ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মোবাইলে প্রেম ও বিয়ে বিচ্ছেদ নিয়ে রাষ্ট্রপতির উদ্বেগ

প্রকাশিত: ১০:২৩, ২৪ জানুয়ারি ২০২০

 মোবাইলে প্রেম ও বিয়ে বিচ্ছেদ  নিয়ে রাষ্ট্রপতির উদ্বেগ

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ মোবাইলের এই যুগে একসঙ্গে একাধিক জনের সঙ্গে প্রেমের প্রবণতা বেড়েছে মন্তব্য করে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ বলেছেন, এর পরিণাম ভয়াবহ হচ্ছে, বিয়ে বিচ্ছেদ অনেক বেড়ে যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার ঢাকার একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে নিজের এই পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন ৭৬ বছর বয়সী আবদুল হামিদ। খবর বিডিনিউজের। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘তোমাদের নিয়ে অনেক খারাপ কথা শুনি। মোবাইল নিয়ে প্রেম কর। প্রেম কর, খারাপ না। একলগে পাঁচজনের লগে কইরো না। একজনের লগে প্রেম কইরা ১৫ দিন পরে আরেকজনের লগে কর, এটা করা ঠিক নয়। এর পরিণাম খুব ভয়াবহ হচ্ছে। ডিভোর্সের হার অনেক বেড়ে যাচ্ছে। এসব কারণে বেশি হচ্ছে। একটা বাচ্চা হওয়ার পরও ডিভোর্স হচ্ছে। তাহলে এই বাচ্চাটার পরিণতি কী? তাকে কোন দিকে নিয়ে যাচ্ছি? খুব দুঃখজনক। আমাদের কালচারে এমন হওয়ার কথা নয়। আমাদের কৃষ্টিতে এমন হওয়ার কথা নয়। এখন অহরহ হচ্ছে।’ একে গুরুতর সামাজিক অবক্ষয় হিসেবে চিহ্নিত করে আবদুল হামিদ বলেন, ‘এটা দূর করতে হবে। দূর করতে হবে তোমাদের। তোমাদের নেতৃত্ব দিতে হবে। এর বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে। যারা এমন করে তাদের এ্যাভয়েড করতে হবে।’ হাতে হাতে স্মার্টফোন আসায় এখন যে কোন ঘটনায় সমস্যার সমাধানের দিকে না গিয়ে ঢালাওভাবে ভিডিও করার প্রবণতা নিয়েও কথা বলেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। তিনি বলেন, ‘আমরা দেখেছি, রাস্তায় একটা গাড়ি এক্সিডেন্ট করল। আমরা হয়ত দাঁড়িয়ে আছি বা গাড়িতে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় পড়ল, আমরা গাড়ি থেকে নেমে বাঁচানোর জন্য গিয়েছি। এখন হোন্ডা যখন এক্সিডেন্ট করে তখন আগে ভিডিও করে। কেমনে পড়ল সেইডা ভিডিও করে, তাকে বাঁচাবে, সাহায্য করবে, তার মধ্যে নেই।’ এ প্রসঙ্গে বনানীর এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডে প্রাণহানির ঘটনা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এই কয়দিন আগে বনানীতে আগুন লাগল। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা যেতেই পারে না, পাবলিকের ভিড়। সবাই ভিডিও করছে। হোয়াট ননসেন্স। এ ধরনের মানসিকতার বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে। ছাত্রদের এসব বিষয়ে এগিয়ে আসতে হবে।’ ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির প্রথম সমাবর্তনে বক্তব্যে শিক্ষার্থীদের ফাস্টফুড ও কোমল পানীয় থেকে দূরে থাকারও পরামর্শ দেন আবদুল হামিদ। বিভিন্ন বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষা বিস্তারে বেসরকারী উদ্যোক্তাগণ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। তবে বেসরকারী খাতে প্রতিষ্ঠিত কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় গুণগত মানসম্পন্ন শিক্ষার প্রসারে প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখলেও সব বিশ্ববিদ্যালয় বা সব উদ্যোক্তাই যে নিয়ম নীতি মেনে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করছেন, তা নয়। বেশকিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে দেশের বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে। কিন্তু এসব শিক্ষার্থী কী পরিবেশে কতটুকু শিখছে বা নিজেদের কতটুকু যোগ্য হিসেবে গড়ে তোলার সুযোগ পাচ্ছে তাও বিবেচনা করতে হবে।’ আবদুল হামিদ বলেন, ‘শিক্ষা খাতে বেসরকারী বিনিয়োগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। বৈশ্বিক চাহিদা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় হবে জ্ঞান অর্জন ও সম্প্রসারণের একটি উপযুক্ত কেন্দ্র। শিক্ষার্থীরা লেখাপড়ার পাশাপাশি সংস্কৃতি ও ক্রীড়াসহ সমসাময়িক বিষয়ে জ্ঞানার্জনের সুযোগ পাবে। কিন্তু দেশের বেসরকারী অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ই আবদ্ধ বাণিজ্যিক ভবনে পরিচালিত হয়, যা উন্মুক্ত জ্ঞানচর্চার পথে বড় অন্তরায়। আমাদের মনে রাখতে হবে শিক্ষা কোন বাণিজ্যিক পণ্য নয়। যারা বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করবেন তাদের নিয়মনীতি মেনেই চালাতে হবে।’ বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘বাণিজ্যিক মনোভাবাপন্ন উদ্যোক্তাদের জন্য আরও অনেক লাভজনক খাত রয়েছে। আপনারা সেসব খাতে বিনিয়োগ করে নিজেরা লাভবান হতে পারেন আবার দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নেও অবদান রাখতে পারেন। আমরা উচ্চশিক্ষার প্রসার চাই। তবে সার্টিফিকেট সর্বস্ব উচ্চশিক্ষা চাই না। তাই প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। ছাত্র ভর্তি থেকে শুরু করে শিক্ষক নিয়োগ, প্রশ্ন প্রণয়ন ও খাতা মূল্যায়ন, কারিকুলাম প্রণয়ন ও টিউশন ফি নির্ধারণসহ সকল বিষয়ে নিয়ম নীতি মেনে চলতে হবে।’ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে (ইউজিসি) কঠোর হওয়ার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে এক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। প্রয়োজনে ইউজিসি ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য, অভিভাবক ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করবে এবং উচ্চশিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করতে কঠোর পদক্ষেপ নেবে। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় যাতে কোন ধরনের হস্তক্ষেপ ছাড়া পরিচালিত হতে পারে এবং শিক্ষার্থীরা যাতে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে এসে প্রতারণার শিকার না হয় তা নিশ্চিত করতে ইউজিসি, শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।’ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ওই অনুষ্ঠানে সমাবর্তন বক্তব্য রাখেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। অন্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহ, ফারইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেন, উপাচার্য অধ্যাপক নাজমুল করিম চৌধুরী। সমাবর্তনে মোট এক হাজার ৬২০ শিক্ষার্থীকে ডিগ্রী দেয়া হয়। এদের মধ্যে দুইজনকে চ্যান্সেলর গোল্ড মেডেল, দুইজনকে ভাইস চ্যান্সেলর পদক, পাঁচজনকে ডিনস পদক এবং পাঁচজনকে ট্রাস্টি পদক দেয়া হয়।
×