ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অবশেষে বিজিএমইএ ভবন ভাঙ্গা শুরু, শেষ হবে ৬ মাসে

প্রকাশিত: ১০:৩২, ২৩ জানুয়ারি ২০২০

  অবশেষে বিজিএমইএ ভবন ভাঙ্গা শুরু, শেষ হবে ৬ মাসে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অবশেষে রাজধানীর হাতিরঝিলে অবস্থিত বিজিএমইএ ভবন ভাঙ্গার কাজ শুরু করেছে সরকার। আগামী ৬ মাসের মধ্যে ২টি বেজমেন্টসহ মোট ১৫ তলা এ বিশাল ভবন ভাঙ্গার কাজ শেষ করা হবে। এ কার্যক্রম সার্বক্ষণিক দেখভাল করার জন্য বুয়েট, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, রাজউক, ফায়ার সার্ভিস প্রতিনিধিসহ নগর ও ইমারত বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি টিম গঠন করা হয়েছে। বুধবার দুপুরে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে শুরু হওয়া এ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এমপি। মন্ত্রী নিজ হাতে মেশিনের যাহায্যে বিজিএমইএ ভবনের নিচ তলার ফ্লোরের কিছু অংশ উপড়ে দেন। একইসঙ্গে হাতিরঝিলে নক্সাবহির্ভূত কোন প্রকার স্থাপনা রাখা হবে না বলেও জানান মন্ত্রী। ভাঙ্গার কাজ শুরু করে দেয়া হলেও শ্রমিকদের নিয়ে পুরোদমে কাজ শুরু হবে আগামী সোমবার। বুধবার ভবন ভাঙ্গার কাজ পুরোদমে শুরুর পরিকল্পনা না থাকলেও রাজউকের ৪/৫টি এস্কেভেটর এনে রাখা হয় বিজিএমইএ ভবনের কাছে। ভাঙ্গার কাজ উদ্বোধন শেষে এসব যন্ত্র আবার ফিরিয়ে নেয়া হয়। এ সময় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ শহীদ উল্লা খন্দকার, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান মোঃ সাঈদ নূর আলম, রাজউকের সদস্যবৃন্দ এবং হাতিরঝিল প্রকল্পের পরিচালক ও সংস্থাটির প্রধান প্রকৌশলী এ এস এম রায়হানুল ফেরদৌস উপস্থিত ছিলেন। বিজিএমইএ ভবন ভাঙ্গা সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, দৃষ্টিনন্দন হাতিরঝিলের ওপর অপরিকল্পিত ও বেআইনীভাবে বিজিএমইএ ভবন গড়ে উঠেছিল। চমৎকার ঢাকার ওপর বিষফোঁড়ার মতো এই ভবন নিয়ে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের প্রেক্ষিতে এটি অপসারণের জন্য আমরা পরিকল্পনা নেই। সেই পরিকল্পনায় আইনগত কোন ত্রুটি যাতে না থাকে সেজন্য পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রাপ্ত সর্বোচ্চ দরদাতাকে কাজ দেয়া হয়। টেকনিক্যাল কারণে তারা অপারগতা প্রকাশ করায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরদাতাকে ভবনটি অপসারণে আমরা দায়িত্ব দিয়েছি। তারা ছয় মাসের ভেতরে ভবনটি অপসারণ করবে। এ কার্যক্রম সার্বক্ষণিক দেখভাল করার জন্য বুয়েট, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, রাজউক, ফায়ার সার্ভিস প্রতিনিধিসহ নগর ও ইমারত বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি টিম গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া রাজউকের নিজস্ব একটি টিমও এ কাজ নিয়মিত দেখভাল করবে। কোনভাবেই যাতে র‌্যাংগস ভবনের মতো কোন বিপর্যয় বা প্রাণহানি না ঘটে সেজন্য এসব উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলা হয়েছে। তবে প্রথমে অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে ভবন ভাঙ্গার উদ্যোগ নেয়া হলেও পারিপার্শ্বিক পরিবেশ বিবেচনায় সরকার সেই পথ থেকে সরে আসে। প্রথমে অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে ভাঙ্গার কথা ভাবা হলেও পরে দেখা গেছে পাশে ফাইভ স্টার হোটেল সোনারগাঁসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান আছে। ওই জাতীয় কাজ করতে আশপাশের অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। সবদিকে ধুলা ছড়িয়ে পড়লে পরিবেশেরও ক্ষতি হবে। সেজন্য যান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভাঙ্গার সিদ্ধান্ত হয়েছে রাজউক। অনুষ্ঠানে পূর্তমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনার আলোকে পরিবেশ দূষণসহ সকল পারিপার্শ্বিক ক্ষতিকর পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমরা যান্ত্রিক উপায়ে এ ভবন ভেঙ্গে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ভবনের প্রতিটি স্তর ভাঙ্গার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙ্গা অংশ দ্রুত সরিয়ে নিয়ে নির্ধারিত জায়গায় রাখা হবে যাতে কোনভাবেই র‌্যাংগস ভবনের মতো প্রাণহানি না ঘটে। ভবন ভাঙ্গার কাজে যেন পরিবেশ বিপন্ন না হয়, সেজন্য আমরা সকল প্রস্তুতি রেখেছি। সুন্দর ঢাকা গড়া শুধু রাজউক বা গণপূর্ত মন্ত্রণালয় বা সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। গণমাধ্যমসহ সকলের সহযোগিতা নিয়ে হাতিরঝিলের মূল গভীরতার সঙ্গে মিল রেখে এ ভবন তুলে ফেলা হবে, যাতে পানির গতি বাধাপ্রাপ্ত না হয়। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, দেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায় নির্বিঘেœ যাতে ব্যবসা করতে পারে, সেজন্য ভবন ভাঙ্গার বহু পূর্বের প্রস্তুতির পরও বিজিএমইএকে তাদের নিজস্ব মালামাল সরিয়ে নেয়ার সুযোগ দেয়া হয়েছে। পোশাক শিল্পের রফতানি দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সবচেয়ে বড় খাত। সরকারের দায়িত্ব জনগণের জন্য, রাষ্ট্রের জন্য কাজ করা। ভবন ভাংতে রাষ্ট্রের কোন টাকা ব্যয় হচ্ছে না। যারা ভবনটি ভাংছেন তারা নিজেদের খরচে ভবন ভেঙ্গে রাষ্ট্রকে টাকা দিচ্ছেন। ফলে রাষ্ট্রের কোন ক্ষতি হচ্ছে না বা বিজিএমইএ-র জন্য আলাদা কোন ব্যবস্থা হচ্ছে না। বরং দৃষ্টিনন্দন হাতিরঝিলকে আরও পরিবেশসম্মত ও সুন্দর করা হচ্ছে। আদালতের রায় বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
×