ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কক্সবাজারের লাবণী পয়েন্টে সৈকত সাংস্কৃতিক উৎসব

প্রকাশিত: ১০:০৯, ২৫ জানুয়ারি ২০২০

   কক্সবাজারের লাবণী পয়েন্টে  সৈকত সাংস্কৃতিক উৎসব

মনোয়ার হোসেন, কক্সবাজার থেকে ॥ সাগর পাড়ে বয়ে যায় সংস্কৃতির স্নিগ্ধ স্রোতধারা। সেই স্রোতধারায় ঢেউয়ের শব্দ তরঙ্গের সঙ্গে মিশে যায় সুর মূর্ছনা। নাচের নান্দনিকতায় আলোড়িত হয় বিশাল বালিয়াড়ি। অসীম আকাশে ওড়াউড়ি করে রঙ্গিলা ঘুড়ি। এভাবেই রূপময় হয়ে ওঠে সৈকত সাংস্কৃতিক উৎসব। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারের লাবণী পয়েন্টে অনুষ্ঠিত হলো এই বর্ণিল আয়োজন। সৃজনশীল মানবিক বাংলাদেশ বিনির্মাণ কর্মসূচীর অংশ হিসেবে শুক্রবার সূচনা হওয়া দুই দিনব্যাপী উৎসবটির আয়োজক শিল্পকলা একাডেমি। বিকেল থেকেই উৎসবের রং ছড়িয়েছে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে। মিলনায়তনভিত্তিক বৃত্তবন্দী সংস্কৃতির বদলে বালুকা ভূমির উন্মুক্ত স্থানে বহুমাত্রিক পরিবেশনার আকর্ষণে উৎসবে শামিল হয় কয়েক হাজার দর্শক। পর্যটন নগরী কক্সবাজার পরিণত হয় আনন্দময় সংস্কৃতি নগরীতে। সে আয়োজনে দেখা মেলে নয়নজুড়ানো ময়ূর নাচ থেকে ছাতা নৃত্য। শোনা গেল পাহাড়ী জনজীবনের গান থেকে বাংলার শেকড়সন্ধানী লোকসঙ্গীত। সেই সুবাদে সমুদ্রের গর্জন ছাপিয়ে ঝলমল করেছে সৈকত সংস্কৃতি উৎসব। বিকেল চারটা থেকে রাত নয়টা অবধি চলেছে মনমাতানো এ আয়োজন। এ উৎসবকে কেন্দ্র করে লাবণী পয়েন্টে সমবেত হন ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং পার্বত্য তিন জেলার পাঁচ শ’ শিল্পী। আয়োজনের সহযোগিতা করেছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। অনুষ্ঠান মঞ্চের পাশেই মুজিববর্ষ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার মেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৪৩ ফিট দৈর্ঘ্য ও ৩২ ফিট প্রস্থের প্রতিকৃতি স্থাপন করা হয় লাবণী পয়েন্টের প্রবেশমুখে। চারুশিল্পী সংসদের শিল্পীদের ২৫ শিল্পীর যৌথ প্রয়াসে চিত্রিত হয়েছে এ প্রতিকৃতি। সৈকত সাংস্কৃতিক উৎসব শুধু বেড়াতে আসা পর্যটকদের কাছেই নয় কক্সবাজারের স্থানীয় বাসিন্দাদের মাঝেও ছড়িয়ে দিয়েছে উৎসবের আমেজ। বিকেলে বর্ণাঢ্য র‌্যালি কক্সবাজার শহর প্রদক্ষিণ করে। প্রধান অতিথি হিসেবে উৎসব উদ্বোধন করেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। বিশেষ অতিথি ছিলেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ আদিবুল ইসলাম ও কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান। সভাপতিত্ব করেন কক্সবাজারের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মোঃ আশরাফুল আফসার। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কায়সারুল হক জুয়েল, কক্সবাজার জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিত পাল বিশু প্রমুখ। উদ্বোধনী বক্তব্যে লিয়াকত আলী লাকী বলেন, আমরা সংস্কৃতির প্রবাহকে মানুষের কাছে নিয়ে যেতে চাই। তৃণমূলে পৌঁছে দিতে চাই সংস্কৃতির আলো। সারাদেশের লাখ লাখ পর্যটক কক্সবাজারে আসে। যারা রাজধানীর বাসিন্দা নন। তাদের কাছে দেশের শিল্পীদের আন্তর্জাতিক মানের পরিবেশনা তুলে ধরা এ আয়োজনের লক্ষ্য। এমনইভাবে দেশজুড়েই এ ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। শিল্পকলা একাডেমির এ্যাক্রোবেটিক শিল্পীদের পরিবেশনা দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। তারা প্রদর্শন করেন শরীরী কসরত দেখানো মার্শাল আর্ট ও রিং খেলা। ঝর্ণা থেকে পানি তোলার নাচ দেখায় পাহাড়ী শিল্পীরা। স্বাগত নৃত্য পরিবেশন করে বান্দরবানের বম সম্প্রদায়ের শিল্পীরা। মানসী বড়ুয়া শুনিয়েছেন ‘ভালোবেসে সখি নিভৃতে যতনে’। মীনা মল্লিকের কণ্ঠে গীত হয় ‘ওরে বাঁক খালির মাঝি রে’। শিশু শিল্পী মেহরিন রহমান শোনান ‘প্রেম রসিকা হব কেমনে’। ময়ূর নৃত্য পরিবেশন করে বান্দরবানের মারমা সম্প্রদায়ের শিল্পীরা। নববর্ষের নাচ দেখায় ম্রো সম্প্রদায়ের নৃত্যশিল্পীরা। বিজু নৃত্য পরিবেশন করে চাকমা সম্প্রদায়ের শিল্পীরা। একক কণ্ঠে গান শোনান পপি বড়ুয়া, রূপসা, মোঃ জাহিদ, রাফি প্রমুখ। এছাড়াও রাখাইন সম্প্রদায়ের শিল্পীরাও নৃত্য পরিবেশন করে। ছাতা নৃত্য পরিবেশন করে মারমা সম্প্রদায়ের শিল্পীরা। বোতল নাচ দেখায় ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের শিল্পীরা। ছিল বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নৃত্য দল ও বাউল দলের লোক গানের পরিবেশনা। আজ শনিবার বেলা চারটায় শুরু হবে সমাপনী দিনের উৎসব। চলবে রাত নয়টা পর্যন্ত।
×