ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ, যানজট

ওয়ারীতে গাড়িচাপায় এসএসসি পরীক্ষার্থী নিহত

প্রকাশিত: ১১:০৩, ২৮ জানুয়ারি ২০২০

ওয়ারীতে গাড়িচাপায় এসএসসি পরীক্ষার্থী নিহত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পুরান ঢাকার ওয়ারীতে ওয়াসার গাড়িচাপায় আবীর হোসেন (১৬) নামে এক এসএসসি পরীক্ষার্থী নিহত হয়েছে। সোমবার সকাল সাড়ে এগারোটার দিকে এ ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা যাত্রাবাড়ী-গুলিস্তান সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করেছে। এতে ওয়ারী স্ট্র্রিট সড়ক, জয়কালী মন্দির ও বঙ্গ ভবনের পাশের সড়কে ভয়াবহ যানজট লেগে যায়। পরে উর্ধতন পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে এসে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে এক ঘণ্টা পর সড়ক থেকে তাদের সরিয়ে দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। নিহতের সহকর্মীরা জানান, আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের কথা ছিল আবীর হোসেনের। এজন্য সোমবার সকাল সাড়ে এগারোটার দিকে আবীর জয়কালী মন্দিরের বাসা থেকে বের হয়ে হেঁটে তার বিদ্যাপীঠ ওয়ারী উচ্চ বিদ্যালয় যাচ্ছিল, সেখান থেকে তার প্রবেশপত্র তোলার জন্য। স্কুলের কয়েক গজ অদূরে বলধা গার্ডেনের পাশে ওয়াসার একটি গাড়ি তাকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পাম্প থেকে পানি নিয়ে ওয়াসার ওই গাড়িটি পেছন দিকে টার্ন করছিল। ওই রাস্তা দিয়ে ধীরস্থিরভাবে হেঁটে যাচ্ছিল আবীর। চালক সেদিকে নজর না দিয়ে পেছন থেকে সজোরে টার্ন নিতে গিয়ে আবীরকে চাপা দেয়। পরে স্থানীয়রা আবীরকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে জরুরী বিভাগে আনা হয়। এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এই সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে ওয়ারী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও তাদের সহপাঠীরা হত্যার বিচার দাবিতে যাত্রাবাড়ী-গুলিস্তান সড়ক অবরোধ করে। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের ঘণ্টা খানেক পরে পুলিশ সরিয়ে দেয়। জানা গেছে, নিহতের বাবার নাম মোহাম্মদ হানিফ। চার সন্তানের মধ্যে আবীর সবার ছোট। নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানায়, আবীরের বড় ভাই ৮ বছর আগে গুলিস্তান পার্কের ভেতরের পুকুরে গোসল করতে নেমে ডুবে মারা যায়। ১১ মাস আগে তার মা মারা যান। রাজধানীর ৫৩/৪ নম্বর জয়কালী মন্দির এলাকায় তাদের বাসা। গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা জেলার বড়ুরা উপজেলায়। নবাবপুরে মোহাম্মদ হানিফ ইলেকট্রনিক্স সামগ্রীর ব্যবসা করেন তার বাবা মোঃ হানিফ। নিহত আবীরের চাচাত ভাই সাইফুল ইসলাম বলেন, আবীরের স্কুলে একটি ফেয়ারওয়েল অনুষ্ঠান ছিল। বাসা থেকে বের হয়ে অনুষ্ঠানে যাওয়ার পথে বলধা গার্ডেনের পাশে ওয়াসার একটি গাড়ি তাকে চাপা দেয়। এতে সে ঘটনাস্থলে প্রাণ হারান। পরে পুলিশ তার মরদেহ উদ্ধার করেন। খবর পেয়ে দুর্ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন আবীরের বাবা হানিফ। এ সময় আবীরের বাবা কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, আমার আর কিছুই থাকল না। এখন আমি কী নিয়ে বাঁচমু। আমার তো সব শেষ হয়ে গেল। সকালে ছেলেকে বাসায় রেখে আমি দোকানে গেলাম। কিছুক্ষণ পরেই ফোন আসল ছেলে আমার গাড়ির নিচে পড়ছে। এত অনিরাপদ কেন রাস্তাঘাট! গলি দিয়ে যাচ্ছিল আমার ছেলে। সেখানেও মরণ ফাঁদ তৈরি করা হয়েছে। আমি ছেলে হত্যার বিচার চাই। ওয়ারী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল কুদ্দুস জানান, আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি এসএসসি পরীক্ষা শুরু হবে। গতকাল সোমবার শিক্ষার্থীদের ডাকা হয়েছিল তাদের প্রবেশপত্র দেয়ার জন্য। অনেকেই এসেছে, আবার কেউ আসছিল। আবীর হোসেনও আসছিল। হঠাৎ শুনতে পাই স্কুলের অদূরে রাস্তায় একজন ছাত্রকে চাপা দিয়েছে ওয়াসার গাড়ি। কেউ কেউ এসে বলছিল, আমাদের স্কুলের শিক্ষার্থী। পরে গিয়ে দেখি সে আমার শিক্ষার্থী। আবীর এবার ব্যবসায় বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। প্রধান শিক্ষক আব্দুল কুদ্দুস জানান, এমন মৃত্যু যেন কারও না হয়। আমরা সবার কাছে আবেদন জানাব, স্কুলের সামনের সড়ক যেন সব সময় নিরাপদ থাকে। পুলিশ চালককে আটক করেছে। গাড়ি জব্দ করেছে। আমি এর উপযুক্ত বিচার দাবি করছি। এদিকে ঘটনার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা হানিফ ফ্লাইওভারের সংলগ্ন চান্দ্রিচারন বোস সড়ক অবরোধ করে রাখে। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা আবীরের হত্যার বিচার দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করতে থাকে। ওয়ারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজুর রহমান জানান, শিক্ষার্থীকে চাপা দেয়ার পর গাড়ি নিয়ে চালক পালানোর চেষ্টা করেন। পরে তাকে গুলিস্তান এলাকা থেকে আটক করা হয়। পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দিলেই চালকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ওয়ারী জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) নুরুল আমিন জানান, ওয়াসার গাড়ি চাপায় এসএসসি পরীক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করেছিল।
×