ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

নগরভবনসহ কর্পোরেশনের সব অফিস দুর্নীতিমুক্ত করা;###;দুই সিটির ৩২ সেবা খাতে অবহেলিত নতুন ৩৬ ওয়ার্ড

নগরপিতাদের সামনে ৪০ চ্যালেঞ্জ

প্রকাশিত: ১০:৩২, ২৩ জানুয়ারি ২০২০

  নগরপিতাদের সামনে ৪০ চ্যালেঞ্জ

রাজন ভট্টাচার্য ॥ দরজায় কড়া নাড়ছে সিটি নির্বাচন। ১ ফেব্রুয়ারি সামনে রেখে বড় দলগুলোর মেয়র প্রার্থীদের দম ফেলার ফুরসত নেই। সকাল থেকে সন্ধ্যা ছাপিয়ে রাত অবধি মাঠে আছেন তারা। অলিগলি থেকে রাজপথ পর্যন্ত সবখানেই নির্বাচনী প্রচার। প্রার্থীরা এলাকাভিত্তিক উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। ভোটারদের বুকে জড়িয়ে আলিঙ্গন করছেন। ছুটছেন নগরীর একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রাপ্ত। হাজারও মানুষের প্রচারে কখন নির্বাচন আচরণবিধি ভাঙছে তাও দেখার যেন সময় নেই। প্রতিদিনই প্রার্থীদের আচরণবিধি না মানার বিষয়ে প্রশ্ন উঠছে। তবে নির্বাচন ঘিরে গোটানগরী এখন উৎসবমুখর। মঙ্গলবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, গলায় ব্যাজ লাগিয়ে বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের সমর্থকরা। স্থানীয় কাউন্সিলর প্রার্থীদের এলাকাভিত্তিক পরিকল্পনা, লিখিত প্রতিশ্রুতি পৌঁছানো হচ্ছে ভোটারদের কাছে। প্রার্থীদের নিয়ে বাজানো হচ্ছে নানা রকমের গান। হচ্ছে খ- খ- মিছিল। চলছে সমাবেশ। খোলা ট্রাকে বাদ্য বাজনার তালে তালে নেচে গেয়ে ভোটারদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছেন প্রার্থীরা। রাস্তা, দেয়াল, উড়াল সড়ক থেকে শুরু করে সবখানেই ছেয়েছে পোস্টারে। মেয়রদের পক্ষে চিত্রনায়ক-নায়িকা ও অভিনয়শিল্পী থেকে শুরু করে প্রচারে নামানো হচ্ছে বিশিষ্টজনদের। সব মিলিয়ে রাজধানী এখন ভোট উৎসবের নগরী। প্রশ্ন হলো হাজারো সঙ্কটের মধ্যে থাকা এই নগরে যারা ১ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে মেয়র হচ্ছেন তাদের সামনে কেমন চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। গ্রীন সিটি গড়ার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি রয়েছে দুই সিটির নতুন ৩৬ ওয়ার্ডে নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করা। কারণ ’১৭ সালে যেসব ইউনিয়ন সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে এর কোথাও উন্নত নাগরিক সুবিধা পৌঁছায়নি। শুধু প্রতিশ্রুতিতেই সীমাবদ্ধ থেকেছে সবকিছু। তাই এসব এলাকার ভোটারদের সবচেয়ে বড় চাওয়া হলো এলাকাভিত্তিক উন্নয়ন। আর যিনি এই উন্নয়ন শতভাগ নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সবার মন জয় করতে পারবেন দলমত নির্বিশেষে তার পক্ষেই যাবে বেশি ভোট। শীঘ্রই মেয়রপ্রার্থীরা বিভিন্ন পরিকল্পনা তুলে ধরে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করবেন। তবে গ্রীন সিটি গড়ে তোলার পক্ষে সব মেয়র প্রার্থীই একমত। স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে জানা গেছে, সামনের দিনে ঢাকার দুই মেয়রের সামনে অন্তত ৪০ গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ রয়েছে। যারা এসব চ্যালেঞ্জ নিয়ে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন তারাই হবেন প্রকৃত অর্থে নগরপিতা। সেইসঙ্গে ভোটারদের মন জয় করা মানেই সামনের দিনে পথচলা আরও মসৃণ হবে। নতুন মেয়রদের সামনে মূল চ্যাঞ্জেগুলোর মধ্যে রয়েছে গ্রীন ঢাকার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ, নগরীকে আন্তর্জাতিক মানে গড়ে তোলা, মেয়রের ক্ষমতা বাড়ানো, নিজস্ব আয়ের ব্যবস্থা, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ, নাগরিক সুবিধা বাড়ানো, জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা, পরিবেশ দূষণ রোধ, জলাবদ্ধতা নিরসন, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, দুর্নীতি হ্রাস, যানজট রোধে কার্যকর ব্যবস্থা, পরিচ্ছন্ন নগরী, রাসায়নিকের গুদাম সরানো, রিক্সা সমস্যার সমাধান, নতুন ৩৬ ওয়ার্ডে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো, খেলার মাঠ বৃদ্ধি ও পার্ক স্থাপন, জলাশয় বৃদ্ধি, বিনোদনের ব্যবস্থা, রাস্তাঘাটের উন্নয়ন, যখন তখন রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধের ব্যবস্থা, পর্যাপ্ত যানবাহন নামানো, যাত্রী ছাউনির ব্যবস্থা, পর্যাপ্ত টয়লেট নির্মাণ, ফুটপাথ উচ্ছেদ, দখলমুক্ত রাজধানী, হলিডে মার্কেট, নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে হটলাইন চালু, ২৪ ঘণ্টা নগর সেবার ব্যবস্থা, পুরান ঢাকার ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভাঙ্গা নিয়ে কার্যকর উদ্যোগ, নাগরিক নিরাপত্তা, অপরাধ দমনে সিসিটিভি স্থাপন, উন্নত শিক্ষার ব্যবস্থা, পার্কিং জোন নির্মাণ, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহে ভূমিকা, দূষণ সৃষ্টিকারী যানবাহন বন্ধে ব্যবস্থা, বাসা ভাড়া রোধে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ ও বাজার মনিটরিং, মশক নিধন, রাস্তা বাড়ানো, ওয়াইফাই জোন স্থাপন প্রভৃতি। আওয়ামী লীগের আতিকুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, ৮ মাসে অনেক চেষ্টা করেছি। অভিজ্ঞতার অভাব থাকলেও চেষ্টার অভাব ছিল না। আমি দায়িত্ব নেয়ার কয়েকদিন পরই বড় দুর্যোগ ছাত্র আন্দোলন শুরু। কুর্মিটোলায় বাসচাপায় শিক্ষার্থী আবদুল করিম রাজীব ও দিয়া খানম মীমের মৃত্যুর ঘটনায় সারাদেশ আন্দোলনে উত্তাল হয়ে ওঠে। এটি নিয়ন্ত্রণ করতেই অনেকটা সময় গেছে। এরপর এফআর টাওয়ার, গুলশান-১ ডিসিসি মার্কেটসহ কয়েকটি অগ্নিকা-। যখনই কাজে মনোনিবেশ করেছি তখনই কোন না কোন দুর্ঘটনা সামনে এসেছে। তিনি বলেন, এগুলো শুধু দুর্ঘটনা ছিল না, এগুলো ছিল উন্নয়ন কাজে আমার জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। মাত্র আট মাসে এত বাধা সত্ত্বেও বেশকিছু কাজ দৃশ্যমান করেছি। কিছু অর্জন তো আছে। এখন বুঝতে পারছি কোথায় কি করতে হবে। আট মাসের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে সামনে এগোতে চাই। নির্বাচনী প্রচার বলে কিছু নেই। মানুষের কাছে প্রতিদিন যাচ্ছি। কাজ হচ্ছে, প্রচারও হচ্ছে। গ্রীন ঢাকা গড়াসহ বেশকিছু কাজ শুরু করেছেন আতিকুল ইসলাম। বলেন, প্রথমবারের মতো সাড়ে ৯ কিমি সাইকেল লেন করেছি। দ্রুতই এর উদ্বোধন হবে। ইতোমধ্যে ২৮৮ মিটার চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছি। এটা কিন্তু সহজ কাজ নয়। নতুন আরও অনেক কিছু করার ইচ্ছা আছে। যদি নির্বাচিত হতে পারি সেগুলো বাস্তবায়ন করব। আতিক বলেন, জনগণের কাজের সুবিধার কথা চিন্তা করে হট লাইন ‘৩৩৩’ চালু করেছি। এটা বাংলাদেশে প্রথম। জনসম্পৃক্ততা বাড়াতেই এটা করেছি। জনপ্রতিশ্রুতি ও তা বাস্তবায়নের জবাবদিহিতার জন্যই এটি করা হয়েছে। অপরদিকে বিএনপির তাবিথ আওয়াল বলেন, গত নির্বাচনে আমার স্লোগান ছিল ‘নতুন প্রজন্ম, নতুন ঢাকা’। এবারও এ স্লোগানেই গুরুত্ব দেয়া হবে। একটি পরিকল্পিত আন্তর্জাতিক মানের আদর্শ ঢাকা নগরী গড়ে তোলাই হবে আমার প্রধান কাজ। নতুন ৩৬ ওয়ার্ড ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি কর্পোরেশনে নতুন করে যুক্ত হওয়া ১৬ ইউনিয়নে ৩৬ ওয়ার্ড গঠন করে সরকার। ’১৭ সালের জুনে নতুন ওয়ার্ড গঠন হলেও বাড়েনি নাগরিক সুবিধা। এমন অনেক ওয়ার্ড আছে যা স্রেফ গ্রাম। এ নিয়ে দুই সিটি কর্পোরেশনে মোট ওয়ার্ড হলো ১২৯। দুই সিটি কর্পোরেশনের সীমানা নির্ধারণ কর্মকর্তারা কাউন্সিলর নির্বাচনের উদ্দেশে এসব ওয়ার্ড গঠনের সুপারিশ করলে স্থানীয় সরকার বিভাগ নতুন ওয়ার্ড গঠনের গেজেট জারি করে। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের পুরনো ছত্রিশের সঙ্গে নতুন করে ১৮ ওয়ার্ড যোগ হওয়ায় ওয়ার্ড সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৪। আর দক্ষিণ সিটির ওয়ার্ড সংখ্যা ৫৭ থেকে বেড়ে হয়েছে ৭৫। এর মধ্য দিয়ে ঢাকার দুই সিটির আয়তন বেড়ে দ্বিগুণের বেশি হয়। ২০১৭ সালের ২৮ জুন ঢাকা সিটির আয়তন বাড়িয়ে গেজেট প্রকাশ করে সরকার। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে যুক্ত বাড্ডা, ভাটারা, সাতারকুল, বেরাঈদ, ডুমনি, উত্তরখান, দক্ষিণখান ও হরিরামপুর ইউনিয়নকে ৩৭ থেকে ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডে বিভক্ত করা হয়েছে। আর ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে যুক্ত শ্যামপুর, দনিয়া, মাতুয়াইল, সারুলিয়া, ডেমরা, মান্ডা, দক্ষিণগাঁও ও নাসিরাবাদ ইউনিয়নকে ৫৮ থেকে ৭৫ নম্বর ওয়ার্ডে বিভক্ত করেছে সরকার। মেয়রের ক্ষমতা কতটুকু ঢাকার মেয়রের ক্ষমতা নিয়ে অনেক আলোচনা হয়ে থাকে। যার বেশিরভাগের মাঝেই রয়েছে তার ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা নিয়ে। ঢাকার প্রায় অর্ধশতাধিক সরকারী সেবা প্রদানকারী সংস্থাকে ঢাকার মেয়রের অধীনে আনার দাবিও রয়েছে। আবার কেউ একটি নগর সরকার গঠন করার কথাও বলছেন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটের কথা বিবেচনা করে বলা যায়, একজন মেয়রের বর্তমান যতটুকু ক্ষমতা রয়েছে, তাকে ব্যবহার করে ঢাকাকে অনেকটাই অগ্রসর করা যায় যদি সদিচ্ছার পাশাপাশি দক্ষতা এবং পর্যাপ্ত উদ্যোগ থাকে। ঢাকার সাবেক মেয়রদের সদিচ্ছা কতটুকু ছিল সেটা বিবেচনার বিষয়, সদিচ্ছা থাকলেও দক্ষতার অভাব ছিল। আবার দক্ষতা থাকলেও বেশকিছু ক্ষেত্রে উদ্যোগের অভাব ছিল। সীমাবদ্ধতার কারণে এসব উদ্যোগের শতভাগ সফলতা আসেনি। ৩২ খাতে দুই সিটির সেবা ঢাকা দক্ষিণ ও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ওয়েব সাইটে গিয়ে তাদের সেবা দেয়ার তালিকা থেকে আলাদা তথ্য জানা যায়। এরমধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন ১৪টি খাতে এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ১৮ খাতে সেবা দেয়ার তথ্য উল্লেখ করেছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে যেসব সেবার কথা জানানো হয়েছে তা হলো রাস্তার বৈদ্যুতিক লাইট, হাসপাতাল, ডিএসসিসি হাসপাতাল, রাস্তা/নর্দমা/ ফুটপাথ, বাজার, জন্মনিবন্ধন, ভস্মীকরণ/ শ্মশানঘাট, সমাধিস্থল, ব্যায়ামাগার, কমিউনিটি সেন্টার, মাতৃমঙ্গল কেন্দ্র, রাস্তার গাড়ি পার্কিং, স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসা, গ্রন্থাগার, সঙ্গীত ও স্কুল, বাসি টার্মিনাল, পাবলিক টয়লেট, পার্ক আর খেলার মাঠ বিষয়ক সেবা দেয়া হচ্ছে। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ওয়েবসাইটে যেসব সেবার উল্লেখ আছে তা হলো রাস্তা খননের অনুমতি, নতুন হোল্ডিং নম্বর, হোল্ডিং ট্যাক্স সার্ভিস কার্যপ্রণালি, হোল্ডিংয়ের নামজারি, ডিএএমএফএ, ট্রেড লাইসেন্স ও নবায়ন পদ্ধতি, জন্মসনদ, কবরস্থান ব্যবস্থাপনা, ধূমপান মুক্তকরণ নির্দেশিকা, যান-যন্ত্রপাতি ভাঙ্গার হার ও নিয়মাবলী, কমিউনিটি সেন্টার বুকিং, বহুতল ভবনের জন্য অনাপত্তিপত্র, জিআইএস ম্যাপ ক্রয়, উদ্যোক্তাদের সেবা কেন্দ্র। এদিকে সিটি কর্পোরেশন আইন অনুযায়ী, সিটির কাজের পরিধির মধ্যে যেসব কাজের উল্লেখ রয়েছে সেগুলোর বিভিন্ন ভাগ ও উপভাগ রয়েছে অন্তত নয়টি। নগর পরিকল্পনাবিদ ড. সারওয়ার জাহান বলেন, নাগরিক সুবিধার অনেক কিছুই পূরণ হচ্ছে না। উদাহরণ হিসেবে আবর্জনা সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনার বিষয়টি তুলে ধরেন মি. জাহান। তিনি বলেন, কমিউনিটি পর্যায়ে বেসরকারী উদ্যোগে আবর্জনা সংগ্রহের কাজটি চলছে। পরে দ্বিতীয় পর্যায়ে আবর্জনা ব্যবস্থাপনার কাজ করছে সিটি কর্পোরেশন। তবে সেখানেও ৭৫ ভাগ কাজ হলেও ২৫ ভাগ কাজ বাকি থেকে যাচ্ছে। তিনি বলেন, এছাড়া নগর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, খেলার মাঠ ও পার্ক ব্যবস্থাপনাও সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বে থাকলেও সেগুলোও ঠিকমতো পালিত হচ্ছে না। তবে এর পেছনে কারণ হিসেবে তিনি শুধু সিটি কর্পোরেশনকে এক তরফা ভাবে দায়ী করতে চান না। তিনি বলেন, আমি বলছি না যে, সিটি কর্পোরেশনের দায়ভার নেই। মূল দায়টা তাদের। তবে এখানে আরও অনেক বিষয় রয়েছে যা সিটি কর্পোরেশনকে তার কাজ করতে অনেক ক্ষেত্রে যথেষ্ট সুযোগ দেয় না। এক্ষেত্রে তিনি বলেন, সরকারের বিভিন্ন অংশ বিশেষ করে নগর পরিচালনার সঙ্গে জড়িত নানা বিভাগ এবং মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সঙ্গে সিটি কর্পোরেশনের সমন্বয়ের অভাব একটি বয় কারণ। এছাড়া সিটি কর্পোরেশন স্থানীয় সরকারের আওতায় হওয়ার কারণে কিছুটা সীমাবদ্ধতার মুখে পড়তে হয়। আমাদের দেশে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে ক্ষমতায়ন করা হয়নি। তনি বলেন, স্থানীয় সরকারের ক্ষমতায়নের পাশাপাশি এর জবাবদিহিতারও ব্যবস্থা করতে হবে। তা না হলে নাগরিক সেবা সুনিশ্চিত করা যাবে না। মেয়রপ্রার্থীদের সামনে চ্যালেঞ্জ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক স্থানীয় সরকার সচিব ও স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ আবু আলম শহীদ খান বলেন, সিটি কর্পোরেশনের কাজের কোন শেষ নেই। শতাধিক কাজের মধ্যে অন্তত চারটি কাজ করতে পারলে মানুষের কাছে মেয়ররা ধন্য হবেন। এই সাবেক সচিব বলেন, নির্বাচিত মেয়রদের প্রধান কাজ হবে নগর ভবন দুর্নীতিমুক্ত করা। মেয়ররা বলেন তাদের ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা। কিন্তু দুর্নীতিমুক্ত হওয়ার ক্ষমতা নিজেদের কাছেই আছে। এজন্য কারো ওপর ভরসা করতে হয় না। তাই নগর ভবন, আঞ্চলিক কার্যালয় ও কাউন্সিলর অফিস যে কোন মূল্যে দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে। তাহলে মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে। এরপর হলো বর্জ্য ব্যবস্থাপনার খুবই খারাপ অবস্থা। যানজট নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে কাজ করতে হবে। এখন নগরীতে এক ঘণ্টার ১ কিমি গাড়ি চলে না। এই সমস্যার সমাধান জরুরী। দূষণমুক্ত সিটি গড়তে প্রয়োজনীয় কার্যকর উদ্যোগ মানুষ দেখতে চায়। চতুর্থ হলো সব বিভাগ ও মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ নিয়ে আসা। এসব হলো মুখ্য কাজ। পাশাপাশি ডেঙ্গু রোধে কার্যকর উদ্যোগ, মশা মারতে নিজেদের মধ্যে সমন্বয়সহ নগরীকে মহামারি মুক্ত রাখার বিকল্প নেই। সিটি কর্পোরেশনের কাজে প্রতিটি সেক্টরে চ্যালেঞ্জ রয়েছেÑ একথা উল্লেখ নগরবিদ ও ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপক নূরুল ইসলাম নাজেম বলেন, মানুষের জন্য কাজ করার মানসিকতা নিয়ে যদি জনপ্রতিনিধরা আসেন তাহলে নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও হয়ত আমরা আগামীতে নগরে দৃশ্যমান নতুন কিছু না কিছু দেখতে পাব, যার দেখা সম্প্রতি মেলেনি। অন্যথায় রুটিনওয়ার্ক ছাড়া কিছু পাব বলে আশা করি না। অপরিকল্পিত এ নগরীতে সব সেক্টরে সমস্যা ও অসংখ্যা চ্যালেঞ্জ একথা উল্লেখ করে এই নগরবিদ বলেন, কোন কিছু সিস্টেমের মধ্যে চলে না। অগোছালো। নতুন মেয়র ও কাউন্সিলরদের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হলো ক্লিন ঢাকা গড়ে তোলা। ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম নিয়ে অন্য সংস্থাগুলোর সঙ্গে কাজ করা। নতুন পার্ক ও বিনোদনকেন্দ্র কয়েক যুগেও আমরা দেখিনি। অথচ শিশু বয়স্কসহ সব নাগরিকের জন্য পার্ক বা মাঠ স্থাপন জরুরী। যেখানে মুক্ত পরিবেশে মানুষ বিনোদনের সুযোগ নিতে পারে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা সরাসরি সিটি কর্পোরেশনের কাজ না হলেও এ বিষয়ে করণীয় রয়েছে জানিয়ে নাজেম বলেন, হাউজিং সেক্টর নিয়ে অনেক কাজের সুযোগ আছে। বিশেষ করে নগরীর গতদরিদ্রদের পরিকল্পিত আবাসন গড়ে তোলার জন্য সিটি কর্পোরেশন কাজ করতে পারে। সিটি কর্পোরেশনের নিজ তাগিদে দেশের অন্যান্য শহরে ইনভেস্ট বাড়িয়ে ঢাকায় নাগরিক চাপ কমাতে হবে। তিনি বলেন, শহরের সক্ষমতা বাড়ানোর ধারণা সিটি কর্পোরেশনের একেবারেই নেই। এ নিয়ে ভাবনা জরুরী। তাছাড়া তিন থেকে চার লাখ মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হন কাউন্সিলররা। তারা নিজ এলাকায় বারবার ড্রেন ভাঙেন, গড়েন। নতুন কাজ নেই। অথচ প্রতি ওয়ার্ড পরিচ্ছন্ন রাখা ও পরিকল্পিত উন্নয়নের জন্য একটি পৃথক কমিটি গঠন জরুরী। নিজ কার্যালয়ে বসে মেয়র প্রতিটি ওয়ার্ডের সমস্যা ও করণীয় ঠিক করতে পারবেন না। তিনি বলেন, খুব বেশি আশা করার সুযোগ নেই নতুন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে। তবুও অন্তত নিয়মিত কাজের পাশাপাশি ৩০ ভাগ যদি নতুন কাজ হয় তাহলে আমরা এগিয়ে যাব। এভাবে আস্তে আস্তে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া ছাড়া বিকল্প নেই।
×