ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দুর্নীতি সূচকে দেশের অবস্থা ভাল হচ্ছে

প্রকাশিত: ১০:২০, ২৪ জানুয়ারি ২০২০

  দুর্নীতি সূচকে দেশের অবস্থা ভাল হচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দুর্নীতির ধারণাসূচকে বাংলাদেশের অবস্থান পরিবর্তন হয়ে আগের চেয়ে কিছুটা ভাল হয়েছে। তবে পরিস্থিতির তেমন কোন নড়চড় দেখছে না ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই)। সংস্থাটির মতে, পরিস্থিতি আরও ভাল করতে হলে সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও শুদ্ধাচার জরুরী হয়ে পড়ছে। দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের চেয়ে বাজে অবস্থান কেবল আফগানিস্তানের। বৃহস্পতিবার ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এবারের প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক এবং বাংলাদেশের দুর্নীতির পরিস্থিতি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ২০১৯ সালে দুর্নীতি সূচকে বাংলাদেশের স্কোর এবং অবস্থান বেশ উদ্বেগজনক হলেও পরিস্থিতি আগের চেয়ে ভাল হচ্ছে। সূচকের উর্ধক্রম অনুযায়ী (ভাল থেকে খারাপ) বিশ্বের ১৮০টি দেশ ও অঞ্চলের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এবার ১৪৬ নম্বরে। গতবার ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৪৯ নম্বরে। আবার অধঃক্রম অনুযায়ী (খারাপ থেকে ভাল) বিবেচনা করলে বাংলাদেশ আগের ১৩তম অবস্থান থেকে ১৪তম অবস্থানে উন্নীত হয়েছে। তবে ১০০ ভিত্তিতে এই সূচকে বাংলাদেশের স্কোর গতবারের মতোই ২৬। এই স্কেলে শূন্য স্কোরকে দুর্নীতির ব্যাপকতার ধারণায় সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত এবং ১০০ স্কোরকে সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত বা সর্বোচ্চ সুশাসনের দেশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্বের ১৮০টি দেশ ও অঞ্চলের ২০১৯ সালের দুর্নীতির পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বার্লিনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান টিআই তাদের এই বার্ষিক সূচক প্রকাশ করে। এই সূচকে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের চেয়ে বাজে অবস্থা কেবল আফগানিস্তানের। ১৬ স্কোর নিয়ে আফগানিস্তান উর্ধক্রম অনুযায়ী (ভাল থেকে খারাপ) রয়েছে তালিকার ১৭৩ নম্বরে। এ এলাকায় সবচেয়ে ভাল অবস্থানে আছে ভুটান। ৬৮ স্কোর নিয়ে ভুটানের অবস্থান সূচকের উর্ধক্রম অনুযায়ী ২৫ নম্বরে। এরপর ভারত ৮০ (স্কোর ৪১), শ্রীলঙ্কা ৯৩ (স্কোর ৩৮), নেপাল ১১৩ (স্কোর ৩৪), পাকিস্তান ১২০ (স্কোর ৩২), মালদ্বীপ ও মিয়ানমার ১৩০তম (স্কোর ২৯)। ২৬ স্কোরে বাংলাদেশের সঙ্গে একই অবস্থানের রয়েছে-এ্যাঙ্গোলা, গুয়াতেমালা, হন্ডুরাস, ইরান, মোজাম্বিক ও নাইজিরিয়া। টিআই এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, তালিকায় এবারও সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় আছে আফ্রিকার দেশ সোমালিয়া, তাদের স্কোর গতবারের তুলনায় ১ পয়েন্ট কমে ৯ হয়েছে। এরপরে রয়েছে যথাক্রমে সাউথ সুদান, সিরিয়া, ইয়েমেন, ভেনিজুয়েলা, সুদান, ইকুয়েটোরিয়াল গিনি, আফগানিস্তান, উত্তর কোরিয়া ও লিবিয়া। অন্যদিকে সর্বোচ্চ ৮৭ স্কোর নিয়ে গতবারের মতোই তালিকায় সবচেয়ে ভাল অবস্থানে রয়েছে ডেনমার্ক। এরপরে রয়েছে নিউজিল্যান্ড, ফিনল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, নরওয়ে, নেদারল্যান্ডস, জার্মানি ও লুক্সেমবার্গ। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, তাদের এবারের সমীক্ষায় দুই তৃতীয়াংশের বেশি দেশের স্কোর ৫০ এর নিচে। আর প্রতিবেদনের ১৮০টি দেশের গড় স্কোর দাঁড়িয়েছে ৪৩। ইফতেখারুজ্জামান বলেন, গত বছরে সরকারের দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের একটা প্রভাব এই র‌্যাংকিংয়ে রয়েছে। সরকারের সংস্থাগুলোর জবাবদিহিতা আরও বাড়াতে হবে। রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে শুদ্ধাচার নিয়ে আসতে হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক নির্দেশনার সমালোচনা করে তিনি বলেন, তথ্য অধিকার আইন পরিপন্থী কাজ তারা করেছে। এর ফলে দুর্নীতি বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। স্বজনপ্রীতি ও ভয়ের উর্ধে থেকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর জিরো টলারেন্স ঘোষণা করা, সামাজিক পরিচয় ও অবস্থান বিবেচনা না করে দুর্নীতিগ্রস্তদের বিচারের আওতায় আনায় দুর্নীতি সূচকে বাংলাদেশের স্থিতিশীল থাকার বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়েছেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক। পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে সরকারকে আহ্বান জানান তিনি। এ সময় সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপার্সন ও গবেষণা উপদেষ্টা এ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, উপদেষ্টা নির্বাহী ব্যবস্থাপনা পরিষদ ড. সুমাইয়া খায়ের ও রিসার্চ এ্যান্ড পলিসি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। দুর্নীতি সূচকে উন্নতি করতে দুদক, জনসেবামূলক প্রতিষ্ঠান, প্রশাসন এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখতে ও ব্যাংকিং সেক্টরে স্বচ্ছতা আনতে পরামর্শ দিয়েছে টিআইবি। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও দুর্নীতি রুখতে পারলে আমাদের জিডিপি ‘ডাবল ডিজিটে’ পৌঁছাত।
×