ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংসদে অর্থমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে চলেছে

প্রকাশিত: ১০:২৪, ২৪ জানুয়ারি ২০২০

 প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে চলেছে

সংসদ রিপোর্টার ॥ অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণ ও সুদক্ষ নেতৃত্বে দেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। বর্তমান সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদের ধারাবাহিকতায় দেশের অব্যাহত সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা একদিকে যেমন অভ্যন্তরীণ ভিতকে আরও মজবুত করেছে, অন্যদিকে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে। বছরের প্রথম প্রান্তিকের অগ্রগতির চিত্র দেখে নির্দ্বিধায় বলা যায়, আমরা সঠিক পথে রয়েছি। বর্তমান অর্থবছরেও অর্থনৈতিক উন্নয়নের চলমান ধারা অব্যাহত থাকবে। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে বাজেট ২০১৯-২০, প্রথম প্রান্তিক (জুলাই-সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত বাজেটের বাস্তবায়ন অগ্রগতি ও আয়-ব্যয়ের গতিধারা এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ সংক্রান্ত প্রতিবেদন উত্থাপনকালে অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, জিডিপির উচ্চ প্রবৃদ্ধি, মাথাপিছু জাতীয় আয় বৃদ্ধি, প্রবাস আয় বৃদ্ধি, বৈদেশিক বিনিয়োগের উর্ধগতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও মুদ্রা বিনিময়ের হারের স্থিতিশীলতা নির্দেশ করে যে, আমরা কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছানোর দিকে এগিয়ে চলেছি। দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আমাদের এগিয়ে যাওয়াকে আরও ত্বরান্বিত করেছে। অর্থমন্ত্রীর প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে মোট লক্ষ্যমাত্রার ১৪ দশমিক ৭ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৮১১ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রথম প্রান্তিকে আদায় হয়েছে ৫৫ হাজার ৪৯৩ কোটি টাকা। প্রথম প্রান্তিকে রাজস্ব আহরণের পরিমাণ বিগত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৭ দশমিক ৫ শতাংশ কম। এ সময়ে কর রাজস্ব আহরণের পরিমাণ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়েছে এবং কর বহির্ভূত রাজস্ব আহরণের পরিমাণ ৪৫ দশমিক ১ শতাংশ কমেছে। রাজস্ব আহরণ বাড়াতে সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণের ফলে চলতি অর্থবছরে অবশিষ্ট সময় রাজস্ব আহরণের গতি আনবে বলে অর্থমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন। বাজেটের অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী আরও জানান, ব্যয় ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সরকারের বিগত সময়ের ধারাবাহিকতায় গৃহীত নীতি কৌশলসমূহের কারণে একদিকে যেমন খাদ্য মূল্যস্ফীতিসহ সার্বিক মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে, অন্যদিকে গুরুত্বপূর্ণ ভৌত ও সামাজিক অবকাঠামো খাতে অগ্রাধিকারভিত্তিক সম্পদ সঞ্চালনের ফলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সুসংহত হয়েছে। আবার কঠোর পরীবিক্ষণের কারণে চলমান মেগাপ্রকল্পসমূহ বাস্তবায়নে অগ্রগতি ও বিদ্যুত-জ্বালানি খাতে উন্নতি সাধিত হয়েছে। অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল আরও বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং আমাদের মহান স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পূর্তির এই ঐতিহাসিক মুহূর্ত সামনে রেখে আমরা দৃঢ়ভাবে আশাবাদ ব্যক্ত করতে চাই যে, সরকারের গৃহীত এ সকল কার্যক্রম বাস্তবায়নের ফলে প্রবৃদ্ধির কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চৌকস ও সুযোগ্য নেতৃত্বে সর্বমহলের প্রত্যয়ী ও কার্যকর অংশগ্রহণে আমরা টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করব এবং বদ্বীপ পরিকল্পনা (ডেল্টাপ্ল্যান-২০১১) বাস্তবায়নে আলোকবর্তিকা হিসেবে ভূমিকা রাখব। সর্বোপরি, আমাদের কঠোর শ্রম ও আত্মপ্রত্যয়ে বলীয়ান হয়ে বাংলাদেশ আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে একটি সুখী, সমৃদ্ধ ও উন্নত দেশে উত্তরণের পথে এগিয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। সম্প্রতি লন্ডনভিত্তিক ফিন্যান্সিয়াল টাইমস গ্রুপের প্রকাশনা দ্য ব্যাংকার ম্যাগাজিন তাকে ফাইন্যান্স মিনিস্টার অব দ্য ইয়ার হিসেবে ঘোষণার কথা তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী বলেন, এ অর্জন প্রবৃদ্ধির চাকা বেগবান রাখা এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য দেশের ১৬ কোটি মানুষের নিরলস প্রচেষ্টার ফসল। আর তার পেছনে রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে, সর্বক্ষণিক দিকনির্দেশনা ও সুচারু পরিচালনার দক্ষতা। বাজেটের প্রথম প্রান্তিকের বিশ্লেষণ করে অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশ ১৯৩ অর্থনীতির মধ্যে ৪০তম স্থান অধিকার করেছে, বর্তমান উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী ২০৩৪ সালের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান হবে ২৫তম। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক প্রকাশিত এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক ২০১৯ অনুযায়ী বাংলাদেশ এশিয়াতে সর্বোচ্চ জিডিপি অর্জনকারী দেশের মর্যাদা লাভ করেছে। এছাড়াও বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক সূচকের ক্ষেত্রে আমাদের অভাবনীয় উন্নতি বিশ্ব পরিম-লে আমাদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে। তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রীর সুচারু পরিচালন দক্ষতায় বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের কাতারে শামিল হওয়ার কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে। এ লক্ষ্য প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০১০-২০২১ ও টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট বাস্তবায়ন পুরোদমে এগিয়ে চলছে এবং বদ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের শেষ বছর চলছে। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা এবং প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১-২০৪১ প্রণয়নের কাজ শুরু হয়েছে। অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জনের অন্যতম সহায়ক বিদ্যুত-জ্বালানি, অবকাঠামো ও যোগাযোগ খাতে মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়নসহ ব্যাপক কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এছাড়াও উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা, অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা, মানবসম্পদ উন্নয়ন, সেবা খাতের উন্নয়ন ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিভিন্নমুখী কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী জানান, পরপর তিনটি অর্থবছরে সাত শতাংশের বেশি হারে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের পর গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়ে ৮ দশমিক ১৫ শতাংশে। গত অর্থবছরে মাথাপিছু জাতীয় আয় বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৯০৯ মার্কিন ডলারে। দারিদ্র্যের হারও দ্রুত কমে এসেছে। অতি দারিদ্র্য কমে হয়েছে সাড়ে ১০ শতাংশ। সামষ্টিক স্থিতিশীলতা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪১ দেশের মধ্যে ৯৫তম। বিশ্বব্যাংকের হিউম্যান ক্যাপিটাল ইনডেক্স ২০১৮ সালে ১৫৭ দেশের মধ্যে ভারত ও পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশের অবস্থান হয়েছে ১০৬তম।
×