ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পাল্টে দেয়া হচ্ছে উপকূলীয় সাগরপারের রাখাইন জনপদের নাম পরিচিতি

প্রকাশিত: ০৬:৩৯, ২৩ জানুয়ারি ২০২০

 পাল্টে দেয়া হচ্ছে উপকূলীয় সাগরপারের রাখাইন জনপদের নাম পরিচিতি

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, পটুয়াখালী ॥ ১৯৯১ সালের আদম শুমারী কমিউনিটি সিরিজ পটুয়াখালী জেলার বইয়ের ৭৫ নম্বর পৃষ্ঠায় এখনও গ্রামটির নাম লেখা রয়েছে হুইচ্যানপাড়া। যার ভিলেজ কোড নম্বর-২৪। সবশেষ বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রকাশিত ২০১১ সালের পপুলেশন এন্ড সেন্সাস কমিউনিটি রিপোর্ট পটুয়াখালী (আদমশুমারি ও গৃহগণনা-২০১১) এ বইয়ের ৯১ পৃষ্ঠায় কুয়াকাটা পৌর এলাকার পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের গোটা মহল্লার নাম লেখা রয়েছে হুইচ্যান পাড়া। অথচ এখন গ্রামটির নাম করা হয়েছে হোসেনপাড়া। কবে, কারা, কীভাবে এমনটি করেছে তা কেউ বলছে না। আদিবাসিন্দা রাখাইনদের সৃজিত এই জনপদে তাদের পাড়ার মাদবরদের অর্থাৎ হেডম্যানদের নামানুসারে হয়েছে গ্রাম কিংবা এলাকার নামকরণ। যেমন কলাউ মগের নামানুসারে কলাপাড়া। কিন্তু এক শ্রেণীর ভূমিদস্যুরা গভীর চক্রান্ত করে সাগরপারের এই জনপদের সঠিক ইতিহাস বিকৃত করে পাল্টে দিচ্ছে। এ প্রক্রিয়া এখনও অব্যাহত রয়েছে। কুয়াকাটার হুইচ্যান পাড়ার পূর্বদিকের গ্রামটির নাম এখনও মম্বিপাড়া রয়েছে। এটিও রাখাইনদের নাম অনুসারে। এই গ্রামের নাম পাল্টে দেয়া না হলেও রাখাইন পাড়ার দেবোত্তর সম্পত্তি জালিয়াতির মাধ্যমে দলিল করে নেয়া হয়েছে। একইভাবে নাচনা পাড়া এবং চইয়াপাড়ার নামটি পাল্টে রাখা হয়েছে উলামা নগর। লটকে দেয়া হয়েছে সাইনবোর্ড। সাইনবোর্ডটির উল্টোদিকে দোকানপাটের সাইনবোর্ডে এখনও নাচনাপাড়া লেখা রয়েছে। লতাচাপলী ডংকুপাড়ার একাংশের নাম রসুলপুর লিখে সাইনবোর্ড দেয়া হয়েছে। দোকাসী পাড়াকে দোভাষী পাড়া, শিপু পাড়ার নাম পাল্টে মনষাতলী রাখা হয়েছে। এভাবে যে যার মতো করে আদি নামকরন পাল্টে দেয়ার কাজ করে যাচ্ছে। নতুন প্রজন্ম আদৌ জানতে পারবেনা মূল ইতিহাস। এখানকার অধিকাংশ জনপদ রাখাইনদের সৃজিত। বিপদ শঙ্কুল এই জনপদকে তাঁরা করেছেন আবাসস্থল। তারা জমিজমা হারিয়ে আজ নিঃস্ব। এ নিয়ে রয়েছে বিষাদময় এক অধ্যায়। এক সময়ের দাপুটে এই জনগোষ্ঠী এখন পরিণত হয়েছে ক্ষয়িষ্ণু উপ-জাতিতে। আর পুরো ইতিহাস পাল্টে দেয়ার জন্য রাখাইনদের নামানুসারে হওয়া জনপদের নাম পাল্টে দেয়ার সুদুরপ্রসারি পরিকল্পনা চালাচ্ছে একটি মহল। বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম নেত্রী ও মানবাধিকার কর্মী রাখাইন মেইনথীন প্রমীলা জানান, ১৭৮৪ সাল থেকে এপর্যন্ত বরগুনা ও পটুয়াখালী জেলা থেকে রাখাইন অধ্যুষিত ১৯০টি পাড়া বা গ্রাম বিলুপ্ত হয়েছে। কোন কোন পাড়ার নাম পর্যন্ত পাল্টে দেয়া হয়েছে। এসব পাড়ার হাজার একর জমি কাদের দখলে রয়েছে প্রশ্ন করে তা উদ্ধারে সরকারের উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। তাদের হিসাব অনুসারে পটুয়াখালীতে মোট রাখাইনপাড়া ছিল ১৪৪টি এবং বরগুনায় ছিল ৯৩টি। যার মধ্যে পটুয়াখালীতে রয়েছে মাত্র ৩৩টি, আর বরগুনায় রয়েছে ১৪টি। বর্তমানে কলাপাড়ায় রাখাইন পরিবারের সংখ্যা ৩২৫টি। কলাপাড়ায় পর্যটন এলাকার অলঙ্কার রাখাইন জনগোষ্ঠী এভাবে নানা বঞ্চনায় নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। সবশেষ পাড়ার কিংবা এলাকার নাম পর্যন্ত পাল্টে দেয়ার কর্ম শুরু হয়েছে। সাগরপারের আদিবাসী এই সম্প্রদায়ের দাবি, তাদের পাড়াগুলো রক্ষার্থে এখনই সরকারিভাবে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।
×