ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচন পিছিয়ে হলেও ইবিএম বাদ দিয়ে ব্যালটে ভোট নিন : ফখরুল

প্রকাশিত: ০৮:৫০, ২২ জানুয়ারি ২০২০

নির্বাচন পিছিয়ে হলেও ইবিএম বাদ দিয়ে ব্যালটে ভোট নিন :  ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নির্বাচন কমিশনকে উদ্দেশ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, প্রয়োজনে নির্বাচন পিছিয়ে হলেও ইভিএম বাদ দিয়ে ব্যালটে ভোট নিন। বুধবার সন্ধ্যায় গুলশানের হোটেল লেকশোরে এ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স (এ্যাব) আয়োজিত ‘ইভিএমকে না বলুন, আপনার ভোট সুরক্ষিত করুন’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ দাবি করেন। ফখরুল বলেন, দেশে একজন ব্যক্তির জন্য যে বিচার আরেক ব্যক্তির জন্য সেরকম বিচার নেই। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় দুই বছর ধরে আটকে রাখা হয়েছে। যে জামিন তিনি পাওয়ার যোগ্য, যেটা আমার সংবিধানের মধ্যে আছে সেই জামিনও তাকে দেয়া হচ্ছে না শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে। নাজমুল হুদা জামিন পেয়েছেন, মহিউদ্দীন খান আলমগীর জামিন পেয়েছেন, মোফাজ্জল হোসেন মায়া জামিন পেয়েছেন। এরকম অনেকে জামিন পেয়েছেন। অথচ খালেদা জিয়াকে জামিন দেয়া হচ্ছে না। সম্পূর্ণভাবে আমরা ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। ফখরুল বলেন, মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর। আসছে ১ ফেব্রুয়ারি যে পদ্ধতিতে ভোট নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে তাতে নগরবাসীর ভোটের অধিকার কেড়ে নেয়া হবে। আমরা তীব্রভাবে আপত্তি জানিয়েছে। এখনো বলছি, এই ইভিএম ব্যবহার বন্ধ রাখুন এবং প্রয়োজনে ভোট পিছিয়ে দিয়ে ব্যালটে ভোট নেয়ার ব্যবস্থা করুন। অন্যথায় এদেশের মানুষ আপনাদেরকে ক্ষমা করবে না। ইভিএমের বিরুদ্ধে জনমত তৈরির আহবান জানিয়ে ফখরুল বলেন, আসুন, আজকে সবাই জনগনের কাছে বলি। অত্যন্ত জোরে তাদের ভয়েস, তাদের কন্ঠকে সোচ্চার করুন যে, আমরা ইভিএম মানি না। ইভিএম কখনোই জনগনের সঠিক রায়ের প্রতিফলন ঘটাবে না। তাই আমরা এই ইভিএম প্রত্যাখান করছি। তিনি বলেন, মেশিন ব্যবহৃত হয় মানুষের দ্বারা। মেশিনের পেছনের কারা থাকবেন সেটা একটা জরুরী প্রশ্ন। যেহেতু এই মেশিনের পেছনে বর্তমান নির্বাচন কমিশন আছেন এবং এই সরকার রয়েছে যারা পুরো নির্বাচন ব্যবস্থাটাকে পরিচালনা করছে তাদের উপরে মানুষের কোনো আস্থা নেই। তিনি বলেন, এবারকার দুই সিটি কর্পোরেশনের পুরো নির্বাচনটা ইভিএম দ্বারা ভোট গ্রহন করা হবে। আমরা প্রথম থেকে এর আপত্তি জানিয়ে আসছি। নির্বাচন কমিশনেও আমাদের ডেলিগেশন গিয়েছিলো তারা গিয়ে আপত্তি জানিয়ে এসছেন। ফখরুল বলেন, নির্বাচনটা কেনো? নির্বাচনের মূল কারণটি হচ্ছে, একটা প্রতিনিধিত্বশীল সরকার গঠনের জন্য। সেটা জাতীয় সরকারও হতে পারে, স্থানীয় সরকারও হতে পারে। এই নির্বাচন কমিশন যোগ্য নন, অদক্ষ। বর্তমানে যে অনির্বাচিত সরকার রয়েছেন তাদের আজ্ঞাবহ একটি কমিশন। তারা যে হুকুম করে কমিশন তাই করে। বিগত নির্বাচনে আমরা পুরোটাই দেখেছি তারা সরকারের পরিচালিত হয়ে নির্বাচন করছে। যেটা জনগনের যে মতামত তার বিরুদ্ধে গেলো। ৩০ ডিসেম্বর ভোট তারা ২৯ তারিখে করে ফেলেছে। তাই এই কমিশনকে বিশ্বাস করবার আর কোনো কারণ থাকতে পারে না। আওয়ামীলীগের মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলামের বক্তব্যের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, মঙ্গলবার আমাদের মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল নির্বাচনী প্রচারকালে সরকারি দলের একজন কাউন্সিলর প্রার্থী প্রাকাশ্যে তার ওপর আঘাত করলেন। দূঃখজনকভাবে শুধু না, দুর্ভাগ্যজনক ও লজ্জ্বাজনকভাবে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী বললেন, এটা তাদের দলের নিজস্ব সমস্যা। খুবই দুর্ভাগ্যজনক। এরকম একজন ব্যক্তি যিনি এই কথা বলতে পারেন তার তো মেয়র হওয়ার কোনো যোগ্যতাই থাকতে পারে না। মির্জা ফখরুল বলেন, ইভিএম একটা মাত্র মেশিন। এরকম হাজারো মেশিন দিয়ে আমাদের অর্থনীতি ধবংস করে ফেলা হচ্ছে, আমাদের সমাজকে ধবংস করে ফেলা হচ্ছে, আমাদের পুরো রাষ্ট্রকে ধবংস করে ফেলা হচ্ছে। পত্র-পত্রিকা খুললে দেখবেন, ব্যাংকগুলো নেই। প্রাইভেট ব্যাংকগুলোর ব্যানক্রাফট হওয়ার উপক্রম হচ্ছে প্রায়ই। রাষ্ট্রয়াত্ব ব্যাংকগুলোর একই অবস্থা। সরকারের বাজেট থেকে উল্টো দিতে হয় ব্যাংক পরিচালনার জন্য। ব্যাংক থেকে টাকা দেদারছে লুট হয়ে যায়। শেয়ার মার্কেট মুখ থুবড়ে পড়ে গেছে। রপ্তানি আয় যে গার্মেন্টস থেকে আসে সেই সেক্টারটা আজকে ক্রমান্বয়ের নিচের দিকে যাচ্ছে। আয়োজক সংগঠনের সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম রিজুর সভাপতিত্বে সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আফম ইউসুফ হায়দার, শিক্ষক-কর্মচারি ঐক্য পরিষদের সভাপতি সেলিম ভুঁইয়া, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা বিএনপির হাবিবুর রহমান হাবিব, অধ্যাপক মামুন আহমেদ, বিএনপি নেতা এবিএম মোশাররফ হোসেন, জহির উদ্দিন স্বপন, শাম্মী আখতার প্রমুখ। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরাও উপস্থিত ছিলেন।
×