ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মুজিববর্ষে ধরা হবে ২০ হাজার কারবারিকে ॥ মাদক ব্যবসার ভিত গুঁড়িয়ে দেয়ার টার্গেট

প্রকাশিত: ১০:৪৩, ২৪ জানুয়ারি ২০২০

 মুজিববর্ষে ধরা হবে  ২০ হাজার কারবারিকে ॥ মাদক ব্যবসার ভিত গুঁড়িয়ে দেয়ার টার্গেট

আজাদ সুলায়মান ॥ মুজিববর্ষে দেশব্যাপী সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে তালিকাভুক্ত ২০ হাজার মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতারের পর সাজা নিশ্চিত করবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। একই সঙ্গে মাদক ব্যবসায় লেনদেনের অভিযোগে কমপক্ষে ১শ’ মামলা দায়ের করা হবে মানিলন্ডারিং আইনে। মাদক ব্যবসায়ীদের ভিত গুঁড়িয়ে দিতেই এ ধরনের কঠোর কর্মসূচী থাকবে বছরব্যাপী। এ ছাড়াও থাকবে বঙ্গবন্ধু ওয়ান স্টপ সার্ভিস, দেশব্যাপী মাদকাসক্তদের বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা, প্রতিজেলায় একটি করে মাদকবিরোধী ফুটবল টুর্নামেন্ট, বঙ্গবন্ধু বুক কর্নার, তার জীবন ও রাজনীতির ওপর বিশেষ রচনা প্রতিযোগিতা, প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতাসহ একগুচ্ছ কর্মসূচী। আগামী ১৭ মার্চ থেকে পরবর্তী এক বছর এ কর্মসূচী চলবে। এজন্য আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু হয়ে গেছে। মাদক অধিদফতরের মহাপরিচালক জামালউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, এই ২০ হাজার মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতারের জন্য ইতোমধ্যে একটি তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। তালিকাটি তৈরি করা হয়েছে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও পুলিশের সমন্বিত উদ্যোগে তালিকা নিয়ে যাতে কোন ধরনের বিতর্ক দেখা না দেয়। মুজিববর্ষ ছাড়াও তো সারাবছরই সর্বক্ষণিক মাদক নিয়ন্ত্রণে আমাদের কাজ চলে। গত বছরই তো ১৭ হাজার মাদক কারবারিকে ধরা হয়েছে। এবার মুজিববর্ষে আরও ২০ হাজার ধরার টার্গেট নেয়া হয়েছে। এজন্যই বিশেষ উদ্যমে মাঠে থাকবে মাদকের প্রতিটি কর্মী। এটিকে গতানুগতিক অভিযান বলা যাবে না। চোখে পড়ার মতো মাদক ব্যবসায়ীদের ভিত গুঁড়িয়ে দিতেই এই অভিযান। জানা গেছে, বিশ হাজার মাদক ব্যবসায়ীর মধ্যে শুধু রাজধানীতেই রয়েছে ২৭৮৯জন। বাকিগুলো সারাদেশের। তারপরের সংখ্যা বৃহত্তর চট্টগ্রামের। তারমধ্যে শুধু কক্সবাজারেই রয়েছে ৫৮৭ তালিকাভুক্ত মাদক কারবারি। দু’বছর ধরে চলা মাদকের অভিযানের পর এখনও তারা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। তালিকায় কিছুসংখ্যক রয়েছে যারা গত দু’বছরের মধ্যে গ্রেফতারের পর জেলহাজত খেটে জামিনে মুক্তি পেয়ে ফের সক্রিয় হয়েছে। বেশিরভাগই গত দুই দশক ধরে মাদক ব্যবসায়ে সক্রিয়। কিসের ভিত্তিতে এই ২০ হাজারের তালিকা তৈরি করা হয়েছে জানতে চাইলে মাদক অধিদফতরের পরিচালক (অপারেশন) ডিআইজি মাসুম রব্বানী বলেন, যাদের বিরুদ্ধে থানায় ও গোয়েন্দা সংস্থায় একাধিক মামলা রয়েছে,যারা বার বার ধরা পড়েও জামিনে এসে ফের সক্রিয়, যারা বছরের পর বছর পলাতক, যারা প্রভাবশালী কিন্তু ধরা পড়ে না; মূলত এ ধরনের বিষয়কে প্রাধান্য দিয়েই তৈরি করা হয়েছে তালিকা। এ বিশ হাজারের মধ্যে গডফাদার, মধ্যমসারি ও মাঠ পর্যায়ের চিহ্নিত মাদক কারবারি ও সেবক রয়েছে। রমনা ও শাহবাগের মাদক পরিদর্শক কামরুল ইসলাম বলেন, তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ীদের বেশিরভাগই কারাগারে আটক আছে, কিছু মারা গেছে,কিছু আছে পলাতক। কিছু মাদক কারবারি বার বার ধরা পড়ে, জেলহাজত খেটে ফের জামিনে এসে লিপ্ত হয় একই পেশায়। রাজধানীর অন্যান্য এলাকায় রমনা ও শাহবাগে কিছুটা কম। তারপরও শ’ তিনেক পেশাদার মাদক কারবারি সক্রিয়। তাদেরকে ধরার জন্য আমাদের টিম সক্রিয় রয়েছে। এ সম্পর্কে মাদকের এক কর্মকর্তা জানান, অভিযানের মূল টার্গেটে রয়েছে ঢাকার পর সীমান্তবর্তী জেলাগুলো এবং কক্সবাজার। এত অভিযানের পরও কক্সবাজার থেকেই সবচেয়ে বেশি মাদক ছড়াচ্ছে দেশব্যাপী। জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলার অতিরিক্ত পুিলশ সুপার ইকবাল হোসাইন বলেছেন- এ জেলায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ১১ শ’ এবং জেলা পুলিশের তালিকাভুক্ত রয়েছে ৬ শতাধিক। তাদের বেশিরভাগই পলাতক। তাদেরকে ধরার জন্য পুলিশ সদা সক্রিয়। মাদক অধিদফতর সূত্র মতে, আগামী এক বছর ধরে এদেরকে আটকের জন্য বিশেষ কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে। যাদের ধরা হবে, তারা যাতে সহজে জামিন না পায় সে বিষয়েও সতর্ক পদক্ষেপ থাকবে। এজাহারে যাতে কোন ধরনের ভুল-ত্রুটি না থাকে, মামলার মেরিট যাতে নষ্ট না হয় সেটা লক্ষ্য রাখার পাশাপাশি সাক্ষী-প্রমাণাদি শক্তভাবে উপস্থাপন করা হবে। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে মতবিনিময় করে মাঠ পর্যায়ের চিত্র উপস্থাপন করা হয়েছে। উল্লেখ্য, মাদক ব্যবসা এখনও হচ্ছে নগদ টাকার লেনদেনে। আর্থিক লেনদেন সহজেই করা সম্ভব বলেই মাদকের সরবরাহও সহজ বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এজন্য আর্থিক লেনদেনের গোড়ায় হাত দেয়ার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এ সম্পর্কে মাসুম রব্বানী বলেন, মাদকের সহজ স্থানান্তর বন্ধ হয়ে যাবে; যদি আর্থিক লেনদেন কঠিন করে ফেলা যায়। বর্তমানে সাধারণত দেশের ভেতর এক জেলা থেকে অন্য জেলায় মাদকের টাকা লেনদেন হচ্ছে বিকাশ, রকেট, ফ্লেক্সিলোড ও মোবাইলের বিশেষ এ্যাপসে। এ নিয়ে মাদক অধিদফতরের বিশেষ টিম বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট ও সিআইডির সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছে। প্রাথমিকভাবে দেশের বেশ কটি জেলা ও শহরের মধ্যে অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য সংগ্রহ করে তাদের গতিবিধি নজরদারিতে রাখা হয়েছে। বিশেষ করে কক্সবাজার, পাবনা ও সিরাজগঞ্জের মধ্যে নিয়মিত অস্বাভাবিক আর্থিক লেনদেন ইতোমধ্যে চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রতিদিন একটি সুনির্দিষ্ট সময়ে বিকাশ ও রকেটে এ টাকা পাচার করা হয় এক স্থান থেকে অন্যত্র। জানা গেছে, মাদক বেচাকেনায় এখন পর্যন্ত লেনদেনের বিনিময় টাকার মাধ্যমেই। কক্সবাজার ও টেকনাফের শ’দেড়েক ব্যবসায়ীর নিয়মিত দেশের বিভিন্ন প্রান্তে টাকা লেনদেনের বিষয়ে যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে। এদেরকে ধরে মানিলন্ডারিং আইনে মামলা দেয়ার প্রস্তুতিও নেয়া হয়েছে। জানতে চাইলে মাদক অধিদফতরের পরিচালক ডিআইজি গোলাম রব্বানী বলেন, মানিলন্ডারিং আইনে মামলা দায়ের করা হলে সেটা মাদক ব্যবসায়ী ও গডফাদারদের মাঝে বেশ আতঙ্ক ও ভীতির সঞ্চার করবে। তখন তারা এ থেকে সরে আসার চেষ্টা করবে। যদি একশ’ মামলাও দেশব্যাপী মাদককারবারীদের বিরুদ্ধে করা হয়- তাহলে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় মাদক পাচার কঠিন হয়ে উঠবে। এ মামলার দ্রুত তদন্ত শেষে চার্জশীট তৈরি করে বিচারের উদ্যোগ নেয়া হবে যাতে ওদের সাজা নিশ্চিত হয়। মুজিববর্ষেই যদি একশ’ মামলা দায়ের করা হয়, পরবর্তী বছরে সেগুলোর ফলোআপ এ্যাকশন নেয়া হবে।
×