ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মীর নাসিরউদ্দিন

এক অদম্য নারী সাগুফতা ইয়াসমিন

প্রকাশিত: ০৯:৫৭, ২৪ জানুয়ারি ২০২০

  এক অদম্য নারী সাগুফতা ইয়াসমিন

প্রাচীন সভ্যতার জনপদ মুন্সীগঞ্জ তথা বিক্রমপুরের পদ্মা পাড়ের দুই উপজেলা লৌহজং ও টঙ্গীবাড়ি। এই দুই উপজেলার চিত্র পাল্টে দিয়েছেন তিনি। যার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে আশপাশের জেলা-উপজেলা তথা সর্বত্র। দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে দিয়ে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে কাজ করে কিভাবে পাল্টে যায়, বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনা যায় তাই করে দেখাচ্ছেন তিনি। স্কুল কলেজগুলোতে ইতিবাচক পরিবর্তন, শিক্ষার মান উন্নয়য়ন, বাল্যবিয়ে বন্ধকরণ এবং নারীর অগ্রযাত্রা জন্য হরদম কাজ করে যাচ্ছেন। এই অঞ্চলের অসহায় নারীদের বাতিঘর হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। পথে পান্তরে তিনি ঘুরে ফিরছেন সামাজিকীকরণে তথা মানুষের কল্যাণে কাজ করতে। কোথায় মানুষের কষ্ট। তাঁর নাম সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি। মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজং উপজেলার গাঁওদিয়ার সন্তান তিনি। মানিক বন্দ্যোপধ্যায়ের পতুল নাচের ইতিকথার গাঁওদিয়া গ্রামে জন্ম নেয়া এই নারী এখন নারীর অগ্রযাত্রায় এক আলোক বর্তিকা। নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও সৎ এবং কর্মবীর রাজনীতিক হয়ে উঠে এসছেন। এক নারী রাজনীতিক শুধু নয়, জেলা ছাপিয়ে সারা বাংলাদেশের আলোকবর্তিকা হিসাবে সুপরিচিত। হুইপের দায়িত্ব পালন কালেও তিনি দেশে বিদেশে সুনাম কুড়িয়েছেন। তাঁর সৎ ও সত্য-সুন্দরের পক্ষের রাজনীতি এই অঞ্চলের রাজনীতির চেহারা পাল্টে দিয়েছে। আওয়ামী লীগ তথা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তি এখানে শক্ত অবস্থান নিয়েছে এই নারীর সাহসী ভূমিকায়। ভৌগোলিক ও নানা কারণে এই জেলা প্রতিকূল সময় পার করছিল। সেখানে তার ভূমিকা জনপদকে পাল্টে দিয়েছে। চুতুর্থবারের মত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। একজন নারী হয়েও দীর্ঘদিন ধরে তিনি একনিষ্ঠতভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। প্রণোদনা দেয়ার মতো বিচক্ষণ এবং অসাধারণ মেধাবী সদস্য সদস্য সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি। লৌহজং ও টঙ্গীবাড়ি উপজেলা নিয়ে গঠিত মুন্সীগঞ্জ-২ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হচ্ছেন তিনি। এবার নিয়ে তিনি সরাসরি ভোটে টানা তৃতীয়বার সদস্য সদস্য নির্বাচিত হলেন। আর সংরক্ষতি নারী আসনের সংসদ সদস্যসহ ৪র্থ বারের মতো সংসদ সদস্য হলেন। নবম সংসদ নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর তিনি জাতীয় সংসদের হুইপ ছিলেন। সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি জনকণ্ঠকে বলেন, সমাজ হল পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা ব্যক্তিবর্গের সংঘবদ্ধ ব্যবস্থা যেখানে মানুষ সহযোগিতা, সম্পর্ক ও সহানুভূতির ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ ভাবে বসবাস করে। সমাজ গড়ে ওঠার সঙ্গে পারস্পরিক সহযোগিতার বিষয় জড়িয়ে আাছে। সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি বলেন, ‘আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালযের ভূগোল বিভাগের ছাত্রী ছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন সময়ে পড়াশোনার সঙ্গে সঙ্গে ছাত্রলীগের মিটিং ও মিছিলে অংশগ্রহণ করতাম। পড়াশোনা শেষে যখন সংসার এবং শিক্ষকতা পেশায় জড়িয়ে যাই। তখন আমার ছোট বেলার স্বপ্ন, বেশি তারা করে। কারণ আমার স্বপ্ন ছিল মানুষের কল্যাণে তথা সামাজিকীকরণে অবদান রাখা। বঙ্গবন্ধুর সোনারবাংলা প্রতিষ্ঠায় কিছু অবদান রাখা। জনতার মঞ্চসহ আওয়ামী লীগের আন্দোলন সংগ্রামে অংশ নেই। ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে ১ম বার সংরক্ষিত মহিলা আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দিয়ে সংসদ সদস্য করে দেশের জন্য কাজ করার সুযোগ করে দেন। চার চার বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে সংসদীয় এলাকার সেই সময়ের আর এই সময়ের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক আর অবকাঠামো পরিবর্তন প্রসঙ্গে বলেন, আমি ১৯৯৬ সহ চারবার শেখ হাসিনা মনোনয়ন দিয়ে আমাকে সংসদ সদস্য হওয়ার সুযোগ করে দেন। জনগণ আমাকে যেভাবে সমর্থন দিচ্ছে সহযোগিতা করছে তা বিরল। ’৯৬ সালে আমি ১ম বার সংসদ সদস্য হওয়ার পর দেখেছি এখানে মানুষের মধ্যে দারিদ্র্যতা ছিল বেশি। ছেলের বয়স ১৩-১৪ বছর হলেই বিদেশে পাটিয়ে দিত। তখন সন্তানদের পড়া-লেখার বিষয়ে মা-বাবাদের এত আগ্রহ ছিল না। তৎকালীন নির্বাচিত জন প্রতিনধিরা এলাকার উন্নয়ন মূলক কাজ খুব কম করেছেন। কোন কোন এলাকায় উন্নয়ন হয়নি বললেই চলে। এ সমস্ত এলাকার শিক্ষার মান খুব করুন ছিল। এক সময় পাল ও সেন আমলের রাজধানী বিক্রমপুরে পড়া-লেখার মান সর্বনিম্ন পর্যায়ে চলে গিয়েছিল। নদী ভাঙ্গায় ক্ষতিগ্রস্ত হাজার হাজার পরিবার মোটামুটি গৃহহীন অবস্থায় জীবন যাপন করত। ওই সময় কালে এলাকার নারীরা খুব পিছিয়ে ছিল। তখন উল্লেখ করার মতো তেমন কোন সাংস্কৃতিক চর্চার ব্যবস্থা ছিল না বা সাংস্কৃতি চর্চা করা হতো না। সামনের পরিকল্পনা প্রসঙ্গে জনাব এমিলি জনকণ্ঠকে বলেন, মানুষের যেমন স্বপ্ন দেখার শেষ নেই, ঠিক আমার ও নির্বাচনী এলাকার (১৭২, মুন্সীগঞ্জ-২, লৌহজং ও টঙ্গীবাড়ি উপজেলা) মানুষ ও তাদের উন্নয়ন নিয়ে স্বপ্নেরও শেষ নেই। আমার নির্বাচনী এলাকার শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য একটি পরিপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়, একটি মেডিক্যাল কলেজ ও কর্মজীবী নারীদের জন্য একটি মহিলা হোস্টেল করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। কারণ এই অঞ্চলে হাজার বছর আগে বিশ^বিদ্যালয় তথা বৌদ্ধবিহার ছিল। যেখান থেকে অতীশ দীপঙ্করের মতো জ্ঞানী মানুষ তৈরি হয়েছেন। এখন আবার আমরা চাই এই জনপদ থেকেই অতীশ দীপঙ্কর, বিজ্ঞানী স্যার জগদীশচন্দ্র বসু, সত্যেন সেন, বুদ্ধদেব বসু, সরেজনী নাইডু, সাঁতারু ব্রজেন দাস-মোশারফ হোসেন খানদের মতো গুণী মানুষের উঠে আসুক। পদ্মা পাড়ের নারী হলেও সাগুফতা ইয়াসমিন লেখা পড়া করেছেন রাজধানী ঢাকায়। কিন্তু গ্রামেই তার মন পড়ে থাকত। তাই ঢাকায় পড়াশোনা করলেও গ্রামের সঙ্গে তাঁর এবং পুরো পরিবারের সংযোগ ছিল দৃঢ়। ১৯৭৮ সালে ধানমন্ডি গার্লস স্কুল এ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি, ১৯৮০ সালে হলিক্রস স্কুল এ্যান্ড কলেজ তিনি এইচএসসি পাস করেন। পরে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯৮৪ সালে তিনি ভূগোল ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ে কৃতিত্বের সঙ্গে স্বাতক (সম্মান) এবং ১৯৮৬ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই একই বিষয়ে মাস্টার্স করেন।
×