ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মোরসালিন মিজান

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ১০:৪১, ২৪ জানুয়ারি ২০২০

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

শহর ঢাকায় আর কিছু নেই। অন্তত চোখে পড়ছে না। কেবলই ভোট। ভোটের প্রচার। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন। ক্রমেই ঘনিয়ে আসছে সময়। ফলে প্রচারেও নানা মাত্রা যোগ হচ্ছে। শুধু মেয়র প্রার্থী বা কাউন্সিলররাই শহর ঘুরে বেড়াচ্ছেন না, তাদের পক্ষে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ ভোট প্রার্থনা করছেন এখন। সিনেমা এবং টেলিভিশনের জনপ্রিয় নায়ক নায়িকারা দিব্যি পাড়া-মহল্লা চষে বেড়াচ্ছেন। ফেরদৌস, রিয়াজের মতো শীর্ষ চলচ্চিত্র তারকাদের অলিতে-গলিতে দেখে অবাক না হয়ে পাড়া যাচ্ছে না। টেলিভিশনের চেনা মুখগুলোর মধ্যে প্রচারে অংশ নিচ্ছেন শমী কায়সার, তানভীন সুইটিসহ কয়েকজন। সিনিয়র অভিনয় শিল্পী ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম এ কাজে আরও বেশি নিবেদিত বলে মনে হচ্ছে। খ্যাতিমান তারকারা মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়া দল আওয়ামী লীগের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। নৌকার প্রার্থীদের ভোট দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন তারা। প্রচারে নেমেছেন অন্যান্য অঙ্গণের স্বনামধন্য ব্যক্তিরাও। সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব গোলাম কুদ্দুছ একটি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। দলটিকে বৃহস্পতিবার নিউমার্কেট এলাকায় প্রচার চালাতে দেখা যায়। তারা প্রগতিশীল চিন্তা থেকে জনমত গঠনের চেষ্টা করছেন। ভোট চাইছেন নৌকা নিয়ে আসা দুই মেয়রের জন্য। এখানেই শেষ নয়, প্রার্থীদের পক্ষে প্রচার চালাচ্ছেন তাদের পরিবারের সদস্যরাও। আলাদা করে বলা যায় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলামের স্ত্রী শায়লা শগুফতা ইসলামের কথা। পেশায় তিনি একজন চিকিৎসক। তাকে কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছিল আগেই। সাধারণত রোগীর চিকিৎসায় সব মনোযোগ তার। এর পর যেটুকু সময়, পরিবারকে দেন। কিন্তু এখন রুটিন বদলে গেছে। আতিক পত্নী উত্তরের দুর্গম এলাকাগুলো ঘুরে প্রচার চালাচ্ছেন। অবশ্য প্রচার না বলে এটিকে ভোট প্রার্থনা বলাই যথার্থ হবে। ভোটারের দ্বারে পৌঁছা বলতে যা বোঝায় ঠিক তাই করে চলেছেন তিনি। স্বাভাবিক কারণেই পায়ে অতো জোর নেই। তবুও হাঁটছেন। শরীর যা, তাতে করে এত দখল নিতে পারার কথা নয়। কিন্তু সব ভুলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আতিকুলের জন্য ভোট চাওয়ার কাজ করছেন তিনি। বৃহস্পতিবার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের ভাষানটেক বস্তি ও বিআরবি কলোনি এলাকায় তাকে গণসংযোগ করতে দেখা যায়। এ সময় কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শুধু আতিকুলের জন্যই করছি বললে ভুল হবে। ঢাকার জন্য করছি। এ ঢাকা আর কত অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে যাবে? সচেতন নাগরিক হিসেবে ঢাকার ভাল চাই আমি। এবং বিশ্বাস করি এই ভালটুকু উপহার দেয়া আতিকুল ইসলামের পক্ষে সম্ভব। এতকাল ধরে তাকে দেখছি বলেই আমি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ভোটারদের বলছি, আতিককে ভোট দিন। প্রায় একই সময় ভোট চাইছেন আতিকুল ইসলামের বড় ভাই, ভাগ্নে। শ্বশুরবাড়ির লোকজনও বসে নেই। মেয়র প্রার্থীর শ্যালক শামস রাশীদ জয় এবং তার স্ত্রী সুস্মিতা খানকেও আতিকুল ইসলামের জন্য ভোট চাইতে দেখা যাচ্ছে। সুস্মিতা খান মেয়েদের একটি দল গঠন করে বাসা বাড়ি যাচ্ছেন। এই করতে গিয়ে গত বুধবার তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলেও জানা যায়! কিন্তু এত প্রচারের প্রয়োজন পড়ছে কেন? জানতে চাইলে শামস রাশীদ জয় বলেন, ভোট করেই তো জিততে হবে। বিকল্প কোন রাস্তা আমাদের জানা নেই। এ কারণেই ভোটারদের মন জয় করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। নৌকার আরেক প্রার্থী ফজলে নূর তাপসেরও কোন কোন আত্মীয় স্বজন মাঠে নেমেছেন। যুবলীগ চেয়ারম্যান হলেও ভাই হিসেবেই পাশে আছেন শেখ ফজলে শামস পরশ। তবে দক্ষিণের মেয়র প্রার্থীর স্ত্রী বা অন্য কোন নিকট আত্মীয়কে এখনও সেভাবে দেখা যাচ্ছে না। সময় আরও এগিয়ে এলে পরিবারের সদস্যদের অংশগ্রহণ বাড়তে পারে বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। উত্তরে বিএনপির প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের পক্ষে পরিবারের কেউ প্রচারে নামেননি। তার বাবা আলোচিত ব্যবসায়ী আব্দুল আউয়াল মিন্টুকেও দেখা যাচ্ছে না ছেলের গণসংযোগে। একই নিয়মে প্রচার চালাচ্ছেন দক্ষিণে ধানের শীষের প্রার্থী ইশরাক হোসেন। তাই বলে নির্বাচনী প্রচার থেমে নেই। বিএনপি প্রার্থীরা নিজেদের পলিসি অনুযায়ী প্রচার চালাচ্ছেন। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মেয়র প্রার্থী এবং কাউন্সিলরদের প্রচারে উৎসবমুখর হয়ে উঠেছে রাজধানী ঢাকা। এ উৎসব প্রচারের শেষ দিন পর্যন্ত অটুট থাকবে- এমনটিই প্রত্যাশা নগরবাসীর।
×