ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বিঘ্নে ভোট দিয়ে বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে ॥ সিইসি

প্রকাশিত: ১০:৩৪, ২৩ জানুয়ারি ২০২০

  নির্বিঘ্নে ভোট দিয়ে বাড়ি ফেরার  ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে ॥ সিইসি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নির্বিঘ্ন করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সব সংস্থা সমন্বিতভাবে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিশেষ করে নির্বাচনে সব ধরনের বিশৃঙ্খলা বা গোলাযোগ এড়াতে তারা একসঙ্গে কাজ করবে। এছাড়াও নির্বাচনের দিন গুজব ছড়িয়ে কোন পক্ষ যাতে কোন ধরনের সুবিধা নিতে না পারে সেদিকে তারা কঠোর নজর রাখবে। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে ভোট ৮টায় শুরু হলেও ইভিএম মেশিন সকাল ৭টা থেকে চালু করা হবে। ভোটগ্রহণের ১৫ মিনিট আগে প্রার্থীর এজেন্টদের উপস্থিতিতে মক বা মহড়া ভোট নেয়া হবে। এছাড়া নির্বাচন সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত ওয়ারেন্ট ছাড়া কারো গ্রেফতার না করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি দির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বৈঠকে সিইসি নূরুল হুদা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও তাদের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, সিটি নির্বাচন নির্বিঘ্ন করতে কমিশন কঠোর অবস্থানে রয়েছে। ভোটে সবাই মহোৎসবের আমেজে রয়েছে। দুই সিটি নির্বাচনে কোন ধরনের অনিয়ম দেখতে চাই না। বুধবার বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বৈঠকে নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। নির্বাচন ভবনের অডিটরিয়ামে (বেইজমেন্ট-২) ঢাকা উত্তর ও দক্ষিন সিটি কর্পোরেশনে নির্বাচন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বৈঠকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা বলেন, দুই সিটি নির্বাচনে কোন ধরনের অনিয়ম দেখতে চাই না। জনগণ যাতে পছন্দের প্রার্থীকে নির্বিঘ্নে ভোট দিয়ে বাড়ি ফিরতে পারে এবং এজেন্টরা যাতে কেন্দ্রে থেকে দায়িত্ব পালন করতে পারেন সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনায় কমিশনের দৃঢ় একাগ্রতা রযেছে, নিষ্ঠা এবং রয়েছে। নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য কমিশনই একমাত্র কর্তৃপক্ষ। যাদের নির্দেশে এবং ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা তাদের দায়িত্ব পালন করছেন। প্রত্যেককেই অবস্থান থেকে তার দায়িত্ব পালন করতে হবে। এটা করা গেলেই নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে। তিনি বলেন, এক দেশ, এক রাজধানী। ঢাকা সিটি দুটি অংশে বিভক্ত। দুটি অংশে নির্বাচন হচ্ছে। এই নির্বাচনের দিকে আন্তর্জাতিক মহল থেকে শুরু করে দেশের সর্বস্তরের জনগণ তাকিয়ে রয়েছে। ঢাকা সিটি নির্বাচন নিয়ে জনগণ, প্রার্থী এবং ভোটারদের মাঝে একটা মহোৎসব চলছে। নির্বাচন যাতে অবাধ সুষ্ঠু হয়, আমার ভোট আমি দেব, একইসঙ্গে যে পছন্দের প্রার্থীকে দেব সেই প্রার্থীকে যেন দিতে পারি সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। আর এজন্য যার যার অবস্থান থেকে আইন দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। সিইসি বলেন, চাই না নির্বাচনে কোন রকমের অভিযোগ, অনিয়ম ত্রুটি বিচ্যুতি নির্বাচন কমিশন পর্যন্ত আসুক। মাঠ পর্যায়ে যারা দায়িত্ব পালন করছেন, কোন অনিয়ম ত্রুটি বিচ্যুতি কঠোরভাবে দমন করবেন। যাতে কমিশন পর্যন্ত কোন অভিযোগ আসতে না পারে। ইসিতে কারো বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ আসলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, ভোটার নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে যেতে পারেন, নিশ্চিতে ভোট দিয়ে বাড়ি ফিরতে পারেন সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। প্রায়ই বলা হয়ে থাকে এজেন্টদের ভোটকেন্দ্রে যেতে দেয়া হয় না। ভোটকেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হয়, এ ধরনের অভিযোগ যাতে আর না আসে। ভোটকেন্দ্রে এজেন্ট প্রবেশ করলে তার নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। তবে কোন এজেন্ট বাড়ি থেকে না আসলে তাকে নিয়ে আসার দায়িত্ব কমিশনের না। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদা বৈঠকে আরও বলেন বলেন, কোন ধরনের অনিয়ম ও ত্রুটি-বিচ্যুতি দেখতে চাই না। গাফলাতির কোন অভিযোগ এলে তাদের বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এখন পর্যন্ত ভোটের পরিবেশে সন্তাষজনক। সবার নজর ঢাকা সিটির ভোটের দিকে। কোন অভিযোগ পেলে পদক্ষেপ নিতে হবে বিএনপি মেয়র প্রার্থীর প্রচারে হামলার বিষয়ে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়ার পদক্ষেপ সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন এটা অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগ দেয়ার আগে রিটার্নিং কর্মকর্তা তাৎক্ষণিকভাবে খতিয়ে দেখার জন্যে বলেছে। ইভিএমে ভোট প্রক্রিয়ার বিষয়ে সর্বোচ্চ প্রযুক্তির সফলতাও তুলে ধরেন। বলেন, ইভিএমের মাধ্যমে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব। এতে কেন্দ্র দখল করার কোন সুযোগ নেই। সভায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদার সভাপতিত্বে বৈঠকে চার নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম, ব্রিগেডিয়ার (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী ও ইসির সিনিয়র মোঃ আলমগীর, ঢাকার দুই সিটির রিটার্নিং কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব, মহাপুলিশ পরিদর্শক, র্যাবের মহাপরিচালক, ডিএমপি কমিশনার, বিজিবি মহাপরিচালক, ডিজিএফআই পরিচালকসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত রয়েছেন।এছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের প্রতিনিধি ও দুই রিটার্নিং কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বৈঠকে জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার ইভিএমে ৫০ শতাংশ ভোট না পড়লে ব্যালট পেপারে পুনরায় ভোটগ্রহণের জন্য নির্বাচন কমিশনকে সুপারিশ করেন। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, বুথ দখল করে বা গোপন কক্ষে গিয়ে জাল ভোট দেয়ার ঘটনা অবশ্যই প্রতিহত করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও অন্য নির্বাচন কর্মকর্তাদের সম্মিলিতভাবে গোপনকক্ষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আবশ্যক। ইভিএম ব্যবহার সিটি নির্বাচনের ভোটগ্রহণ কমিশনের জন্য এক অগ্নিপরীক্ষা। ভোটারদের উপস্থিতি বৃদ্ধিও করাও একান্ত অপরিহার্য। রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা একান্তভাবে কাম্য। ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের সাফল্যের ওপর নির্ভর করছে এই যন্ত্রটির ভবিষ্যত। এই নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার প্রশ্নবিদ্ধ হলে শুধু নির্বাচন নয়, ইভিএম যন্ত্রটির ভবিষ্যতও অনিশ্চিত হয়ে যেতে পারে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৪০ হাজার সদস্য থাকবে এদিকে বাসস জানায়, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৪০ হাজার সদস্য মোতায়েন থাকবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব মোঃ আলমগীর। সিটি নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের বৈঠক শেষে তিনি বুধবার সন্ধ্যায় এ কথা বলেন। সচিব বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৪০ হাজার সদস্য ভোটের মাঠে থাকবে। কেন্দ্রভিত্তিক সাধারণ কেন্দ্রে ১৬ জন ও গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ১৮ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য থাকবে। এছাড়া স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসাবে র‌্যাব, বিজিবি থাকবে। কেন্দ্র সংখ্যা অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হবে।’ তিনি বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকরী বাহিনীগুলোর প্রধান এবং প্রতিনিধিরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। সেখানে ভোট সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে কিভাবে অনুষ্ঠিত হতে পারে সেটি কমিশনের পক্ষ থেকে তুলে ধরা হয়েছে। এরজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর দায়িত্ব তুলে ধরা হয়েছে। তারা বলেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় যা যা করণীয় সে ব্যাপারে তারা সচেতন আছেন। এ ব্যাপারে তারাও দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।’
×