ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

জাপা প্রার্থী মিলনের ১৭ দফা ইশতেহার ঘোষণা

প্রকাশিত: ০৭:২৭, ২৭ জানুয়ারি ২০২০

জাপা প্রার্থী মিলনের  ১৭ দফা ইশতেহার ঘোষণা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ভোটের বাইরে ৬০ শতাংশ ভোট জাতীয় পার্টি মনোনীত দক্ষিণের মেয়র প্রার্থী হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলনের দাবি করে তিনি বলেন, এই ভোটই আমার শক্তি। নগরবাসীর মধ্যে এই বড় অংশটি যদি এক ফেব্রুয়ারি ভোট দেয়ার সুযোগ পান তাহলে আমাদের বিজয় কেউ ঠেকাতে পারবেনা। সোমবার রাজধানীর কাকরাইলস্থ জাপা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলীয় প্রার্থী মিলনের ইশতেহার প্রকাশ উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এসময় তিনি এসব কথা বলেন। যানজটমুক্ত তিলোত্তমা স্বপ্নের ঢাকা উপহার দেয়ার পাশাপাশি ১৭ দফা প্রতিশ্রুতি দেন এই মেয়র প্রার্থী। আশা করছি এবার আর আগের রাতে ভোট হবে না। আগের রাতে ভোট না হলে লাঙ্গল জয়ী হবে এমন মন্তব্য করে জাপা দক্ষিণের মেয়র প্রার্থী ও দলের প্রেসিডিয়ামের সদস্য মিলন বলেন, আমরা আশাকরি জাতীয় নির্বাচনের মতো সিটি করপোরেশন নির্বাচন মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা হাড়াবে না। আগের রাতে ভোট হয় অভিযোগ করে মিলন বলেন, গেলো সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আগের রাতে ভোট হয়েছে। তাই জনমত যাচাইয়ের কোনো সুযোগই ছিল না। সরকার না চাইলে নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারে না বলের মন্তব্য করেন জাপার এই মেয়র প্রার্থী। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থীদের মতো প্রচারে পিছিয়ে থাকলেও শেষ পর্যন্ত ভোটযুদ্ধে মাঠে থাকার কথা জানিয়ে মিলন বলেন, জয়ের জন্যই মাঠে নেমেছি। নির্বাচন সুষ্ঠু হলে আমিই জিতব। কারণ, আমি ঢাকার বাসিন্দা, আমার একটা পরিচিতি আছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ভোটের বাইরে ৬০ শতাংশ ভোট আছে, এই ভোটই আমার শক্তি। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। আশা করছি ভোট নিরপেক্ষ হবে। ভোটাররা যদি ভোট দিতে পারেন, তাহলে আমি জয়ী হব ইনশাআল্লাহ। মহাজোটের শরিক হিসেবে শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকবেন কি না জানতে চাইলে জাপা প্রার্থী বলেন, আমরা ভোটযুদ্ধে আছি, শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকব। এমন কোন বাস্তবতা সামনে আসেনি ভোট থেকে সরে যেতে হবে। মহাজোটের শরিক হিসেবে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছিল একথা জানিয়ে মিলন বলেন, আমরা দক্ষিণের মেয়র ও দুই সিটিতে কিছু কাউন্সিলর চেয়েছিলাম। কিন্তু তারা কিছুই দেয়নি। দলের সিদ্ধান্তেই আমি নির্বাচন করছি।’ আওয়ামী লীগ তাদেও মতো করে করছে। আমরা আমাদের মতো করে নির্বাচন করছি। নির্বাচনী প্রচারে বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন কি না জানতে চাইলে জাপার মেয়র প্রার্থী বলেন, কারো বিরুদ্ধে আমার সুনির্দিষ্ট জোরালো কোনো অভিযোগ নেই। তবে কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে। কোথাও পোস্টার লাগাতে দেয়া হয়নি। প্রচারেও তোকর্মীদের বাধা দেয়া হয়েছে। নিজেকে শতভাগ সৎ প্রার্থী উল্লেখ করে মিলন বলেন, আমার কোনো অবৈধ টাকা নেই। সে কারণে প্রচারে কিছুটা হয়তো পিছিয়ে আছি। তারপরও নেতাকর্মীরা নিজেদের টাকা খরচ করে আমার নির্বাচন করছেন। ইভিএম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ইভিএম-এ আমি কোনদিন ভোট দেইনি। অভিজ্ঞতা নেই। ইভিএম-এ আমার কোনো আপত্তিও নেই। তবে যে পদ্ধতিতেই হোক, নির্বাচন সুষ্ঠু হতে হবে। জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আবদুস সবুর আসুদ, আলমগীর সিকদার লোটন, জহিরুল ইসলাম জহির, উপদেষ্টা জহিরুল আলম রুবেল, ভাইস চেয়ারম্যান মোবারক হোসেন আজাদ, আলমগীর হোসেন, সুলতান মাহমুদ, ফখরুল আহসান শাহজাদা, শারমিন পারভীন লিজা, একেএম আশরাফুজ্জামান খান, মিজানুর রহমান মিরু, জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ সংবাদ সম্মেলনে উপস্বিত ছিলেন। নির্বাচনী ইশতেহারে সাইফুদ্দিন মিলন উল্লেখ করেন, তিনি মেয়র নির্বাচিত হলে রাজধানী ঢাকাকে যানজটমুক্ত রাখবেন। ঢাকাবাসীর জন্য নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ নিশ্চিত করারও অঙ্গিকার করেন তিনি। জলাবদ্ধতা নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ, ফুটপাত পথচারীদের চলাচলের উপযোগী রাখা, পরিচ্ছন্ন ও মশা-মাছিমুক্ত শহর, আইল্যান্ডসমূহে গাছ লাগানোর প্রতিশ্রুতি দেয়া হয় ইশতেহারে। ইশতেহারে সন্ত্রাস, মাদক ও চাঁদাবাজমুক্ত রাজধানী গড়ার কথাও উল্লেখ করা হয়। গণপরিবহন ব্যবস্থা উন্নত ও আরামপ্রদ করাসহ পর্যাপ্ত পরিবহন রাখা, সিটি করপোরেশনের আয়ের নতুন খাত বের করে আয় বৃদ্ধি করা হবে। সিটি করপোরেশনকে পুরোপুরি দুর্নীতিমুক্ত করার ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচিত হলে মেয়র হিসেবে কোন বেতন ভাতা নেব না। নগর উন্নয়নে ২০ বছরের মহাপরিকল্পনা করা হবে। বুড়িগঙ্গাকে দখল ও দূষণমুক্ত করার পাশাপাশি, ভাড়াটিয়াদের স্বার্থ সংরক্ষণ, ভিক্ষুকমুক্ত নগর, হরতাল-অবরোধের মতো ধংসাত্মক রাজনীতি থেকে রাজধানী ঢাকাকে মুক্ত রাখতে জনমত গঠন করে আইন প্রণয়ন করারও প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সাইফুদ্দিন মিলন বলেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী নির্বাচনে হেরে গেলে তাতে সরকারের পতন হবে না। তাই সরকার সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন উপহার দিবে বলে আমার বিশ্বাস। তিনি বলেন, মেয়রদের সৎ হতে হয়। সৎ না হলে গতবারের মত মেয়াদউত্তীর্ণ মশার ঔষধ পাবে জনগণ। এসময় তিনি নগরবাসীর কাছে আক ফেব্রুয়ারি দক্ষিণের মেয়র পদে ভোট প্রার্থনা করেন। উল্লেখ্য, আগামী ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রথমবারের মতো এই দুই সিটির সব কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট নেয়া হবে। ঢাকা উত্তর সিটিতে ১ হাজার ৩১৮টি ভোটকেন্দ্রের ৭ হাজার ৮৫০টি বুথ রয়েছে। এ সব ভোট কেন্দ্রে মোট ৩০ লাখ ৯ হাজার ভোটর ভোট দেবেন। যানজটমুক্ত তিলোত্তমা স্বপ্নের ঢাকা গড়তে চাই- মিলন জাতীয় পার্টির দক্ষিণের মেয়র প্রার্থী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন বলেছেন, নগরবাসীর ভোটে জয়যুক্ত হয়ে যানজটমুক্ত তিলোত্তমা স্বপ্নের ঢাকা গড়তে চাই। এ শহরকে সন্ত্রাস, মাদক ও চাঁদাবাজমুক্ত করতে চাই। তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশনের সকল এলাকার রাস্তা-ঘাট চলাচলের উপযোগী করা হবে। সিটি কর্পোরেশনের নতুন আয়ের খাত বৃদ্ধি করা হবে। রাজধানীবাসীর টাক্স বাড়ানো হবে না। সোমবার নগরীর গুলিস্তান থেকে শুরু করে নয়াবাজার, রায়সাবাজার, ইংলিশ রোড, কোর্ট কাঁচারী, বাংলাবাজার, নর্থ সাউথ রোড, সদরঘাট, লক্ষ্মীবাজার, টিপু সুলতান রোড, ওয়ারী, টিকাটুলীতে লাঙ্গল মার্কায ভোট চেয়ে গণসংযোগ কালে ও বিভিন্ন পথসভায় তিনি এসব কথা বলেন। গণসংযোগকালে অংশ নেন জাপা প্রেসিডিয়াম সদস্য আলমগীর সিকদার লোটন, মহানগর নেতা এম এ সোবহান, আবুল কালাম আজাদ, সমরেশ মন্ডল মানিক, জাহাঙ্গীর আলম, হিরো বাবুল, আফতাব গনি, শামসুল হকসহ স্থানীয় নেতাকর্মীরা।
×