ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধার তিস্তা চরে একই নামে দুইটি মাদ্রাসা

প্রকাশিত: ০৩:৩২, ২৪ জানুয়ারি ২০২০

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধার তিস্তা চরে একই নামে দুইটি মাদ্রাসা

নিজস্ব সংবাদদাতা, লালমনিরহাট ॥ জেলার হাতীবান্ধা উপজেলায় তিস্তা চরের মাদ্রসা সুপার ও বিদ্যালয়ের সভাপতির দ্বন্দের জেরে একই নামে দুইটি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা পাশাপাশি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এনিয়ে গ্রামটিতে চরম উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে বিপাকে পড়েছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবগণ। জানা গেছে, কয়েক বছর আগে জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার ঘোড়ামারা পশ্চিম হলদীবাড়ি গ্রামে এসইউ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়। এ বছর এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা পহেলা জানুয়ারি বছরের প্রথমদিন বই উৎসবের দিনই নতুন বই পেয়েছে। শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই দেখা গেছে। ক্লাস রুমে ও ক্লাসের বাহিরে রোদ্দুরে বসে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি শিক্ষার্থীরা পড়াশুনা করছে। কিন্তু এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৫ শত গজ উত্তরে একই নামে আরও একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে একটি নতুন ঘরের মেঝে খড়ের উপর বসে কয়েকজন শিশু শিক্ষার্থী পড়াশুনা করছে। এ বিষয়ে গ্রামের বাসিন্ধা ও একজন শিক্ষার্থীর অভিভাবক হালিমুর রহমান (৪০) জানান, গ্রামটিতে একই নামে পাশাপাশি দুই মাদ্রাসা চলছে। কোনটা আসল কোনটা নকল বুঝি উঠতে পারচ্ছি না। তিনি প্রশাসনে কাছে অনুরোধ করেছেন গ্রামটির শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে দ্রুত বিষয়টি সমাধান করে দিতে। তিস্তা চর ঘোড়ামারা পশ্চিম হলদীবাড়ি গ্রামে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত চরের শিশুদের জন্য ১৯৮২ সালে ইসলামী শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে ঘোড়ামারা পশ্চিম হলদীবাড়ি এসইউ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা স্থাপন হয়। কিন্তু কয়েক দফা তিস্তা নদীর ভাঙ্গনের কবলে পরে মাদ্রাসাটি বন্ধ হয়ে যায়। পুনরায় ২০১৩ সাথে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসাটি চালু হয় তখন সভাপতি ছিলেন আব্দুল গনি। তিনি মারা যান। পরে ওই মাদ্রাসার সভাপতি নির্বাচিত হয় আব্দুর রউফ (আদু)। মাদ্রাসার সভাপতি আব্দুর রউফ (আদু) ওই মাদ্রাসার জন্য সুপার সহ ৫ জন সহকারী শিক্ষক নিয়োগ প্রদান করেন। মাদ্রাসাটির কোড নম্বর ৫১৭৬৬। মাদ্রাসাটিতে ১’শ ৩০ জন কোমলমতি শিক্ষার্থী নিয়ে সুনামের সাথে পরিচালিত হয়ে আসছে। ২০১৬ সালে ওই প্রতিষ্ঠান হতে ৫ম শ্রেনিতে শিক্ষা সমাপনি পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করে। সম্প্রতি মাদ্রাসাটি ডিআর ভুক্ত করার জন্য মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে কাগজ পত্র চেয়ে পাঠিয়েছে। এই ঘটনার পর মাদ্রাসাটি সভাপতি আব্দুর রউফ (আদু) মাদ্রাসার সুপার শাহজাহান আলীকে নিজ বাড়িতে ডেকে নিয়ে যায়। পরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির সকল কাজপত্র কেড়ে নিয়ে তিন শত টাকার ফাঁকা ষ্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে নেয়। পরে তিনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির নিয়োগকৃত সুপারসহ ৫ শিক্ষকের কাছে ২০ লক্ষ টাকা উৎকোচ দাবি করেন। টাকা না দিলে চাকুরীচ্যুত করার হুমকি প্রদান করেন। এঘটনায় মাদ্রাসার সুপার শাহজাহান আলী হাতীবান্ধা নির্বাহী অফিসারকে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। এছাড়াও হাতীবান্ধা থানায় ১টি সাধারন জিডি করেছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি ও সুপারের মধ্যে চলছে চরম দ্বন্দ। এই দ্বন্দের কারণে মাদ্রাসাটির সভাপতি আব্দুর রউফ (আদু) বর্তমান মাদ্রাসারটির উত্তরপাশে মাত্র ৫’শ গজ দ্রুরত্বে একই নামে একটি পৃথক মাদ্রাসা স্থাপন করেন। সেখানে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে নিজের ভাই আব্দুর রশিদ কে সভাপতি করেন। নতুন করে সুপারসহ ৫ সহকারী শিক্ষকে নিয়োগ দিয়ে দেন রাতারাতি। বর্তমানে একই নামে এসইউ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা দু’টি পাশাপাশি চলছে। এদিকে গ্রামটির স্থানীয় বাসীন্দা মোঃ আউয়াল হোসেন জানান, তার বাবা আব্দুল গনির মৃত পর ওই মাদ্রাসার সভাপতি হন আব্দুর রউফ (আদু)। মাদ্রাসাটি ডিআর ভুক্তর জন্য শিক্ষা অফিস কাগজ পত্র চেয়ে পাঠায়। এতে করে আব্দুর রউফ (আদু) একই নামে আরও একটি মাদ্রাসা চালু করেন। তার উদ্দেশ্য নিয়োগ বাণিজ্য । ওই মাদ্রাসায় কোন শিক্ষার্থী নেই। শুধু একটি টিনের ঘর তুলে সাইনবোর্ড লাগিয়ে মাদ্রাসা চালু করেন। মাদ্রাসার সভাপতি আব্দুর রউফ (আদু) জানান, ওই মাদরাসা সুপারকে বহিষ্কার করেছি। ২০ লাখ টাকা কারো কাছে চাইনি। তারা মিথ্যা ভাবে আমাকে হয়রানি করার জন্য এ ঘটনাটি সাজিছে। তিনি তার মাদ্রাসাটিকে বৈধ বলে দাবি করেন। হাতীবান্ধা উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কর্পন্দ নারায়ন চন্দ্র রায় জানান, একই নামে দুটি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসার নিয়ে একটি বিরোধ চলছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এ বিষয়ে হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সামিউল আমিন জানান, ওই মাদ্রাসার পক্ষ থেকে একটি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
×