ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আহসান উল্লাহ মাষ্টার হত্যা মামলায় ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্তকে জাপার যুগ্ম মহাসচিব করায় গাজীপুরে বিক্ষোভ

প্রকাশিত: ০৮:৫২, ২২ জানুয়ারি ২০২০

আহসান উল্লাহ মাষ্টার হত্যা মামলায় ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্তকে জাপার যুগ্ম মহাসচিব করায় গাজীপুরে বিক্ষোভ

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর ॥ গাজীপুরের জনপ্রিয় আহসান উল্লাহ মাস্টার এমপি হত্যা মামলায় মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামি নুরুল ইসলাম দীপুকে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব করায় গাজীপুরে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ মিছিল অব্যাহত রয়েছে। বুধবার বিকেলে গাজীপুর জেলা শহরের ভাওয়াল রাজবাড়ি রোডস্থ আওয়ামীলীগের দলীয় কার্যালয়ের সামনে মহানগর সেচ্ছাসেবকলীগের কর্মীরা প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ করেছে। গাজীপুর মহানগর সেচ্ছা সেবক লীগের সভাপতি সঞ্জিত মল্লিক বাবুর সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মহানগর আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট ওয়াজ উদ্দিন মিয়া,আব্দুল হাদী শামীম,হাজী মোঃ সেলিম, মোঃ শাহজাহান, সাইফুল্লাহ শাওন, আনোয়ার হোসেন, রাজু শাহ, আনিছুর রহমান খোকন প্রমুখ। সমাবেশে বক্তারা শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলার মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামি নুরুল ইসলাম দিপুকে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে বহিষ্কার ও তার মৃত্যুদন্ডের রায় কার্যকরের দাবী জানিয়ে বলেন, বিদেশ পলাতক ফাঁসির আসামিকে জাতীয় পার্টি যুগ্ম মহাসচিব পদে মনোনীত করে জনপ্রিয় শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার এমপি’র আত্মাকে অপমান করেছে। এসময় বক্তারা খুনি নুরুল ইসলাম দীপুকে কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিবের পদ থেকে বাদ দেয়া না হলে গাজীপুরে জাতীয় পার্টির সকল রাজনৈতিক কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণা দেন। পরে একটি বিক্ষোভ মিছিল দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। মিছিল শেষে নুরুল ইসলাম দিপুর কুশপুত্তলিকা দাহ্য করে বিক্ষোভকারীরা। এদিকে একই দাবীতে গত কয়েকদিন ধরে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের চান্দনা চৌরাস্তা ও টঙ্গীসহ বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ, প্রতিবাদ সমাবেশ ও সড়ক অবরোধ করেছে ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবকলীগসহ অঙ্গসংগঠনের নেতা কর্মীরা। এব্যাপারে প্রয়াত সাংসদ আহসান উল্লাহ মাস্টারের ছোট ভাই মামলার বাদী মতিউর রহমান জানান, গাজীপুরের জনপ্রিয় নেতা সংসদ সদস্য আহসান উল্লাহ মাস্টার ২০০৪ সালে ৭ মে গাজীপুরের টঙ্গীর নোয়াগাঁও মজিদ মিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে স্বেচ্ছাসেবকলীগের সম্মেলন চলাকালে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন। এসময় গুলিতে ওমর ফারুক রতন নামের আরও একজন কিশোর নিহত হন। ঘটনার পরদিন নিহতের ছোট ভাই মো. মতিউর রহমান বাদী হয়ে ১৭জনের নামোল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ১০-১২জনের বিরুদ্ধে টঙ্গী থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ মামলার তদন্ত শেষে ওই বছরের ১০ জুলাই ৩০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। একই বছরের ২৮ অক্টোবর ৩০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। রাষ্ট্রপক্ষে ৩৪ এবং আসামিপক্ষে দুজন সাক্ষ্য দেন। এ মামলায় ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন ২০০৫ সালের ১৬ এপ্রিল রায় ঘোষণা করেন। ওই রায়ে প্রধান আসামী বিএনপি নেতা নুরুল ইসলাম সরকারসহ ২২ আসামিকে মৃত্যুদন্ড, ছয় আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং দুইজনকে খালাস দেয়া হয়। পরবর্তীতে কয়েক আসামী তাদের দন্ডাদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপীল করেন। শুনানী শেষে সর্বশেষ ২০১৬ সালের জুন মাসে উচ্চ আদালতের রায়ে ছয়জনের মৃত্যুদন্ড, ৮জনের যাবজ্জীবন দন্ডাদেশ দেন। রায়ে দ্রুত বিচার আদালতে মৃত্যুদন্ড অথবা যাবজ্জীবন কারাদন্ড হয়েছিল এমন ১১জন আসামিকে খালাস দেয়া হয়। দন্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত বিএনপি নেতা নুরুল ইসলাম সরকার, মাহবুবুর রহমান ও সোহাগ এবং যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রাপ্ত মোহাম্মদ আলী ও নুরুল আমিনসহ ৮জন বিভিন্ন কারাগারে বন্দী রয়েছে। নুরুল ইসলাম দীপুসহ বাকি দন্ডপ্রাপ্তরা ভারত, ইতালি, বেলজিয়া, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশে পলাতক রয়েছে। উল্লেখ্য, আহসান উল্লাহ মাষ্টার ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে গাজীপুর-২ (গাজীপুর সদর-টঙ্গী) আসন হতে দু’বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি ১৯৯০ সালে গাজীপুর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান এবং ১৯৮৩ ও ১৯৮৭ সালে দ’ুদফা পূবাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৯২ সালে উপজেলা পরিষদ বিলোপের পর চেয়ারম্যান সমিতির আহবায়ক হিসেবে উপজেলা পরিষদের পক্ষে মামলা করেন ও দেশব্যাপী আন্দোলন গড়ে তোলেন। এক পর্যাযে তিনি গ্রেফতার হন ও কারাভোগ করেন। আহসান উল্লাহ মাষ্টার শ্রমিক লীগের কার্যকরী সভাপতি ও সাধারণ সস্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। তিনি আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য, শিক্ষক সমিতিসহ বিভিন্ন সমাজ সেবামূলক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
×