ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এই নির্বাচন কমিশন ঠুঁটো জগন্নাথ ॥ ফখরুল

বিএনপির পক্ষে পেশাজীবী, বুদ্ধিজীবীদের নির্বাচনী প্রচার

প্রকাশিত: ১০:২৪, ২৪ জানুয়ারি ২০২০

  বিএনপির পক্ষে পেশাজীবী, বুদ্ধিজীবীদের নির্বাচনী প্রচার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপির মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারে মাঠে রয়েছেন দলের মহাসচিবসহ সিনিয়র নেতা, পেশাজীবী ও বুদ্ধিজীবীরা। বৃহস্পতিবার দিনভর তারা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় লিফলেট বিতরণ, ভোটারদের সঙ্গে কুশল বিনিময় ও বিভিন্ন পথসভায় বক্তব্য রাখেন। দুপুরে হাইকোর্ট এলাকায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেনের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিয়ে এক পথসভায় বর্তমান নির্বাচন কমিশনের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এই নির্বাচন কমিশন ঠুঁটো জগন্নাথ। ফখরুল বলেন, সরকারী দলকে সাহায্য করার জন্যই ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) আনা হয়েছে। ইভিএম পদ্ধতিতে ব্যাপক ভোট কারচুপির সুযোগ রয়েছে বলে আমরা এর বিরোধিতা করছি। তবে ইভিএমের বিষয়টা পুরোপুরি নির্বাচন কমিশনের। এতে অন্য কারো কোন এখতিয়ার নেই। কিন্তু নির্বাচন কমিশন তাদের অযোগ্যতা ঢাকার জন্য ইভিএম নিয়ে আসছে। আমরা বলছি, প্রয়োজনে নির্বাচন পিছিয়ে দিয়ে ব্যালটের মাধ্যমে নির্বাচন পরিচালনা করা হোক। ফখরুল বলেন, নির্বাচনী প্রচারে দিনের বেলা উৎসবমুখর পরিবেশ থাকলেও রাতের বেলা আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। মঙ্গলবার ঢাকা উত্তরের মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের নির্বাচনী প্রচারের সময় হামলা চালানো হয়েছে। এ ঘটনায় ধানের শীষের কর্মীরা আহত হয়েছে। তাদের নির্যাতন করা হয়েছে, বাড়ি ভাংচুর করা হয়েছে। বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থীদের মারধর করা হচ্ছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটির একজন কাউন্সিলর প্রার্থীকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তিনদিন পর তাকে পাওয়া গেছে। আমি বলি এই সরকার একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কোন পরিবেশ তৈরি করতে পারেনি। এছাড়া নির্বাচন কমিশনও নির্বাচনের জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করতে পারেনি। ইশরাক হোসেনকে ধানের শীষে ভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়ে ফখরুল বলেন, আজকে ঢাকাবাসীর প্রতি আমার একটা আকুল আবেদন থাকবে উদ্দীপ্ত নেতা ইশরাক হোসেনকে ধানের শীষে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করে খালেদা জিয়ার মুক্তি ত্বরান্বিত করুন। ফখরুল বলেন, আজকে ঢাকাবাসী তাদেরই ভোট দিয়ে মেয়র নির্বাচিত করবেন যারা ঢাকার উন্নয়নে, ঢাকাকে পরিবর্তনের জন্য কাজ করবেন। তাই আমরা মনে করি ইতোমধ্যেই ইশরাক হোসেন ঢাকাসহ সারাদেশে তার বক্তব্য, তার মেধা, সাহসী বক্তব্য এবং সাহসী পদক্ষেপে প্রমাণ করেছেন। তিনি আগামীতে মেয়র হিসেবে নেতৃত্ব দিতে পারবেন। ইশরাক হোসেনের নির্বাচনী প্রচার বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক আখতারুজ্জামানের সঙ্গে সাক্ষাত ও দোয়া প্রার্থনার মাধ্যমে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন তার নির্বাচনী প্রচার শুরু করেন। পরে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঘুরে ঘুরে ভোট প্রার্থনা করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভিসির সঙ্গে সাক্ষাতকালে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে ইশরাক হোসেন বলেন, যদিও আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র নই তারপরও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আমার আত্মার সম্পর্ক রয়েছে। আমার বাবা, আমার মা ও আমার বোন এখানে পড়াশোনা করেছেন। আমি এখানে এসেছি আপনার কাছে দোয়া চাইতে। আমার ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছা ছিল রাজনীতি করার। একজন্য নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি। আমি যদি মেয়র নির্বাচিত হই তাহলে সিটি কর্পোরেশনের সকল সমস্যা নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করব। এ ছাড়া মানুষের সকল ধরনের অধিকার নিয়ে আমি কাজ করতে চাই। আমি জনসেবায় নিজেকে নিয়োজিত করতে চাই। দুপুর ১২টা পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রচারের পর দুপুর ১২টায় হাইকোর্ট মাজার গেটে নির্বাচনী প্রচার করেন ইশরাক হোসেন। সেখানে তার নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী নেতা এ্যাডভোকেট জয়নাল আবদিন, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকনসহ বেশ ক’জন আইনজীবী। হাইকোর্ট এলাকায় প্রচার শেষে ইশরাক হোসেন শ্যামপুর থানার ৫৪ নং ওয়ার্ডের জুরাইন মাজারের ব্যাংক এশিয়ার সামনে, পোস্তগোলা, জুরাইন কবরস্থান, আরসিন গেট, টিএন্ডটি ও বাংলাদেশ ব্যাংক কলোনি, গে-ারিয়া ডিআইটি প্লট, পাইপ রাস্তা, শিট মার্কেট, আবু হাজী প্রাইমারী স্কুল হয়ে ৫১নং ওয়ার্ডের দয়াগঞ্জ মোড়ে গিয়ে প্রচার শেষ করেন ইশরাক হোসেন। আরেক পথসভায় ইশরাক বলেন, আমরা জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে রয়েছি, মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার আন্দোলনে রয়েছি, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে রয়েছি। মহান মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র ছিল জনগণ হবে ক্ষমতার মালিক, জনগণ হবে রাষ্ট্রের মালিক। ভোটের দিন যদি সেরকম কোন পরিস্থিতি হয় তাহলে জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে তারা কিভাবে তাদের অধিকার সংরক্ষণ করবে এবং তারা তাদের প্রতিবাদ জানাবে। বিকেলে জুড়াইন মাজার গেটে ইশরাক হোসেনের পক্ষে গণসংযোগে অংশ নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সাবেক সফল মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলের জন্য ভোট চাইতে এসেছি। ইতোমধ্যেই ইশরাক হোসেন জনগণের রায়ে নির্বাচিত। এখন ১ তারিখের ভোটের অপেক্ষা। ড. মোশাররফ বলেন, দীর্ঘ ১২ বছরে ঢাকা শহরকে অবাসযোগ্য রাজধানীতে পরিণত করা হয়েছে। পৃথিবীর সবচেয়ে নিম্নমানের শহরে পরিণত করা হয়েছে ঢাকাকে। তারা আবার আপনাদের কাছে ভোট চাইতে আসে। এই শহরকে যদি বসবাস উপযোগী শহর করতে চাইলে ইসরাক হোসেনকে মেয়র নির্বাচিত করতে হবে। তাবিথ আউয়ালের নির্বাচনী প্রচার বৃহস্পতিবার দুপুর পৌনে ১২টায় রায়ের বাজার থেকে নির্বাচনী প্রচার শুরু করেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল। এরপর তিনি মোহাম্মদপুর ও শেরেবাংলা নগর এলাকায় গণসংযোগ করেন। রায়ের বাজার এলাকায় তাবিথ আউয়ালের সঙ্গে থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি এমাজউদ্দিন আহমেদ তরুণদের ধানের শীষে ভোট দেয়ার আহ্বান জানান। রায়ের বাজার প্রেমতলার পথসভায় তাবিথ আউয়াল বলেন, ঢাকা উত্তর সিটির ৫৪টি ওয়ার্ডে ৩২৫ কিলোমিটারের বেশি পথ হেঁটে গণসংযোগে ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। এ সময় জনগণের কাছে গিয়েছি। প্রতিটি এলাকায় গণসংযোগে ব্যাপক গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিএনপির পক্ষে অবস্থান নিচ্ছে। তবে আমাদের প্রতিপক্ষরা গণজোয়ার দেখে হামলা করছে। এতে কাউন্সিলর প্রার্থীও আহত হয়েছেন। তিনি বলেন, সরকার দলীয় সন্ত্রাসীরা পরিকল্পিতভাবে বারবার হামলার চেষ্টা চালাচ্ছে। জনগণকে ভোটের মাধ্যমে এসব সন্ত্রাসী কর্মকা-ের জবাব দিতে হবে।
×