপত্তায় বাড়তি বিজিবি প্রস্তুত রাখা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের রিটার্নিং কর্মকর্তার অনুমতি সাপেক্ষে আগামী ৩০ জানুয়ারি রাত বারোটা থেকে নির্বাচনী এজেন্ট, দেশী-বিদেশী পর্যবেক্ষক, সাংবাদিক নির্বাচনের কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা, কর্মচারী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য এবং সেবামূলক কাজে নিয়োজিত জরুরী সেবাদানকারী যানবাহন চলাচল নির্বিঘœ করতে বাড়তি নিরাপত্তা আরোপ করা হচ্ছে। সাংবাদিক ও নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা একত্রে ৫ জনের বেশি কোন ভোটকেন্দ্রে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে পারবেন না। যেখানে ভোটের সিল দেয়া হয়, সেই গোপন কক্ষে প্রবেশ করতে পারবেন না। ৩০ জানুয়ারি ভোর থেকে ৩ ফেব্রুয়ারি রাত বারোটা পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ব্যতীত ব্যক্তিগত বা প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের সব ধরনের বৈধ আগ্নেয়াস্ত্র বহন ও প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে এ তথ্য জানানো হয়। আদেশ লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও আদেশে বলা হয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, একইদিন রাত বারোটা থেকে সব ধরনের জনসভা, অনুষ্ঠান, মিছিল, শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ভোটকেন্দ্রের ৪শ’ গজের মধ্যে কোন প্রার্থীর ক্যাম্প স্থাপন বা প্রচার চালানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে। দুই সিটি কর্পোরেশন এলাকা থেকে বহিরাগতদের শহর ছেড়ে চলে যেতে বলা হয়েছে। আগামী ৩০ জানুয়ারি রাত বারোটা থেকে নির্বাচন চলাকালীন পর্যন্ত মোটরসাইকেল চলাচলের ওপর বাড়তি নিষেধাজ্ঞা জারি করা রয়েছে। ভোটকেন্দ্রগুলো একক, যৌথ ও গুচ্ছ হিসেবে ভাগ করা হয়েছে। ঢাকার ভোটকেন্দ্রের সার্বিক পরিস্থিতি দেখভাল করতে সচিবালয়ের পাশে আব্দুল গণি রোডে স্থাপন করা হয়েছে প্রধান কন্ট্রোলরুম। আর গুলশান, তেজগাঁও এবং মিরপুর পুলিশ স্টাফ কলেজে একটি করে সাব কন্ট্রোলরুম স্থাপন করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর নাট্যমঞ্চ থেকে দক্ষিণের আর শেরেবাংলানগর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলেন কেন্দ্র থেকে উত্তরের ফলাফল ঘোষিত হওয়ার কথা রয়েছে। ব্যালট সামগ্রী নিরাপদে পৌঁছে দিতে থাকছে বিশেষ নিরাপত্তা। এছাড়া ভোট গণনা ও কেন্দ্রগুলোতে ফলাফল ঘোষণা শেষ হওয়ার পরও কঠোর নিরাপত্তা থাকবে। নির্বাচনের পরবর্তী পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে যৌথ বাহিনীর অভিযান চলবে। যদিও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান চলমান আছে।
×