ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সারাদেশে ফের শৈত্যপ্রবাহ শুরু

প্রকাশিত: ১০:২৫, ২২ জানুয়ারি ২০২০

  সারাদেশে ফের শৈত্যপ্রবাহ শুরু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সারাদেশে আবারও শুরু হয়েছে শৈত্যপ্রবাহ। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত এটা অব্যাহত থাকতে পারে। এর পর আবার তাপমাত্রা বাড়তে থাকবে। এই মাসের শেষে দিনে আবার পশ্চিমা লঘুচাপ সক্রিয় হতে পারে। এর ফলে মাসের শেষে দিকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিপাত হবে। এদিকে একদিনের ব্যবধানে সারাদেশে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৩ ডিগ্রী কমে গেছে। ফলে উত্তরের জনজীবনে আবারও দুর্ভোগ শুরু হয়েছে। এদিকে হিমেল হাওয়ার কারণে খোদ রাজধানীতে বেশ শীতের অনুভূতি পাওয়া যাচ্ছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে মাঘ মাসের শুরুতে সারাদেশের ওপর শুরু হয়েছে মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ। রংপুর বিভাগসহ মাদারীপুর, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার, রাজশাহী, পাবনা, নওগাঁ, যশোর কুষ্টিয়া অঞ্চলসমূহের ওপর দিয়ে যাচ্ছে মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ। এই শৈত্যপ্রবাহের কারণে মঙ্গলবার দেশে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমে দাঁড়িয়েছে ৭.২ ডিগ্রী সেলসিয়াসে। দেশের উত্তরের জনপদ তেঁতুলিয়ায় এই তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। আগের দিন এখানে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১০.২ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এদিকে আবহাওয়া অধিদফতরের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান জনকণ্ঠকে বলেন বৃষ্টির পরে আবারও সারাদেশে শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে। পশ্চিমা লঘুচাপের কারণে গত ১৮ থেকে ১৯ জানুয়ারি দেশের বিভিন্ন স্থানে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিপাত হয়েছে। বৃষ্টির পর তাপমাত্রা কমতে শুরু করেছে। মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ। এটি আরও দুদিন অব্যাহত থাকতে পারে। এরপর আবারও তাপমাত্রা বাড়তে থাকবে। ২৯ জানুয়ারি নাগাদ লঘুচাপের প্রভাবে বৃষ্টিপাত হতে পারে। তবে তিনি উল্লেখ করেন ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত কমবেশি শীতের অনুভূতি থাকবে। এরপর তাপমাত্রা আস্তে আস্তে বেড়ে শীতের বিদায় ঘটবে। তবে তিনি জানান সামনে তীব্র শীতের আশঙ্কা নেই। তবে ঠান্ডার অনুভূতি থাকবে। এদিকে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে পশ্চিমা লঘুচাপ কেটে যাওয়ার কারণে উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয় দেশের পশ্চিমাঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত। মূলত এই উচ্চচাপ বলয়ের কারণে এখানে শীত নামে। এটি বেশ সক্রিয় হয়ে পড়েছে। এর ফলে আবহাওয়া আংশিক মেঘলাসহ শুষ্ক থাকতে পারে। দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। সারাদেশে রাতে তাপমাত্রা হ্রাস পেতে পারে। দিনের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে। এদিকে রাজধানী ঢাকায় শীতের অনুভূতি বেড়ে গেছে। সকাল থেকে সূর্যের আলো থাকলেও হিমেল হাওয়া শীতের অনুভূতি ছিল বেশি। ফলে দুদিন বিরতির পর আবারও গরম কাপড় জড়িয়ে বাইরে বের হচ্ছে রাজধানীবাসী। সন্ধ্যার পর শীতের অনুভূতি বেড়ে যাচ্ছে। আগের দিনের চেয়ে মঙ্গলবার ঢাকায় তাপমাত্রা কমে গেছে কয়েক ডিগ্রী। এদিন ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩.৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস। যা আগের দিনে রেকর্ড হয়েছে ১৬ ডিগ্রীর বেশি। আজ এই তাপমাত্রা আরও কমতে পারে। পঞ্চগড় ॥ হিমালয় ছুঁয়ে আসা শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়ে গেছে। মাঝে কয়েকদিন বিরতি দেয়ার পর সোমবার থেকে জেঁকে বসেছে শীত। মাঘের হুল ফোটানো শীত আর কনকনে ঠান্ডা বাতাসে কাবু হয়ে গেছে জেলার সকল শ্রেণীর মানুষ। শীতে মানুষ তো বটেই, পশু-পাখিরও জবুথবু অবস্থা। শিশু ও বৃদ্ধদের অবস্থা বড়ই কাহিল। ঘন কুয়াশায় ঢেকে থাকছে চারপাশ। আকাশ থাকছে মেঘলা। ঘন কুয়াশায় তিনদিন ধরে সারাদিন সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। দিনে তাপমাত্রা কিছুটা বাড়লেও বিকেলের পর তাপমাত্রা দ্রুত কমে যাচ্ছে। বৃষ্টির মতো শিশির পড়ছে। বিরামহীনভাবে বয়ে চলা ঠান্ডা বাতাস শীতের তীব্রতা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। দিনে ও রাতে শহর ও গ্রামের মানুষ খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা চালাচ্ছে। প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাড়ির বাইরে বের হচ্ছেন না। ঠাকুরগাঁও ॥ শীতের তীব্রতা থেকে বাঁচতে আগুন পোহাতে গিয়ে জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ফুলতলা গ্রামে অগ্নিদগ্ধ হয়ে আসমতি বেওয়া (৭০) নামের এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে। নিহতের ছেলে জয়নাল আবেদিন জানান, শীতের তীব্রতা থেকে রক্ষা পেতে তার মা সোমবার সকালে বাড়ির উঠানে আগুন পোহাচ্ছিলেন। এ সময় অসাবধানতাবশত তার কাপড়ে আগুন লেগে গেলে শরীরের বিভিন্ন অংশ পুড়ে যায়। গুরুতর অবস্থায় প্রথমে তাকে ঠাকুরগাঁও আধুুনিক সদর হাসপাতালে এবং পরে রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তার অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে রেফার্ড করেন। রংপুর ॥ কথায় বলে ‘মাঘের শীতে বাঘ কান্দে’। এবারের মাঘের শীতে শুধু বাঘ নয়, কাঁদছে গোটা উত্তর জনপদ। মাঘ মাসের প্রথম সপ্তাহে সোমবার থেকে রংপুর অঞ্চলে নতুন করে শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় কাহিল হয়ে পড়েছে জনজীবন। বিশেষ করে শ্রমজীবীসহ নদীপারের মানুষ পড়েছেন চরম দুর্ভোগে। প্রচ- শীতের কারণে বাড়ি থেকে বের হতে না পারায় ক্ষেতমজুররা পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর দিন কাটাচ্ছে। কয়েক দফায় ঘন কুয়াশাসহ মাঝারি শৈত্যপ্রবাহে রংপুর অঞ্চলে শুরু হয় শীতের দাপট। রাতে বৃষ্টির মতো কুয়াশা ঝড়ে মাঠ-ঘাট-প্রান্তর ভিজিয়ে দেয়। সঙ্গে পশ্চিমা হাওয়ায় হাড় কাঁপানো শীতে কাবু হয়ে পড়েছে এ অঞ্চলের আট জেলার মানুষ। বিশেষ করে নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষজন শীতের কামড়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। নীলফামারী ॥ বইছে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ। আকাশ থেকে ঝড়ছে ঘন কুয়াশার শিশিরপাত। মঙ্গলবার দিনভর দেখা মেলেনি সূর্য। দিনের সকাল দুপুর বিকাল বলতে ঘড়ির কাঁটা ছাড়া বোঝাই ছিল ভাড়। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির পর ঠান্ডা বাতাসে আবারও কমে এসেছে দিনের তাপমাত্রাও। ফলে প্রাণীকুল কুঁকড়ে গেছে। নীলফামারীর ডোমার, জলঢাকা, কিশোরীগঞ্জ ও সদর উপজেলার মানুষও কনকনে ঠান্ডায় কাহিল হয়ে পড়েছেন। কুড়িগ্রাম ॥ শৈত্যপ্রবাহে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে এ অঞ্চলের জনজীবন। শীতে মানুষের পাশাপাশি গবাদি পশুরাও চরম দুর্ভোগে পড়েছে। রাত থেকে ঘন কুয়াশায় ঢাকা ছিল সমস্ত অঞ্চল। সেই সঙ্গে উত্তরের হিমেল হাওয়ায় কাবু হয়ে পড়েছে সমস্ত মানুষ। বিশেষ করে জেলার ১৬টি নদ-নদীর ৪০৫টি চর দ্বীপ চরের প্রায় ৬লাখ মানুষ চরম কষ্টে পড়েছে। কুড়িগ্রামের হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। এদের অধিকাংশই শিশু ও বৃদ্ধ।
×