ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আইসিজের রায় আশ্রয় প্রার্থীদের আস্থা ফেরাতে ভূমিকা রাখবে

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ফেব্রুয়ারিতে বৈঠক হতে পারে

প্রকাশিত: ১০:০৪, ২৫ জানুয়ারি ২০২০

  রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে  ফেব্রুয়ারিতে বৈঠক হতে পারে

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের আদেশ রোহিঙ্গাদের আস্থা ফেরাতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। আশ্রিতদের নিজ ভূমে মিয়ানমারে ফেরত যেতে উৎসাহিত করবে। আইসিজের আদেশ রোহিঙ্গাদের জন্য বিজয় হিসেবে ধরে নিয়ে বাংলাদেশ প্রত্যাবাসন কার্যক্রমে তৎপরতা বাড়িয়ে দিয়েছে। মিয়ানমার রাজি থাকলে ফেব্রুয়ারি মাসেই দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করতে চায় বাংলাদেশ। এজন্য ইতোমধ্যে মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিবকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য রাখাইনে সহায়ক পরিবেশ তৈরি করছে না মিয়ানমার সরকার। এজন্য বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গারা সহজে তাদের দেশে ফিরে যেতে আগ্রহী নয় বলে জানান সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র। সূত্র মতে, রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে এসে উখিয়া-টেকনাফে আশ্রয় নেয়া ১২ লক্ষাধিক রোহিঙ্গার প্রত্যাবাসনের বিষয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় বসতে চায় বাংলাদেশ। মিয়ানমার রাজি থাকলে এ বৈঠকটি বিলম্ব না করে ফেব্রুয়ারিতেই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বাংলাদেশ পক্ষের সংশ্লিষ্ট নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশ যথেষ্ট ভূমিকা রাখছে সত্যি। তবে মিয়ানমার সরকারের আগ্রহ কম বলে প্রতীয়মান হয়। বৈঠকে তারা সব কিছু ‘ইয়েস’ বলে জানালেও ওপারে (মিয়ানমার) যাওয়ার পর সব ভুলে যান জেডব্লিউজি মিয়ানমার পক্ষের প্রতিনিধিরা। তা না হলে দুই বছরেও তাদের দেশের বাসিন্দা মাত্র ১০ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা যাচাই করে পাঠাতে পারেনি বাংলাদেশে। অথচ গত দুই বছরে যাচাই-বাছাই করার জন্য বাংলাদেশ ৫৫ হাজারের বেশি রোহিঙ্গার তালিকা দিয়েছে মিয়ানমারকে। অন্তত ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে বাংলাদেশের উখিয়া-টেকনাফে গাদাগাদি করে আশ্রয় নিয়েছে, তা বিশ্বের অধিকাংশ রাষ্ট্রই জানে। বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র প্রধানগণ সফরে এসে এমনকি খোদ মিয়ানমারের সমাজকল্যাণমন্ত্রী সফরে এসে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করে গেছেন। এই রোহিঙ্গার টাল (সমাগম) থেকে প্রত্যাবাসনের জন্য জেডব্লিউজি (রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের) বাংলাদেশ পক্ষের দেয়া ৫৫ হাজার রোহিঙ্গার নামের তালিকার মধ্যে এখন পর্যন্ত ১০ হাজার রোহিঙ্গার যাচাই-বাছাই শেষ হয়নি। সূত্র আরও জানায়, বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিবকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিবের ঢাকা সফরের প্রাক্কালে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক করতে আগ্রহী বাংলাদেশ সরকার। প্রত্যাবাসন সংশ্লিষ্ট কক্সবাজারের এক উর্ধতন কর্মকর্তা বলেন, প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের আলোচনা অব্যাহত থাকবে। আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার হচ্ছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন। এটি যেন টেকসই হয় এবং রোহিঙ্গারা যেন আর ফিরে না আসে। সেজন্য ২০১৭ সালে আমরা একটি চুক্তি সই করেছি। তার আলোকে আমরা কাজ করব। এ বিষয়ে মিয়ানমার রাজি থাকলে ফেব্রুয়ারি মাসেই দ্বিপক্ষীয় এ বৈঠক অনুষ্ঠান করতে চাই বাংলাদেশ। সূত্র মতে, গত বছর আমরা দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেছি, কিন্তু তেমন ফলপ্রসূ হয়নি। বহুপাক্ষিকভাবে আমরা বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছি, কিন্তু দ্বিপক্ষীয় আলোচনার দরজা আমরা কখনও বন্ধ করিনি। ২০১৮ সালে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের পর পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের একাধিক বৈঠক হয়েছে। কিন্তু মিয়ানমারের অনীহার কারণে আমরা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কার্যক্রম এখনও শুরু করতে পারিনি বলে তিনি জানান। স্থানীয়রা বলেন, ইতিপূর্বেও কয়েকবার রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঘটেছিল বাংলাদেশে। তবে এতদিন থাকেনি। এবারও তাড়াতাড়ি ফিরে যাবে বলে আমরা রোহিঙ্গাদের জায়গা দিয়েছিলাম। আর এখন দেখা যাচ্ছে রোহিঙ্গারা সহজে ফিরে যাচ্ছে না। অতিরিক্ত ত্রাণ ও বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পাওয়ায় রোহিঙ্গারা স্বদেশে ফিরতে চাইছে না বলে তাদের ধারণা। তারা আরও বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে পুরনো রোহিঙ্গারা ও কিছু এনজিও ষড়যন্ত্র করছে। ১৯৭৮ সালে পালিয়ে এসে প্রত্যাবাসনে ফাঁকি দিয়ে এ দেশে থেকে যাওয়া কিছু রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী বাংলাদেশী নাগরিক দাবি করছে। ওই পুরনো রোহিঙ্গা নেতা (আরএসও) অনেকে কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে দালান নির্মাণ করে বাংলাদেশী জাতীয় সনদ হাতিয়ে নিয়ে দিব্যি বসবাস করে চলেছে। মূলত তারাই স্বজনদের সহজে ফিরে যেতে নিষেধ করছে। আবার তাদের বিদ্রোহী গ্রুপ আরএসও দল ভারি করতে পুরনো রোহিঙ্গা নেতারা ক্যাম্পে রোহিঙ্গা যুবকদের সংগঠিত করছে। রোহিঙ্গারা প্রত্যাবাসন হয়ে গেলে আরএসওর সুবিধাদি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। বেশি দামের বেতনে চাকরি হারাতে হবে ধারণায় কিছু এনজিও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ষড়যন্ত্র করছে বলে জানান স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
×