ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

টানা দুই জয় পাকিস্তানের

সহজেই টি২০ সিরিজ হারল বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১১:১৮, ২৬ জানুয়ারি ২০২০

সহজেই টি২০ সিরিজ হারল বাংলাদেশ

মিথুন আশরাফ ॥ সিরিজ জয়ের আশা নিয়ে পাকিস্তান যায় বাংলাদেশ ক্রিকেটাররা। উল্টো টানা দুই টি২০ ম্যাচে হেরে তিন ম্যাচের সিরিজ এক ম্যাচ হাতে রেখেই হার হয়ে গেছে বাংলাদেশের। ব্যাটিংয়ে প্রথম টি২০’র চেয়েও দ্বিতীয় টি২০তে করুণ দশা হয়। এবার তো বোলিংয়েও কিছুই করা যায়নি। আর তাই শনিবার দ্বিতীয় টি২০তে ৯ উইকেটে হারায় সিরিজ হার হয় বাংলাদেশের। প্রথম টি২০তে ৫ উইকেটে হেরেছিল মাহমুদুল্লাহ রিয়াদবাহিনী। দ্বিতীয় টি২০তে হারায় ২-০ ব্যবধানে সিরিজ হার হয়ে গেছে। এখন সোমবার সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টি২০ ম্যাচে বাংলাদেশ যদি জিততে পারে তাহলে সিরিজের ব্যবধান ২-১ করা যাবে। সান্ত¡নার জয় নিয়ে দেশে ফিরতে পারব। আর যদি হার হয় তাহলে হোয়াইটওয়াশ হবে বাংলাদেশ। লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে এবারও টস জিতে বাংলাদেশ আগে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেয়। প্রথম টি২০তে বোলিংটা ভাল হলেও ব্যাটিং ধসের সঙ্গে ফিল্ডিং যাচ্ছে-তাই হওয়ায় হারে বাংলাদেশ। এবারও ব্যাটিংটা একই ব্যর্থতার বৃত্তে আটকা থাকে। ৬ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ১৩৬ রান করে বাংলাদেশ। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৬৫ রান করেন তামিম ইকবাল। বল হাতে মোহাম্মদ হাসনাইন নেন ২ উইকেট। জবাবে ১ উইকেট হারিয়ে ১৬.৪ ওভারে ১৩৭ রান করে জিতে যায় পাকিস্তান। অপরাজিত ৬৬ রান করা বাবর আজম ও ৬৭ রান করা মোহাম্মদ হাফিজের অবিচ্ছিন্ন ১৩১ রানের জুটিতে সহজেই জিতে যায় পাকিস্তান। বাংলাদেশকে পাত্তাই দেয়নি। পাকিস্তান শিবিরেও শুরুতে আঘাত হানা যায়। দলের ৬ রানেই এহসান আলিকে সাজঘরে ফেরান শফিউল ইসলাম। কিন্তু এরপর আর কোন উইকেট শিকার করা যায়নি। বাবর ও হাফিজ মিলে এতটাই সুন্দর ব্যাটিং করতে থাকেন মনে হয় ব্যাটিং করা কত সহজ। অথচ বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা যখন ব্যাটিং করেছেন, মনে হয়েছে ব্যাটিং করা কত কঠিন। বাবর ও হাফিজ মিলেই জয় এনে দেন পাকিস্তানকে। দুইজন মিলে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় উইকেটে সর্বোচ্চ রানের জুটিই গড়েন। এর আগে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় উইকেটে পাকিস্তানের ১০০ রানেরই কোন জুটি ছিল না। ২০১৬ সালের টি২০ বিশ্বকাপে কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে দ্বিতীয় উইকেটে আহমেদ শেহজাদ ও মোহাম্মদ হাফিজ মিলে যে ৯৫ রানের জুটি গড়েছিলেন, সেটিই সর্বোচ্চ জুটি ছিল। কিন্তু লাহোরে তা ভেঙ্গে দেন বাবর ও হাফিজ। তাতে জয়ও বড় ব্যবধানে মিলে যায়। সিরিজ জয়ও হয়ে যায়। বাংলাদেশের যে ক্রিকেটার এবার পাকিস্তান সফরে টি২০ সিরিজে সুযোগ পেয়েছেন তারাই বিপিএলে দারুণ খেলেছেন। তাই সুযোগ হয়েছে। কিন্তু পাকিস্তান সফরে গিয়ে টি২০ খেলাই যেন হচ্ছে না। শুরুতেই ১৬ রানে ক্যাচ আউট হওয়া থেকে বাঁচেন তামিম। এরপর তার সহজাত ধীরে খেলা শুরুতে বজায় রাখলেও শেষে গিয়ে মারমুখী হন। তাতে ব্যক্তিগত বড় স্কোরও গড়তে পারেন। কিন্তু বাকিরা ব্যর্থ হওয়ায় দলের বড় স্কোর হয়নি। অল্পতেই আটকে থাকে বাংলাদেশ। নাঈম শেখ এক ম্যাচ ভাল করেছেন। দ্বিতীয় টি২০তেই রানের খাতা খোলার আগে সাজঘরে ফিরেন। মোহাম্মদ মিঠুনের পরিবর্তে স্পিন অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান (৯) একাদশে সুযোগ পেয়ে ব্যাট হাতে ব্যর্থ হন। লিটন কুমার দাস (৮) টানা দুই ম্যাচেই ব্যর্থতার ধারায় থাকেন। কি যে হয়েছে ব্যাটসম্যানদের। টি২০তে পাওয়ার প্লে’তে আর শেষ ১০ ওভারেই বেশি রান আসে। কিন্তু বাংলাদেশ কিনা পাওয়ার প্লেতে ৬ ওভারে ৩৩ রানের বেশি করতে পারেনি। পাওয়ার প্লেতে ফিল্ডিংয়ে সীমাবদ্ধতা থাকে। তখন বাউন্ডারি খুব স্বাচ্ছন্দ্যে হাঁকানো যায়। একটি দল যখন এই সময়েই ব্যর্থ হয়, তখন স্কোর বড় করা মুশকিল হয়ে পড়ে। তামিম ইকবাল ও আফিফ হোসেন ধ্রুব মিলে অবশ্য রানের গতি বাড়ানোর চেষ্টা করেন। ১০ ওভারে ৫৭ রান করে বাংলাদেশ। যা খুবই বিপদ ডেকে আনে। আবার ৪১ রানের মধ্যে নাঈম, মেহেদী ও লিটন আউট হয়ে যান। একটি বড় জুটি আর ধুমধাড়াক্কা ব্যাটিং করা ছাড়া কোন পথই খোলা থাকেনি। ১০ ওভার পর তামিম ও আফিফ মিলে সেই পথই খুঁজতে থাকেন। আফিফ ব্যাট হাতে নামার পর থেকে রানের গতি সচল হতে থাকে। মারমুখী ব্যাটিং করতে থাকেন আফিফ। ছক্কা-চার হাঁকাতে থাকেন। তামিমও ধীরে ব্যাটিং করা থেকে কিছুটা দ্রুত ব্যাটিং করার পথে এগিয়ে যেতে থাকেন। দুইজন মিলে দলকে যখন ৮৬ রানে নিয়ে যান তখন ৪৫ রানের জুটি হয় তখনই একটু দুর্বল শটে আফিফ (২১) আউট হয়ে যান। এই জুটি বড় কিছু করার আশা দেখায়। তা হতেও থাকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এর বেশি আর যেতে পারেননি আফিফ। আফিফ না পারলেও তামিম এগিয়ে যেতে থাকেন। হাফ সেঞ্চুরিও করে ফেলেন। দুই টি২০ মিলিয়ে যা বাংলাদেশের ইনিংসের একমাত্র হাফ সেঞ্চুরি হয়ে থাকে। দলও ১০০ রান করে ফেলে। এরপর তামিম ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ পথটা মসৃণই করে তুলতে থাকেন। কিন্তু দলের ১১৭ রান হতেই ৫৩ বলে ৭ চার ও ১ ছক্কায় ৬৫ রান করে তামিম রান আউট হয়ে যান তখন বিপদ ঘনিয়ে আসে। দল যে শেষ পর্যন্ত ১৫০ রানও করতে পারবে না, তা বোঝা হয়ে যায়। কিন্তু তাই বলে প্রথম টি২০তে গড়া ১৪১ রানকেও টপকাতে পারবে না। তাই হয়েছে। তামিম-মাহমুদুল্লাহর জুটি পঞ্চম উইকেটে ৩১ রান স্কোরবোর্ডে যোগ করে। তামিম আউটের ৯ রানের মধ্যে মাহমুদুল্লাহও (১২) আউট হয়ে যান। ততক্ষণে শেষ ওভারে চলে আসে খেলা। হাতে থাকে ৫ বল। এই ৫ বলে আমিনুল ইসলাম বিপ্লব ৪ বল খেলতে পেরে দুটি বাউন্ডারি হাঁকান। তাতে ১৩৬ রানে পৌঁছানো যায়। নাহলে তাও হতো না। এই রান নিয়ে কী আর জেতা যায়? প্রথম টি২০তে পাকিস্তানকে শেষ ওভার পর্যন্ত ঠেলে নেয়া গেছে। কিন্তু এবার দ্বিতীয় টি২০তে ২০ বল বাকি থাকতেই সহজেই জিতে গেছে পাকিস্তান। এবার বাংলাদেশকে উড়িয়ে দিয়েছে।
×