ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

শান্তিপূর্ণ ভোট অনুষ্ঠানে মনিটরিং সেল হচ্ছে

প্রকাশিত: ১০:৩৩, ২৫ জানুয়ারি ২০২০

 শান্তিপূর্ণ ভোট অনুষ্ঠানে মনিটরিং সেল  হচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আসন্ন ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অবাধ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচন কমিশনের অধীনে আইনশৃঙ্খলা সমন্বয় ও মনিটরিং সেল গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ভোটের দিন শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বিষয়ক সার্বিক কার্যক্রম এই সেলের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা হবে। কোন অপ্রীতিকর ঘটনা বা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে এই সেলের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিশেষ করে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য এই সেলের মাধ্যমে দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধন করা হবে। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি হবে ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি নির্বাচন। নির্বাচনের বাকি আর মাত্র ছয়দিন। কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন নির্বাচনের দিন শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে তারা সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তফসিল ঘোষণার পর থেকে এখন পর্যন্ত নির্বাচনী পরিবেশে ইসি বেশ সন্তুষ্ট। নির্বাচনের আগে বাকি দিনগুলোতে যাতে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকে সে চেষ্টাও তারা করে যাচ্ছেন। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে যাতে কোন বিঘœ না ঘটে সেজন্য সমন্বয় সেলের মাধ্যমে নির্বাচনের দিন পুরো পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ইসির উপসচিব মোঃ আতিয়ার রহমান স্বাক্ষরিত ইসির এক বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালকে প্রধান করে আইনশৃঙ্খলা সমন্বয় ও মনিটরিং সেল গঠন করা হবে। এছাড়া জননিরাপত্তা বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে উপসচিবের নিচে নয় এমন একজন কর্মকর্তা, পুলিশ হেডকোয়ার্টারের পুলিশ সুপার বা অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নিচে নন এমন একজন কর্মকর্তা, বিজিবি, র‌্যাব আনসার ও ভিডিপির মেজর বা উপ-পরিচালকের নিচে নন এমন একজন কর্মকর্তা এবং আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বা সহকারী পুলিশ সুপারের নিচে নন এমন একজন কর্মকর্তা এই সমন্বয় সেলে অন্তর্ভুক্ত থাকবেন। ভোটের দিন আগারগাঁও নির্বাচন কমিশনের পঞ্চম তলায় এই সেলের কার্যক্রম পরিচালিত হবে। প্রয়োজনে ভোটের পরে আরও দুএকদিন এই কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হতে পারে বলে জানা গেছে। আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক সেলের কার্যক্রম সম্পর্কে বলা হয়েছে নির্বাচনের দিন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে কমিশনকে ক্ষণে ক্ষণে অবহিত করা হবে। কোথাও কোন বিশৃঙ্খল বা গোলযোগ পরিবেশ সৃষ্টি হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হবে। ইতোমধ্যে ঢাকা সিটি নির্বাচন নির্বিঘœ করতে নির্বাচন কমিশন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক শেষ করেছে। গত ২২ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সব সংস্থা ভোটের দিন সমন্বিতভাবে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভোট নিয়ে গুজব ছড়িয়ে কেউ যাতে সুবিধা নিতে না পারে সেদিকেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নজর রাখবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে সার্বিক ভোটের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রয়েছে। ভোটে বড় ধরনের গোলযোগ সৃষ্টির কোন আশঙ্কা নেই। গোয়েন্দা বাহিনীর পক্ষ থেকে কমিশনকে জানানো হয়েছে ঢাকার দুই সিটিতে শুধুমাত্র ১৮টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ। তাছাড়া তাদের কাছে এ ধরনের রিপোর্ট নেই যে, এখানে খারাপ কিছু হতে পারে। একই সঙ্গে ভবিষ্যতে এমন কিছু হতে পারে তার রিপোর্টও তাদের কাছে নেই। সব সময়ই তারা সতর্ক আছেন, কোন সমস্যা থাকলে তারা ব্যবস্থা নেবেন।’ ইসির সিনিয়র সচিব মোঃ আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, সিটি নির্বাচনের দিন ঢাকার দুই সিটিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৪০ হাজার সদস্য মাঠে থাকবে। কেন্দ্রভিত্তিক সাধারণ কেন্দ্রে ১৬ ও গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ১৮ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য থাকবেন। এছাড়া স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে র‌্যাব ও বিজিবি সদস্য থাকবেন। কেন্দ্রে সংখ্যা অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হবে। ইসি কর্মকর্তারা জানান, গত ২২ ডিসেম্বর ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর এখন পর্যন্ত অপ্রীতিকর কোন ঘটনা ঘটেনি। প্রার্থীরা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচনী প্রচার চালাতে পারছেন। বিএনপির একজন মেয়র প্রার্থীর প্রচারে হামলা ছাড়া আর বড় কোন ঘটনা না থাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছেও তা ‘উৎসবমুখর পরিবেশের’ স্বস্তি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ভোটের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে নির্বাচনের পরিবেশের ওপর কমিশন থেকেও কড়া নজর রাখা হচ্ছে। বিশেষ করে সোশাল মিডিয়ায় গুজব ছড়ানো যেন না হয় এবং অনেকের বিরুদ্ধে মামলার রেকর্ড ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের কোন্দলকে কেন্দ্র করে নির্বাচনী পরিবেশে যেন বিঘœ না ঘটে সেদিকে কঠোর নজরদারির কথা বলেছেন তারা। ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এক্ষেত্রে ভোটের দুইদিন আগে থেকে ভোটের দু’দিন পর পর্যন্ত মোট পাঁচদিন বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন রাখা হবে। ভোটকেন্দ্রে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ভোটগ্রহণের দিন এবং তার আগে ২ দিন ও পরে ১ দিন মোট ৪ দিনের জন্য নিয়োজিত থাকবে। তবে অঙ্গীভূত আনসার ও ভিডিপি ৫ দিনের জন্য নিয়োজিত থাকবে। অর্থাৎ ভোটের পাহারায় বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যদের পাঁচদিন ৩০ জানুয়ারি থেকে ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত নিয়োজিত রাখবে ইসি। কেন্দ্রে বাইরের কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হবে। উত্তর সিটির ৫৪টি ওয়ার্ডে পুলিশ ও এপিবিএন সমন্বয়ে ৫৪টি মোবাইল ও ১৮টি স্ট্রাইকিং ফোর্স, র‌্যাবের ৫৪টি টিম ও ২৭ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হবে। দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ৭৫টি ওয়ার্ডে পুলিশ ও এপিবিএন সমন্বয়ে ৭৫টি মোবাইল ও ২৫টি স্ট্রাইকিং ফোর্স, র‌্যাবের ৭৫টি টিম ও ৩৮ প্লাটুন বিজিবি দায়িত্ব পালন করবে। নির্বাচনী এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ভোটের দু’দিন আগ থেকে পরের দিন পর্যন্ত চার দিন অর্থাৎ ৩০ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোতায়েন থাকবে মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স। নির্বাচনী আচরণ বিধি প্রতিপালন ও অপরাধের বিচার কাজের জন্য দুই সিটিতে ১২৯ জন নির্বাহী হাকিম ও ৬৪ জন বিচারিক হাকিম থাকবে। আগামী ৩০ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নির্বাচনী মাঠে থাকবেন। ভোটের দিন আইন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দায়িত্বপ্রপ্ত এসব বাহিনীর কার্যক্রম ও সমন্বয় ধারনের এই মনিটরিং ও সমন্বয় সেল কাজ করবে।
×