স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ ॥ বিদেশে ড্যান্সবারে উচ্চ বেতনে চাকুরির প্রলোভনে রাজধানী ঢাকা থেকে তরুণী ও নারীদের পাচারের অভিযোগে আন্তর্জাতিক নারী পাচারকারী চক্রের আট সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১১ সদস্যরা। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ট্রাভেল এজেন্সি ও তরুণী সংগ্রহকারী এজেন্ট রয়েছেন। রবিবার রাতে রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর, কেরাণীগঞ্জ ও মুগদা এলাকায় অভিযান চালিয়ে দুই নারীকে উদ্ধার ও তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।
এসময় গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে ৩৯টি নারী পাসেপোর্ট, ৬৬টি পাসপোর্টের ফটোকপি, ৩৬টি ভিসার ফটোকপি, ১৮টি বিমানের টিকিটের ফটোকপি, ১টি সিপিইও, ১৯টি মোবাইল ফোন জব্দ করে র্যাব। সোমবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে র্যাব-১১’র ব্যাটেলিয়ন সদর দফতরের আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ব্যাব-১১ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ আলেপউদ্দিন গণমাধ্যমকে এসব তথ্য জানান। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- রাজধানীর কাকরাইল এলাকার ধানসিঁড়ি ট্রাভেল এজন্সির মালিক শাহাবুদ্দিন, তরুণী সংগ্রাহকারী এজেন্ট রিজভী হোসেন অপু, হৃদয় আহম্মেদ কুদ্দুস, মামুন, স্বপন হোসেন, শিপন, মুসা ও নারী সদস্য শিল্পী আক্তার।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১১ এর সিনিয়র সহকারি পরিচালক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ আলেপ উদ্দিন জানান, ইতোপূর্বে নারী পাচারকারী চক্রের ছয়জন র্যাবের অভিযানে গ্রেফতার হওয়ায় আইন শৃংখলা রক্ষাকারি বাহিনীর নজর এড়াতে অন্যান্য সদস্যরা পাচারের কৌশল পরিবর্তন করে ফেলে। সরাসরি দুবাই ও মালয়েশিয়া পাচার না করে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতসহ আরো কয়েকটি দেশকে ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহার শুরু করে তার। এই চক্রটি দেশের বিভিন্ন পোশাক কারখানার নি¤œবিত্ত সুন্দরী নারী শ্রমিক, তালাকপ্রাপ্ত ও পারিবারিক সমস্যার শিকার তরুণীদেরকে টার্গেট করে নাচ শিখিয়ে বিদেশে ডান্সবারে উচ্চ বেতনে চাকুরি দেবার নামে ফাঁদে ফেলে পাচার করে থাকে। এই পাচারের মূল হোতারা হচ্ছেন বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সির মালিক। তাদের সহায়তা করে থাকেন দেশের বিভিন্ন নাচের প্রশিক্ষণকেন্দ্র ডান্সক্লাবের মালিক ও প্রশিক্ষকরা। গত দেড় বছরে এই চক্রটি পনের থেকে পঁচিশ বছর বয়সের সহস্রাধিক তরুণীকে বিদেশে পাচার করে অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তিনি জানান, সম্প্রতি র্যাবের গোয়েন্দা নজরদারিতে বিষয়টি ধরা পড়লে পাচারকারীদের অবস্থান শনাক্ত করে রবিবার রাতে অভিযান চালিয়ে আটজনকে গ্রেফতার ও তাদের হেফাজত থেকে পাচারের প্রক্রিয়াধীন দুই তরুণীকে উদ্ধার করা হয়। তিনি আরো জানান, গ্রেফতারকৃতরা প্রত্যেকেই পূর্বের মামলার পলাতক আসামী। তাদেরকে ওই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। গ্রেফতারের পর তারা নারী পাচারের অভিযোগ স্বীকার করে র্যাবকে তারা এই সংক্রান্ত সব ধরণের তথ্য প্রদান করেছে।
এর আগে গত ২৩ নবেম্বর নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার তারাবো এলাকা থেকে ডান্সবারে নারী পাচারকারী চক্রের ছয় সদস্যকে গ্রেফতারসহ পাচারের শিকার চার তরুণীকে উদ্ধার করে র্যাব। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে বিদেশে ড্যান্সবারে চাকুরির প্রলোভনে অভিনব কৌশলে সহশ্রাধিক তরুণী পাচারের চাঞ্চল্যকর বিস্তর তথ্য।
