ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

মহিলা সমিতি মঞ্চে ‘গ্রহণকাল’

প্রকাশিত: ০৭:৪৯, ২৭ জানুয়ারি ২০২০

মহিলা সমিতি মঞ্চে ‘গ্রহণকাল’

সংস্কৃতি ডেস্ক ॥ বাংলাদেশ মহিলা সমিতির ড. নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে আগামীকাল ২৮ জানুয়ারি মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টায় মঞ্চস্থ হবে নতুন প্রযোজনা ‘গ্রহণকাল’। ঢাকা নান্দনিক রেপার্টরি প্রযোজিত সৈয়দ মহিদুর রহমান রচিত ‘গ্রহণকাল’ নাটকটি নির্দেশনা দিয়েছেন সৈয়দ শুভ্র। নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করবেন সায়েম সামাদ, সৈয়দা নওশীন ইসলাম দিশা, সৈয়দ শুভ্র, শামসুজ্জামান দুলাল, সৈয়দ রমিত রহমান, মনোজিত কুমার ওঝা। নতুন নাটকের দর্শকপ্রিয়তা নিয়ে অনেকটাই আশাবাদী সায়েম সামাদ। ‘গ্রহণকাল’ নাটকের গল্পে দেখা যাবে যুদ্ধাহত খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহেদ। যে তার দুরন্ত যৌবনে ভালবাসার মানুষকে পেছনে ফেলে চলে গিয়েছিল যুদ্ধের মাঠে। নেতার বজ্রকণ্ঠের উদাত্ত আহ্বান তার স্বপ্নের আকাশটাকে একঝাঁক পায়রা হয়ে তাকে যুদ্ধে মাঠে ডেকেছিল। সে মিশে গিয়েছিল সেই পায়রার সঙ্গে। নেতার বজ্রকণ্ঠ সাতকোটি বাঙালীর গায়ে যেন বাঘের তেজ এনে দিয়েছিল। তারা হায়েনার কণ্ঠনালী ছিঁড়ে ফুঁড়ে লাল-সবুজ পতাকাটি এই জমিনে ওড়াতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। যুদ্ধের যবনিকাপাতের ঠিক পূর্বক্ষণে শাহেদ যুদ্ধাহত হয়ে একটি পা হারায়। দীর্ঘ চিকিৎসায় কেটে যায় বেশ ক’টি বছর। অবশিষ্ট একটি পা নিয়ে যখন সে উঠে দাঁড়ায় তখন সে চেয়ে দেখে পুরো দেশ যেন ন্যুব্জকুব্জ, অথর্ব্য হয়ে গেছে। ২৪টি বছর সংগ্রাম করে একটি মানুষ যে জাতির বুনে এনেছিল বাঘের সাহস। সেই মানুষটিকে হায়নারা খুন করে পুরো জাতিকে যেন মুশিক শাবকে পরিণত করেছে। যেখানেই তাকায় সেখানেই যেন পশ্চাৎপদতার চিহ্ন। যে আদর্শের জন্য ৩০ লাখ প্রাণ অকাতরে বিলিয়ে দিয়েছিল বাঙালী, তা যেন কতিপয় কুলাঙ্গারের কালো থাবায় রাতারাতি উধাও হয়ে গেছে। সর্বত্রই ৭১-এর পরাজিত শত্রুর আস্ফালন। একটি পায়ের খ-িত জীবন নিয়ে শাহেদ আজ হাতড়ে বেড়ায় তার দৃপ্ত যৌবনের সেই হারানো দিনগুলোকে। যে স্বপ্নভরা যৌবনে তার চোখে ভেসেছিল এক মানবিক দেশের ছবি, সেখানে আজ সাম্প্রদায়িক শক্তি ভর করেছে তার ভালবাসার প্রেয়সীর অরক্ষিত দেহে। যার জঠরে জন্ম নিচ্ছে যুদ্ধাপরাধীর সন্তান। নিদারুণ অপমানে ক্রুদ্ধ স্বদেশ মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে বারবার প্রশ্ন রাখে- আমাদের জননীরা কি প্রতিনিয়ত ধর্ষিতা হয়ে দেশদ্রোহীর জন্ম দেবে? দেশপ্রেমিকরা কি নিঃশেষ হয়ে গেছে চিরতরে। ৩২ নম্বরের সিঁড়ি বেয়ে একদা যে রক্ত নিঃশব্দে মিশে গেছে এই দেশের শরীরে, সে রক্ত গড়াড়ে গড়াতে পৌঁছে গেছে বঙ্গোপসাগরে। সে রক্তে আবার গর্জন তুলেছে সাগরের ঢেউয়ের বুকে। সেই গর্জনে কেঁপে উঠছে ধর্ষিতা মাটি। সেই মাটির বুকে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষগুলোর বুকে আবার জ্বলে উঠছে ৭১-এর চিতা। যে চিতার আগুনে তারা দেখতে পাচ্ছে তাদের পিতার নির্ভীক মুখের ছবি। যে মুখ রেসকোর্স ময়দানে দাঁড়িয়ে আবার হুঙ্কার দিচ্ছে জয় বাংলা। এ হুঙ্কার দাবায়ে রাখে এমন সাধ্য কার। মঞ্চনাটকে অন্যতম কৃতীমান পুরুষ সায়েম সামাদ। মাঝের কিছুটা সময় মঞ্চ থেকে দূরে ছিলেন। ‘গ্রহণকাল’ নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে ৬ বছর পর আবার মঞ্চে ফিরছেন এই অভিনেতা। সায়েম সামাদ ঘোষণা দিয়েছেন এখন থেকে আবারও নিয়মিত অভিনয় করবেন। বরেণ্য এই অভিনেতা জানিয়েছেন ‘গ্রহণকাল’ নাটকে বিশেষ একটি চরিত্রে অভিনয় করছেন। এই প্রযোজনায় অভিনয়ের মাধ্যমে আবার নতুন করে মঞ্চে আবির্ভূত হচ্ছেন তিনি। অভিনেতা সায়েম সামাদ ১৯৯২ সাল থেকে নিয়মিত পদাতিক নাট্য সংসদে কাজ করছেন। ১৯৯১ সালে মুক্তধারা আবৃত্তি সংগঠনের প্রথম কাজের মাধ্যমে নিজেকে তৈরি করে। শিল্পকলায় ১৯৯২ সালে প্রযোজনা কেন্দ্রিক কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন। সেখানে ‘মেসমেকার’ নাটকে অভিনয় করেন। এ বছরই তিনি পদাতিক নাট্য সংসদে যোগ দেন। মঞ্চে তিনি ১৯৯৪ সালে ‘চক্কর’ নাটকে প্রথম অভিনয় করে। এরপর সায়েম সামাদ ‘বল্লবপুরের রূপকথা’, ‘মনষার পালা’, ‘খেতমজুর খৈমুদ্দিন’, ‘মেশিন’, ‘সারি সারি লাশ’, ‘তারামন বিবি’, ‘ট্র্যাইব্যুনাল’, ‘মাউসট্র্যাপ’, ‘বেদের মেয়ে’, ‘জনমাংক’ প্রভৃতি নাটকে অভিনয় করেছেন। বৃটিশ কাউন্সিলে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় অংশগ্রহণসহ বিভিন্ন দলের সঙ্গে অভিনয় ও নির্দেশনা দিয়ে অসংখ্য পুরস্কৃত হয়েছেন। মঞ্চের পাশাপাশি টিভি নাটক, বিজ্ঞাপন ও চলচ্চিত্রেও নিয়মিতভাবে অভিনয় করছেন সায়েম সামাদ। বাংলাদেশের স্বপ্রতিভ এই অভিনেতা আজীবন মঞ্চেই কাজ করতে চান। তারজন্য অনেক অনেক শুভ কামনা।
×