ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

পুলিশের ভুলে জেল খেটে মুক্ত হলেন দিনমজুর

প্রকাশিত: ০৭:১৪, ২২ জানুয়ারি ২০২০

পুলিশের ভুলে জেল খেটে মুক্ত হলেন দিনমজুর

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ যশোরে নিজের ও বাবার নামের মিল থাকায় পুলিশের হাতে গ্রেফতার সেই মিজান জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। বুধবার যশোর জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক জামিন মঞ্জুর করেন। সন্ধ্যায় তিনি যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান। দিনমজুর মিজান যশোর সদর উপজেলার খোলাডাঙ্গা গ্রামের নূরুল ইসলামের ছেলে। যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ভুলের বিষয়টি আদালতকে অবহিত করা হয়। বিষয়টি আমলে নিয়ে বুধবার আদালত নিরপরাধ মিজানের জামিন দিয়েছেন। বিকেলেই তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। পুলিশের এমন ভুলের জন্য মিজানের কাছে দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ভুল আসামিকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করায় এএসআইকে শো’কজ করা হয়েছে। মামলা সূত্র মতে, ২০১৫ সালের ২৮ জানুয়ারি শহরতলীর সুজলপুর জামতলা আকবর মিয়ার রড ফ্যাক্টরির সামনে খোলাডাঙ্গা গ্রামের সাগর, তাহের, সুজলপুরের হঠাৎপাড়ার মিজানুর রহমান ওরফে পাগলা মিজান, নাজু, জাহাঙ্গীর, রিপন, রনি ও রবিউলসহ ১০/১২ জন নাশকতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে লেখা কিছু পোস্টার টাঙ্গাতে যায়। এসময় সুজলপুর গ্রামের আব্দুস সালাম মিঠু তাদের পোস্টার লাগাতে নিষেধ করে। এতে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে আব্দুস সালাম মিঠুকে লক্ষ্য করে কয়েকটি বোমা নিক্ষেপ করে। মিঠুর চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে সাগর ও তাহেরকে দু’টি বোমাসহ আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। এ ঘটনায় আব্দুস সালাম মিঠু বাদী হয়ে ৮ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরো ২ জনের বিরুদ্ধে যশোর কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা করেন। প্রথমে মামলাটি তদন্ত করেন কোতোয়ালি থানার তৎকালীন এসআই সোলায়মান আক্কাস। সর্বশেষ মামলাটি তদন্ত করে ৮ জনের বিরুদ্ধে ২০১৭ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন এসআই হায়াৎ মাহমুদ খান। মামলার এজাহারে এবং চার্জশিটে আসামির নাম মিজানুর রহমান ওরফে পাগলা মিজান। পিতার নাম নূরুল হাওলাদার ও গ্রামের নাম সুজলপুর হঠাৎপাড়া উল্লেখ করা হয়। অথচ গত মঙ্গলবার ভোররাতে খোলাডাঙ্গা গ্রামের নূরুল ইসলামের ছেলে মিজানুর রহমান ওরফে তোতলা মিজানকে গ্রেফতার করেন কোতোয়ালি মডেল থানার এএসআই আল মিরাজ খান। এসময় মিজান জাতীয় পরিচয়পত্র দেখাতে চাইলেও ওই দারোগা কর্ণপাত করেননি বলে অভিযোগ। শুধু মিজান নয়, ২০২৯ সালে পুলিশের ভুলে যশোরে আরও ৩জন জেল খেটেছেন। ২০১৯ সালের ২০ মার্চ পুলিশ আসামির বদলে নিরপরাধ রেখা খাতুনকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠায়। আসল আসামি বিদেশ থাকলেও স্বামীর নামের মিলে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর ৪ এপ্রিল মুক্তি পান তিনি। রেখা খাতুনের মতো পুলিশের ভুলে তিন মাস কারাভোগ করেন যশোরের আরেক যুবক সবুজ। গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর পুলিশের ভুল ভাঙ্গে। ২০১৯ সালের ২২ মে কারাগার থেকে মুক্তি পান নিরপরাধ সবুজ। রেখা খাতুন ও সবুজের মতো আরও একজন নিরপরাধ মানুষ ৮ দিন কারাবাস করেন যশোরের চৌগাছা উপজেলার সিংহঝুলি গ্রামের কৃষক আব্দুল আজিজ দফাদার (৬১)। গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর ২০১৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর আদালতের নির্দেশে মুক্তি পান তিনি।
×